আমরা জানতাম পশুর শরীর থেকে লাফ কেটে মাঙ্কিপক্স এসেছে মানুষের শরীরে। যেমনটা এসেছে কোভিড বা এমন আরও কিছু ভাইরাস। কিন্তু এবার জানা যাচ্ছে উল্টো কাহিনি। আক্রান্ত মানুষের থেকে জন্তুর শরীরেও সংক্রমিত হচ্ছে মাঙ্কিপক্স। বিশ্বাস করুন, এটা সত্যি। এই রোগ মানুষের কাছ থেকে প্রথম যে চারপেয়ে-টি পেয়েছে, সেটি হল কুকুর। যেখানে সেখানে নয়, নামি মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেট-এ এই সংক্রান্ত একটি গবেষণা রিপোর্টে এমনই বলা হয়েছে। যাতে অনেকেই স্তম্ভিত হয়েছেন। এমনও কি হয় নাকি, ভাবতে হচ্ছে! এই খবর জানতে পেরে আমেরিকার স্বাস্থ্য সংস্থা সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসি মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে তাদের গাইডলাইন্সে কিছু বদল এনেছে। আক্রান্তের যদি পোষ্য থাকে, সে ক্ষেত্রে তারা সাবধান করে দিয়েছে।
এখন আক্রান্ত ওই কুকুরটি সম্পর্কে কী জানা গিয়েছে?
প্যারিস হসপিটালে ধরা পড়ে কুকুরটির মাঙ্কিপক্স হয়েছে। ত্বকে সংক্রমণের চেনা ছবি দেখা গিয়েছে। কুকুরটির পায়ুদ্বারেও সংক্রমণ জনিত ক্ষত দেখা গিয়েছে। তবে এটা স্পষ্ট নয় যে, ওই ককুরটির সৌজন্যে আরও কোনও কুকুর বা পশু মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়েছে কি না। এখানে বলে নিই, ভারতে মাঙ্কিপক্সে আট জন আক্রান্ত। সারা পৃথিবীতে মে মাস থেকে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজার। মে মাসে পুরনো চৌহদ্দি মধ্য এবং পশ্চিম আফ্রিকার বাইরে বেরিয়ে যায় মাঙ্কিপক্স। WHO বলছে মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত বেশির ভাগই এখন ইউরোপ বা আমেরিকার।
কী ভাবে মানুষের থেকে পশুটির মাঙ্কিপক্স হল?
দ্য ল্যানসেট অনুযায়ী, দুই যৌনসঙ্গী পুরুষের সঙ্গে কুকরটি এক বিছানায় শুয়েছিল। মে মাসের শেষ দিকে ওই দুই পুরুষের মাঙ্কিপক্স ধরা পড়ে। এর ১২ দিন পর, কুকুরটির শরীরেও উপসর্গ দেখা দেয়। এবং দ্রুত তার পরীক্ষা করা হয়। ওই দু’জন জানিয়েছেন, কুকুরটির যত্নআত্তির কোনও ত্রুটি রাখা হয়নি, যাতে অন্য কোনও পোষ্য কিংবা মানুষের সংস্পর্শে সেটি না আসে, সে দিকেও লক্ষ্য রাখা হয়।
আরও পড়ুন Explained: ফের অক্টোবরে বাড়তে পারে দুধের দাম, কিন্তু কেন দুধের দাম ঘনঘন বাড়ছে?
এখনও পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মাঙ্কিপক্স ছড়িয়েছে পুরুষের সঙ্গে পুরুষের যৌন সম্পর্কের জেরে। ফলে এ নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে বিভিন্ন সরকারের তরফে। যাতে আক্রান্তের জামাকাপড় কিংবা বিছানার চাদর ব্যবহার করা না হয়, সেই ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। আফ্রিকার যে সব দেশে মাঙ্কিপক্স হচ্ছে অনেক আগে থেকেই, সেখানে কয়েকটি বন্য প্রাণী, ইঁদুর কিংবা বানর জাতীয়, তাদেরকে এই রোগের বাহক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু সে সব দেশে পোষ্য যেমন কুকুর কিংবা বিড়ালের মাঙ্কিপক্স হয়েছে বলে এখনও শোনা যায়নি। ল্যানসেটের রিপোর্ট বলছে এমনই।
পোষ্যদের নিয়ে কী সতর্কবার্তা?
একটি মাত্র এমন ঘটনা ঘটেছে। মানে, মানুষ থেকে পশুতে ছড়ানোর ঘটনা ঘটেছে একটি। তাই এ ব্যাপারটিকে আরও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানাচ্ছে ল্যানসেট। পোষ্যের থেকে আর কারও এই রোগ ছড়াচ্ছে কি না, তা জানার প্রয়োজন রয়েছে। সিডিসি বলছে, যাঁদের মাঙ্কিপক্স হয়েছে, তাঁদের যদি পোষ্য থেকে থাকে, তা হলে সেটি থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। অন্য কোথাও পোষা প্রাণীটিকে পাঠিয়ে দিতে হবে। ২১ দিন তাকে ছাড়াই থাকতে হবে পোষ্যের আক্রান্ত প্রভুকে।