/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/04/cats-47.jpg)
এসএসসি নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক
স্কুল সার্ভিস কমিশন দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখন স্বস্তিতে। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই দফতরে তাঁর হাজিরার মেয়াদ আরও চার সপ্তাহ বাড়িয়ে দিয়েছে বুধবার। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যকে সিবিআইয়ের সামনে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিচারপতি বলেন, পার্থকে হাজির হতে হবে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে। নজিরবিহীন ভাবে বিচারপতি বলেছিলেন, মন্ত্রী হাজিরা এড়াতে এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হতে পারবেন না। এমনকি প্রয়োজনে পার্থকে গ্রেফতারের ছাড়পত্রও দেওয়া হয়েছিল সিবিআইকে। এর বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যান আইনজীবীরা। ডিভিশন বেঞ্চ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সে দিনের হাজিরায় স্থগিতাদেশ দেয়, পর দিন সকাল সাড়ে ১০টায় শুনানিতে এই হাজিরা থেকে চার সপ্তাহের স্বস্তি দেয় তাঁকে। এই মামলাকে কেন্দ্র করে আদালতে আইনজীবীদের বৈঠকে তুমুল অশান্তিও হয়েছে, হয়েছে হাতাহাতি।
এসএসসি দুর্নীতি মামলা কী?
গত বছরের নভেম্বরে, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্য সরকার-পোষিত স্কুলগুলিতে গ্রুপ ডি পদে নিয়োগে বেনিয়মের মামলায় সিবিআইকে প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভার দেন। আবেদনকারীরা আদালতে ২৫ জনের একটি তালিকা দিয়েছিলেন, অভিযোগ, এঁদের বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। পরে তাঁরা দাবি করেন, বেআইনি নিয়োগ হয়েছে এমন আরও ৫০০ জনের। অভিযোগ, এ সংক্রান্ত প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও হয়েছে নিয়োগ।
রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আদালতে হলফনামা দিয়ে দাবি করে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের সুপারিশে। কিন্তু কমিশন আদালতে হলফনামা দিয়ে জানায় এমন কোনও নিয়োগের সুপারিশ তারা করেনি।
আদালত কী বলেছে?
ফেব্রুয়ারিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ বেআইনি নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। গ্রুপ ডি ও গ্রুপ সি দুই মামলাতেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়। দুটির ক্ষেত্রেই ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য এবং মেলে সিবিআই তদন্তে স্থগিতাদেশ। ৩১ মার্চ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআইকে বলেন মধ্যরাতের মধ্যেই তদন্ত শুরু করে দিতে। এর আগে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশে একটি চিঠি লিখে বলেন, তিনি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেও, ডিভিশন বেঞ্চ সেই নির্দেশ স্থগিত করে দিচ্ছে।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা এবং আরও চার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সিবিআইকে নির্দেশ দেন। সিবিআইয়ের জেরার মুখে পড়েছেন শান্তিপ্রসাদ। বাকিরা এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে যান। যদিও, বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা গেলে, হরিশ ট্যান্ডন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়ান। বিচারপতি টিএস শিবাগ্নানাম এবং বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চও এই মামলাটি শুনতে অস্বীকার করে। মামলাটি বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি এ কে মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছে তার পর, তাঁরাও এটি শুনতে রাজি হননি।
কোথায় দাঁড়িয়ে মামলা?
মঙ্গলবার বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি বিভাস পট্টনায়কের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা ওঠে। শুনানির সময় তাঁরা আবেদন শুনতে আস্বীকার করেন। শেষ পর্যন্ত পঞ্চম ডিভিশন বেঞ্চ, বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি কৃষ্ণা রাওয়ের ডিভিশন বেঞ্চ রাজি হয় মামলাটি শুনতে।
এ দিকে, এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা এসপি সিনহা-কে জিজ্ঞাসাবাদের যে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, সিবিআইয়ের আঞ্চলিক প্রধানকে এই জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বলা হয়েছিল, আর একটি আবেদনের ভিত্তিতে তা স্থগিত হয়ে যায় ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি সেন এবং বিচারপতি মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এই স্থগিতাদেশের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাঁরা কারণ দেখান যে, এই মামলাটির শুনানি 'রেগুলার' ডিভিশন বেঞ্চে হওয়া উচিত।
শেষ পর্যন্ত বিচারপতি তালুকদার এবং বিচারপতি রাও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশেই সিলমোহর দেন। তবে বলেন, এসপি সিনহা এবং প্রাক্তন রাজ্য শিক্ষাসচিব এ কে সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে সিবিআই, কিন্তু হেফাজতে নিতে পারবে না।
মঙ্গলবার বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি আনন্দকুমার মুখোপাধ্যায় পার্থ চট্টোপাধ্যাকে সিবিআইয়ের জেরা নিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেন। তার পর চার সপ্তাহ সেই স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয় পর দিন, বুধবার। আদালত নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি রঞ্জিত বাগের কমিটি গ্রুপ সি নিয়োগ মামলার তদন্ত করবে। আগে গ্রুপ ডি নিয়োগে বেনিয়ম নিয়ে তদন্ত করেছে এই কমিটিই।