কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বাজেটে কতগুলি আইন সংশোধনী সংক্রান্ত পদক্ষেপ করেছেন। আয়কর আইনে রেট্রোস্পেকটিভ চেঞ্জ আনা হয়েছে কয়েকটি। রেট্রোস্পেকটিভ চেঞ্জ মানে কী? রেট্রোস্পেকটিভ মানে পূর্বাপর। সাধারণ ভাবে কোনও আইন বদল হলে সেই বদলের প্রভাব পড়ে আগামীতে। কিন্তু যদি সেই পরিবর্তন রেট্রোস্পেকটিভ হয়, তখন সেই পরিবর্তন অতীতের কোনও সময় থেকে কার্যকর হয়। এই পথে আয়কর আইন ২০০৫-০৬-তে সেস এবং সারচার্জ নিয়ে একটি বড় বদল আনা হয়েছে।
সংশোধনী অনুযায়ী, সেস এবং সারচার্জকে খরচ হিসেবে দেখাতে পারবে না কোনও সংস্থা। দেখাতে হবে কর হিসেবে। সেস এবং সাসচার্জ নিয়ে আইনি অস্বচ্ছতা ছিল এত দিন, ফলে অনেকেই তা কর হিসেবে দেখাত না, সেই অস্বচ্ছতার পর্দাটাই তুলে নিতে চাইলেন নির্মলা। আইনের সংশোধনীতে এ ছাড়াও বলা হয়েছে চিকিৎসা বাবদ এবং কোভিডে মৃত্যুতে প্রাপ্ত যে অর্থ, তা ছাড়ের আওতায় পড়বে। যা কার্যকর হবে ২০২০-র ১ এপ্রিল থেকে। ধার বাবদ কেউ যে অর্থ দিচ্ছেন, মানে ঋণদাতা যে অর্থ দিচ্ছেন, ঋণদাতা কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা যা-ই হোক না, কোথা থেকে সেই অর্থ এসেছে, সেইটি জানার পথে শক্তি বাড়াতেও সংশোধনী এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
সেস এবং সারচার্জে কী রেট্রোস্পেকটিভ পরিবর্তন হয়েছে?
আদালতের রায়কে সামনে রেখে সেস এবং সারচার্জকে খরচ হিসেবে দেখানো হত এত দিন। তাতে করদাতারা সুবিধে পেতেন। মানে করদাতাকে সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই আদালতের রায়। আসলে সেস হচ্ছে সেই জাতীয় কর, করদাতার উপর করের যে বোঝা তার ঊর্ধ্বে, মানে ঊর্ধ্বে ধরা হত এত দিন। এখন, সেস কী, সেই প্রশ্ন থাকতে পারে অনেকের? কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার যদি জনগণের থেকে অর্থ সংগ্রহ করে কোনও বিশেষ খাতে, তাকেই সেস বলে। প্রাথমিক শিক্ষা কিংবা উচ্চশিক্ষা খাতে বাড়তি খরচের উদ্দেশ্যে সেস বসে। কিংবা কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষতে মলম দিতেও সেস নেওয়া হতে পারে। যেমন ২০১৮ সালে কেরলে ভয়াবহ বন্যার পরে এক শতাংশ সেস বসিয়েছিল সে রাজ্যের সরকার। প্রয়োজন মিটে গেলে সেস প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, মানে সেটাই দস্তুর। ফলে এটি কোনও স্থায়ী বন্দোবস্ত মোটেই নয়।
আরও পড়ুন ডিজিটাল অ্যাসেট কী, ডিজিটাল কারেন্সির সঙ্গে এর পার্থক্যটাই বা কী?
এখানে বলতে হবে, ২০০৪ সালের অর্থ আইনে শিক্ষা সেস প্রথম আনা হয়েছিল ২০০৫-০৬ অর্থবর্ষে। তখনই প্রশ্ন ওঠে এটা কি কর না খরচ? আদালতের রায় শিক্ষা সেস এবং আয়করের মধ্যে ফারাক করে দিয়েছিল। শিক্ষা সেস যখন থাকছে না, অন্যান্য সেস সম্পর্কেও করদাতার সুবিধার দিকটি বিচার করেছিল আদালত। আইনের এই বদল আদালতের সেই রায়কেই নস্যাৎ করে দিয়েছে। নির্মলার সংশোধনীটি ২০০৫-এর ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
কোভিড চিকিৎসায় রেক্ট্রোস্পেকটিভ সংশোধনী কী?
বলা হয়েছে, যদি কোনও অর্থ কেউ পেয়ে থাকেন চিৎসায় খরচ বাবদ, তিনি নিজে পেতে পারেন, কিংবা পেতে পারেন তাঁর পরিবারের অন্য কেউ, কোভিডের চিকিৎসা বাবদ যদি সেই অর্থ প্রাপ্তি হয়ে থাকে, তা হলে সেটি আয়ের খাতে দেখাতে হবে না। মানে এ ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি ছাড় পাচ্ছেন। তা ছাড়া, কোভিড সংক্রান্ত কারণে যদি কারওর মৃত্যু হয়, তিনি যে সংস্থায় কাজ করতেন, সেখান থেকে তার পর যদি সেই কারণে অর্থ পান, তাও ছাড়ের আওতায় থাকবে। এই প্রাপ্তিতে কোনও ঊর্ধ্বসীমাও থাকবে না। যদি অন্য কেউ কোভিডে মৃত্যুতে অর্থ দেন, তবে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থপ্রাপ্তি ছাড়ের আওতায় থাকবে। এই সংশোধনীটি ২০২০-র ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।