Advertisment

মেয়াদ উত্তীর্ণ কোভ্যাক্সিন দেওয়া হচ্ছে কি? প্রশ্ন উড়িয়ে কী বলছে কেন্দ্র

অনেকেই বলেছেন, এক্সপায়ার্ড কোভ্যাক্সিন বা মেয়াদ উত্তীর্ণ কোভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে কম বয়সিদের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Students Vaccination

কলকাতার একটি স্কুলে কিশোরদের টিকাকরণ শিবির। এক্সপ্রেস ফটো- পার্থ পাল

১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে সোমবার। তাদের ৪০ লক্ষ জন ভ্যাকসিন পেয়েছে প্রথম দিন। মঙ্গলে কোউইন অ্যাপের হিসেব বলছে, এই সংখ্যাটা দেড় কোটির চেয়ে এক লক্ষ কম। শুধু মাত্র কোভ্যাক্সিনই দেওয়া হচ্ছে এই এজ গ্রুপকে। কিন্তু এই ভ্যাকসিন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে গুরুতর। অনেকেই বলেছেন, এক্সপায়ার্ড কোভ্যাক্সিন বা মেয়াদ উত্তীর্ণ কোভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে কম বয়সিদের। ফলে মাঠে নামতে হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে। তাদের বক্তব্য, 'এই বক্তব্য মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর।' মন্ত্রকের সাফ কথা, অসম্পূর্ণ তথ্যের উপর নির্ভর করে এমনটা বলা হচ্ছে।

Advertisment

কেন প্রশ্ন উঠল?

সোমবার ভ্যাকসিনের যে ব্যাচ দেওয়া হয়েছে কম বয়সিদের, তা তো নভেম্বরেই এক্সপায়ার্ড। বলছেন অনেকে। তা হলে কী করে সেই ব্যাচ কময়সিদের দেওয়া হল? প্রশ্ন উড়িয়ে সরকারের বক্তব্য, ৯ মাস থেকে বাড়িয়ে কোভ্যাক্সিনের মেয়াদ ১২ মাস করা হয়েছে। তাই কোনও ফাউল নেই। কেন্দ্র বলেছে, এই মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে যা-তা ভাবে নয়, সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অরগানাইজেশন বা সিডিএসসিও নিয়মানুগ ভাবে সব বিশ্লেষণের পর এটি হয়েছে। সিডিএসসিও আগেই কোভিশিল্ডের মেয়াদ বাড়ানোয় সিলমোহর দিয়েছিল, ফলে কোভ্যাক্সিনেও তা হয়েছে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

কোভ্যাক্সিনের মেয়াদ বাড়ানো যুক্তিযুক্ত কতটা?

কোভ্যাক্সিনের নির্মাতা ভারত বায়োটেকের আবেদনের ভিত্তিতে ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর সিডিএসসিও কোভ্যাক্সিনের মেয়াদ বাড়িয়ে ৯ থেকে ১২ মাস করে দিয়েছে। ভারত বায়োটেকের তরফে ভ্যাকসিনের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে বিস্তারিত তথ্য পেশ করা হয় সিডিএসসিও-র দরবারে। যাতে সন্তুষ্ট না হলে সবুজ সিগন্যাল দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিভিন্ন হাসপাতালের স্টকে এক্সপায়ারি ডেটের সীমায় থাকায় কোভ্যাক্সিন নতুন প্রাণ পেয়ে গিয়েছে অবশ্য। ভ্যাকসিন তো আরও অনেক লাগবে এখন। এই যে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে, এদের সংখ্যা মোটামুটি ১০ কোটি, ফলে পুরোপুরি ভ্যাকসিনেশনের জন্য ২০ কোটি ডোজের প্রয়োজন রয়েছে। ভ্যাকসিনের আয়ু-বৃদ্ধি পাওয়ায় এটা দ্রুতবেগে হবে। গত বছর কোভ্যাক্সিনের ডোজ সারা দেশে দেওয়া হয়েছিল ১৫ কোটি। ভারত বায়োটেকের বক্তব্য, সুরক্ষা এবং রোগ প্রতিরক্ষার প্রশ্নে সুতোমাত্র ঘাটতি নেই এই প্রতিষেধকে।

ভ্যাকসিনের মেয়াদ বলতে কী বোঝায়?

ভ্যাকসিন প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, লিপিড, মৃত (ইনঅ্যাকটিভ) ভাইরাস-- এই সবের জটিল এক সমীকরণে ভ্য়াকসিন গড়ে ওঠে। ভ্যাকসিনের এফিকেসি বা নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর সে, এগুলির উপরেই তা নির্ভর করে অনেকটা। অন্যান্য চিকিৎসা সংক্রান্ত পণ্য যেমন, তেমনই ভ্যাকসিনের মেয়াদ থাকে। মেয়াদের তারিখ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। যে তারিখটি নির্মাতারা স্থির করে থাকেন। সেই সময়ের পর, এফিকেসি বা কার্যকারিতা ওষুধবিসুধের মতো ভ্যাকসিনেরও কমে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কোনও ভ্যাকসিনের প্রতিরক্ষা পুরোপুরি সুসংহত থাকে তার মেয়াদের মধ্যে। তার পর নয়। নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ভ্যাকসিনের আয়ু নির্ধারণ করা হয়। কী ভাবে সেটি প্যাকেট করা হচ্ছে, কত তাপমাত্রায় রাখা হচ্ছে, অনেক কিছুই রয়েছে এর পিছনে। এই পথে এগোতে হয় হু-র গাইডলাইন অক্ষরে অক্ষরে মেনে।

কী করে মেয়াদ স্থির করা হয় ভ্যাকসিনের?

ভাইরোলজিস্ট শাহিদ জামিল বলছেন, বিভিন্ন সময়কালে নানা ধরনের তাপমাত্রায় ভ্যাকসিন রেখে এই পরীক্ষা করতে হয়। নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর প্রতিষেধকের কার্যকারিতা পরখ করে দেখতে হয়। তার পর মেয়াদ স্থির করতে হয়। যে সময়সীমার মধ্যে কোনও পণ্যের মান অপরিবর্তি থাকে, মানে তার সব গুণ বজায় থাকে, এতটুকুও হ্রাস পায় না কোনও গুণ, তাকেই বলা হয় সেই পণ্যের মেয়াদ। ভ্যাকসিনের ব্যাপারে আলাদা কিছু নেই।

কার্যকারিতার মাত্রা বুঝতে ইঁদুরের উপর ভ্যকসিন পরখ করে দেখা হয় বার বার। এর এফিকেসি রেট কতটা সময় ধরে অপরিবর্তিত থাকে, কোন সময়ের পর তা কমে, ইত্যাদি নিখুঁত ভাবে বিচার করা হয়। এক্সপায়ারি ডেটের পর, সেই ভ্যাকসিন শুরুতে যে রকম প্রতিরোধশক্তি গড়ে তুলত, বোঝাই যাচ্ছে তা তুলবে না। বলছে ডা. জামিল।

হু-র গাইডলাইন অনুযায়ী, মেয়াদ বৃদ্ধি যে সব ক্ষেত্রেই সম্ভব, যখন তাদের লেবেল দেওয়া হয়নি এবং অবশ্যই ডিস্ট্রিবিউট বা বিতরণ করা হয়নি। ফলে বিতরিত বা বাজারে পৌঁছে যাওয়া মেয়াদ উত্তীর্ণের মুখে থাকে কোনও কিছুর উপর মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় না।

কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে মেয়াদ বৃদ্ধি কি পক্ষপাতদুষ্ট?

না, সিডিএসসিও বলেই দিয়েছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোভিশিল্ডের মেয়াদ ৯ মাস থেকে বাড়িয়ে ১২ মাস করা হয়েছে। একই ভাবে কোভ্যাক্সিনেরও এক্সপায়ারি তারিখ বেড়েছে। পক্ষপাতের প্রশ্ন উঠবে কেন?

Covaxin health Ministry Vaccine Efficacy
Advertisment