ওমিক্রন আক্রান্ত এ দেশের ৩৩। আক্রান্তদের সকলেরই মৃদু উপসর্গ। উপসর্গের স্বস্তি বেশি না বাড়িয়ে মাস্ক পরুন, ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলেও, সাবধানতাই সার-কথা-- কেন্দ্রের বার্তা এটাই। সাংবাদিক বৈঠকে নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ডা. ভি কে পাল শুক্রবার বলেন, যে ভাবে মাস্ক পরা কমছে, তাতে চিন্তিত WHO সতর্ক করেছে। ওমিক্রনের আন্তর্জাতিক ছবিটাই যে উদ্বেগের!
এখানে বলে নিতে হবে, করোনা শুরুর বেলায় সতর্কতায় শিথিলতা দেখিয়েছিল হু, অনেকেই মনে করেন, সেই শিথিলতার পরিণাম মর্মান্তিক হয়েছে! তারা ঠেকে শিখেছে। তৃতীয় তরঙ্গ যাতে সুনামি না তৈরি করে, সে ব্যাপারে সতর্কতায় কোনও কার্পণ্য করতে চায় না শীর্ষ স্বাস্থ্য সংস্থাটি। তাদের শত মুখে সতর্ক করে যেতেই হবে তাই, এ ছাড়া উপায় নেই। ওমিক্রন এখনও পুরোপুরি আলোকিত নয়। তাকে ধীরে ধীরে জানা-বোঝা যাচ্ছে। মৃদু উপসর্গ এবং দুরন্ত এক্সপ্রেসের গতিতে ছড়িয়ে পড়া, এ দুটি চরিত্র মোটামুটি সামনে এসেছে। পর্দার পিছনে তো আরও কিছু থাকতে পারে! WHO এটির চরিত্র সম্পর্কে কী বলছে, এই সুযোগে একটু জেনে নেওয়া যেতে পারে।
মহামারিবিদ্যা এবং ওমিক্রন, কী বলছে WHO?
দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টের খবর নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্নের তালিকা ভুক্ত করা এটিকে তার পর। নভেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে ডিসেম্বরের ৫ তারিখ পর্যন্ত ৬২ হাজার ২১ জনের ওমিক্রন সংক্রমণ হয়েছে সে দেশে। এই সময়কালের ঠিক আগের সপ্তাহের তুলনায় ১১১ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছিল সংক্রমণে, বলছে হু। তারা জানাচ্ছে, টেস্ট পজিটিভিটি রেট নভেম্বরের ৭ তারিখ ছিল ১.২ শতাংশ, ডিসেম্বরের ২ তারিখ তা পৌঁছয় ২২.৪-এ।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিবেশী দেশগুলিতেও, যেমন এসওয়াতিনি (১,৯৯০%), জিম্বাবোয়ে (১,৩৬১%), মোজাম্বিক (১,২০৭ %), নামিবিয়া (৬৮১%), লেসোথো (২১৯%) বেড়েছে সাঁইসাঁই করে। WHO বলছে, এই সব দেশে প্রতিষেধক এখনও কম সংখ্যক মানুষই নিয়েছেন। মোট জনসংখ্য়ার ১২.১ শতাংশ ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ পেয়েছেন নামিবিয়ায়, লেসোথোর সম্পূর্ণ ভ্যাকসিনপ্রাপ্তের সংখ্য়া ২৬.৭ শতাংশ। দক্ষিণ আফ্রিকায় পুরো ভ্যাকসিনে ২৫.২ শতাংশ। হু-র বক্তব্য, একে তো ভ্যাকসিনেশনের হার খুবই কম, তার উপর স্বাস্থ্যক্ষেত্রে শিথিলতা এবং করোনা পরীক্ষার হার বৃদ্ধি, এই কারণগুলি এক সঙ্গে দায়ী সংখ্যাবৃদ্ধির জন্য।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ওমিক্রন সংক্রমণের যে তথ্য সামনে আসছে, তা বিচার করে হু জানিয়েছে, ডিসেম্বরের ৭ তারিখ পর্যন্ত ৫৭টি দেশ থেকে ওমিক্রন আক্রান্তের খবর মিলেছে। এখনও পর্যন্ত অবশ্য প্রভাবে ডেল্টাই এনেক এগিয়ে, ওমিক্রন কী করবে, আন্তর্জাতিক মহামারিতে এর কামড় কেমন হবে, এখনই তা নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সময় আসেনি। মানে, দিল্লি আপাতত দূর হ্যায়।
সংক্রমণে ভ্যারিয়েন্টের কতটা দড়?
WHO বলছে, অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ওমিক্রনে সংক্রমণ বেড়েছে। ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী বছরের পয়লা জানুয়ারির মধ্যে এই ভাইরাসে সংক্রমণ বৃদ্ধি ৫০ শতাংশের কাছে পৌঁছবে, পয়লা মার্চের মধ্যে বৃদ্ধি ১২০ শতাংশ ছোঁবে।
আরও পড়ুন হু-হু হাওয়ার মতো ছড়াচ্ছে ওমিক্রন, প্রকোপের হাতে-গরম তথ্যটা কী?
ভাইরাস ওমিক্রনের দাঁতের ধার কেমন?
WHO জানাচ্ছে, ডিসেম্বরের ৬ তারিখ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৮টি দেশ থেকে ২১২ জন ওমিক্রন আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছে। এদের মধ্যে কারুরই সিভিয়ার অসুখ করেনি। মৃদু কিংবা উপসর্গহীন এই সব আক্রান্তরা। তবে স্বাস্থ্য সংস্থা এও বলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাটা হঠাৎই বেড়ে গিয়েছে। নভেম্বরের ২৮ থেকে চৌঠা ডিসেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি ৮২ শতাংশ বেড়েছিল সেখানে। ৫০২ থেকে পৌঁছে যায় ৯১২-তে। কিন্তু এর মধ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছিলেন কত জন, সেই তথ্য এখনও হাতে আসতে বাকি। ওমিক্রনের খেলা এখনও বাকি রয়েছে। নজর রেখে যেতে এই ভাইরাসে। তবে মাস্ক পরে। সামাজিক দূরত্ব রেখে। এ ব্যাপারে কোনও ছেলেখেলা করা যাবে না।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন