দীর্ঘকালের জোটসঙ্গী বিজেপি-কে ছেড়ে শরদ পাওয়ারের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) ও কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে মহারাষ্ট্রে সরকার গড়তে পারে শিবসেনা। মনে করা হচ্ছে, কংগ্রেস বাইরে থেকে সমর্থন জানাতে পারে এই সরকারকে। এমনিতে সেনা-এনসিপি-কংগ্রেসের এই ত্রিবেণী সঙ্গম পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক আদর্শের সহাবস্থান বলে মনে হলেও শরদ পাওয়ারের প্রতি শিবসেনার এক বিশেষ 'দুর্বলতা' রয়েছে।
Advertisment
শিবসেনার হাত ধরে শেষ পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনে এগোবে কিনা, এ নিয়ে সোমবার পর্যালোচনা বৈঠকে বসে এনসিপির কোর কমিটি। এনসিপি-র এক শীর্ষ নেতার ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, রাজ্যে সাংবিধানিক সঙ্কট এড়াতে পরিত্রাতা হিসেবে শিবসেনার সঙ্গে হাত মেলাতে পারে এনসিপি।
তবে মহারাষ্ট্রে শিবসেনা-এনসিপির জোট বড় চমক নয়। এর আগেও এনসিপি-র সঙ্গে শিবসেনার বন্ধুত্বের নিদর্শন দেখেছে মারাঠি জনতা। তখন কংগ্রেসে ছিলেন পাওয়ার। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য আজকের এনসিপি প্রধানকেই সমর্থন করেছিলেন শিবসেনার প্রাণপুরুষ বাল ঠাকরে। এখানেই শেষ নয়, পরবর্তীকালে যখন পাওয়ার-কন্যা সুপ্রিয়া সুলে রাজ্যসভায় মনোনীত হলেন, তখনও পাওয়ারের সঙ্গে বন্ধুত্বকে সম্মান জানিয়ে, ঠাকরে সেনা-বিজেপি জোটের কোনও প্রার্থীকে দাঁড় করাননি সুপ্রিয়ার বিরুদ্ধে। এরপর আবার রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে যখন প্রণব মুখোপাধ্যায়কে মনোনীত করল কংগ্রেস, তখন শিবসেনার সমর্থন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন পাওয়ারই। এমনকী, পাওয়ারকে সঙ্গে নিয়েই মাতশ্রীতে পৌঁছেছিলেন কংগ্রেসের দীর্ঘকালীন ক্রাইসিস ম্যানেজার।
Advertisment
কতটা জরুরি এনসিপি-শিবসেনা জোট?
এবার নির্বাচনী প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন পাওয়ার। মহারাষ্ট্রে দলের পুনরুত্থানের ভিত মজবুত করার পক্ষে পাওয়ারের এই নির্বাচনী প্রচার বিশেষ কাজে এসেছে। ফলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ বলাবলি করছেন, মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় ফেরা তাঁদের দলের জন্য অত্যন্ত জরুরি। উল্লেখ্য, বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন পাওয়ারের ঘরের লোক অজিত, প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী ছাগন ভূজবল ও এনসিপি সাংসদ সুনীল টাটকারেরা। এদিকে, বিজেপির ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে তুলতে মরিয়া শিবসৈনিকরাও। দীর্ঘদিনের শরিক বিজেপির সঙ্গে শিবসেনার সম্পর্ক নয়া মোড় নেয় ২০১৪ সালের পর থেকেই। তখন থেকেই মহারাষ্ট্রে শিবসেনাকে ছাপিয়ে যায় বিজেপি। তবে এবার এখনও পর্যন্ত শিবসেনার বিজেপি-র প্রতি যে অনমনীয় মনোভাব তা একেবারেই নজিরবিহীন।
মতাদর্শগত পার্থক্যের জন্য শিবসেনা সরকারকে সমর্থনের ব্যাপারে প্রথম থেকেই অনীহা কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। কিন্তু বিজেপিকে রুখতে নবনির্বাচিত বিধায়করা চাইছেন শিবসেনার সঙ্গে জোট করে সরকার গড়া হোক। আর সেই জোট সরকারকে সমর্থন করুক কংগ্রেস। ফলে নবনির্বাচিত কংগ্রেস বিধায়কদের মধ্যে অসন্তোষ ঠেকাতে শিবসেনা-এনসিপি সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করতে পারে কংগ্রেস। কিন্তু দলের কয়েকজন বিধায়ক আবার বাইরে থেকে সমর্থন করেই ক্ষান্ত থাকতে চান না, বরং তাঁরা সরকারে যোগও দিতে চাইছেন। এমতাবস্থায় সেনা-এনসিপি জোটকে সমর্থন নিয়ে শেষ বেলায় আলোচনায় কংগ্রেসের হাইকম্যান্ড।
বিরল সমীকরণ
বরাবর কঠোর হিন্দুত্ববাদী দল বলেই পরিচিত শিবসেনা। আর সেই শিবসৈনিকদের সঙ্গেই কংগ্রেস ও এনসিপি-র মতো ধর্মনিরপেক্ষ দলের সহাবস্থানের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে শিবসেনা-এনসিপি জোট সরকার ও তাতে কংগ্রেসের সমর্থন নিঃসন্দেহে জাতীয় রাজনীতিতে নয়া অধ্যায় ও অভিনব সমীকরণের সূচনা করবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের সমীকরণ মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক চেহারা বদলে দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয়, বরাবরই মহারাষ্ট্রের গ্রামাঞ্চলে অধিক জনসমর্থন কংগ্রেস-এনসিপি-র। আর শিবসেনার দাপট শহর ও মফঃস্বল জুড়ে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এ জন্যই একসঙ্গে কাজ করতে নূন্যতম অভিন্ন কর্মসূচির পথে হাঁটতে পারে এনসিপি-শিবসনা-কংগ্রেস।