Advertisment

Explained: পাক আদালতে হাফিজের ৩৩ বছরের জেলের সাজা, আদৌ কি সন্ত্রাস কমবে?

হাফিজের শাস্তির গুরুত্ব কী?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Hafiz Saeed explained

লস্কর-ই-তৈবা-র প্রতিষ্ঠাতা এবং জামাত-উদ-দাওয়া-র প্রধান হাফিজ সইদের ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ আদালত।

লস্কর-ই-তৈবা-র প্রতিষ্ঠাতা এবং জামাত-উদ-দাওয়া-র প্রধান হাফিজ সইদের ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ আদালত। নতুন করে দুটি জঙ্গি সংগঠনকে অর্থ জোগানোর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। যা দায়ের করে পাকিস্তানের কাউন্টার টেররিজম ডিপার্টমেন্ট বা সিটিডি। সিটিডি ২০১৯ সালে বেশ কয়েকটি এফআইআর করেছিল হাফিজের বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনের নানা ধারাতেই মামলা হয়েছে এই জঙ্গির বিরুদ্ধে। আদালত শুধু দীর্ঘ কারাদণ্ডই দেয়নি সইদকে, ৩ লক্ষ ৪০ হাজার পাক রুপি জরিমানার নির্দেশও গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে। হাফিজ মুম্বই হামলায় মাস্টারমাইন্ড। পাঁচটি জঙ্গি সংগঠনকে অর্থ জোগানোর মামলায় হাফিজের ৩২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে আগেই। নতুন সাজা এবং পুরনো সাজায় জেল খাটা চলবে এর ফলে একই সঙ্গে।

Advertisment

প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে লস্কর-ই-তৈবা এবং তাদের ছদ্ম ও দাতব্য সংগঠন হিসেবে কাজ চালানো জামাত-উদ-দাওয়া বা জেইউডি-র বিরুদ্ধে সক্রিয় হয় পাক সরকার। বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন বেঁচে রয়েছে দেখা যায় জামাতের অর্থেই। যার সর্বেসর্বা হাফিজ সইদের বিরুদ্ধেও কার্যত চাপের ফল হিসেবে নামতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। বিশেষ করে প্যারিসে সদর দফতর থাকা ফাইনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স বা এফএটিএফের চাপ ছিল বোধ হয় সবচেয়ে বেশি। এ নিয়ে সে সময় কম খবরও হয়নি। বার বার অবশ্য অভিযোগ ওঠে যে, পাকিস্তানের সরকারি আশ্রয়ে বহালতবিয়তেই থাকছেন হাফিজ।

হাফিজ সইদ কে?

সুন্নিদের দল লস্কর-ই-তৈবা। 'আহলে-হাদিথ'-এর ইসলামীয় ব্যাখ্যা মেনে চলে এই দলটি। স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন বা সিআইএসসি জানাচ্ছে, এলইটি-র গঠন হয় ১৯৯০ সালে এবং লক্ষ্য আল্লাহের পথে জিহাজ বা জেহাদ করা। তাদের বিচারে যা প্রকৃত ইসলামের পথ, তা-ই মানুষকে বোঝানো এবং সেই মতে নতুন প্রজন্মকে প্রশিক্ষিত করে তোলা। মুম্বই হামলার মূলচক্রী এই হাফিজ সইদ। যদিও ২০১৪ সালে বিবিসিকে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, তাতে এই অভিযোগ নস্যাৎ করে দেন। দাবি করেন, ভারত নাকি তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। হাফিজের কথায়, 'পাকিস্তানের মানুষ আমাকে চেনে, আমায় তারা ভালবাসে।… আমার ভূমিকা স্পষ্ট, আল্লাহ আমাকে রক্ষা করছেন।'

২০১২ সালে, এ দেশে হাফিজকে নিয়ে আসার যে চেষ্টা চালাচ্ছিল ভারত, তা সমর্থন করেছিল আমেরিকা। মার্কিন সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়, যদি হাফিজ সম্পর্কে কেউ এমন কোনও তথ্য দিতে পারেন, যার সাহায্যে এই জঙ্গি নেতাকে গ্রেফতার কিংবা সাজা দেওয়া সম্ভব হবে, তা হলে সেই ব্যক্তি ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার পাবেন। বিবিসি-কে দেওয়া হাফিজের সাক্ষাৎকারে, এই ব্যাপারটি উঠেছিল। তাই কুখ্যাত এই জঙ্গি দাবি করেন যে, পাকিস্তানিরা ভালবাসে, তাই তাঁর সম্পর্কে কোনও তথ্য তারা আমেরিকাকে দেয়নি। মার্কিন মুলুক হাফিজকে ২০১২ সালেই আন্তর্জাতিক জঙ্গির তকমা দেয়।

আরও পড়ুন Explained: ইমরানের অপসারণ যে চোখে দেখছে ভারত

গত কয়েক বছরে, সইদকে কয়েক বার গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে জেইউডি-র জন্য অর্থ সংগ্রহ সংক্রান্ত মামলায় পাকিস্তান সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে। এর পর ২০১৭ সালে তিনি মুক্তি পান। হাফিজ তখন গৃহবন্দি অবস্থায় ছিলেন, আদালত সেই বন্দিদশা বাড়াতে চায়নি। ২০১৯ সালে পাকিস্তান সরকার আবার হাফিজকে গ্রেফতার করে। সেই একই অভিযোগ, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে অর্থ জোগানো। সেই থেকেই লস্কর প্রধান রয়েছেন লাহোরের জেলে।

হাফিজের বিরুদ্ধে কী মামলা?

১৯৯৭ সালে তৈরি পাক অ্যান্টিটেররিজম অ্যাক্ট বা জঙ্গি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে হাফিজ সইদ দোষী সাব্যস্ত হন। একই ভাবে দোষী সাব্যস্ত হন এই নেতার বেশ কয়েক জন সঙ্গীও। যাঁদের ২০১৯-এ যখন গ্রেফতার করা হল এর পর, তখনও দু'ডজনের বেশি অভিযোগ। সন্ত্রাসবাদী নানা সংগঠনকে অর্থ জোগানোর এবং অর্থতছরুপের মামলা সে সব। যে সব সংগঠনকে অর্থ দিত জামাত-উদ-দাওয়া, তার মধ্যে রয়েছে-- আল আনফাল ট্রাস্ট, দাওয়াতুল ইরশাদ ট্রাস্ট এবং মৌজ বিন জাবাল ট্রাস্ট। এই সব সংগঠনের কাজকারবার সারা পৃথিবীতে বিছানো। অর্থ সংগ্রহের তরিকাটা খুবই অদ্ভুত হাফিজদের। ধর্মীয় কারণে বলি দেওয়া পশুর ছাল সংগ্রহ করে বিভিন্ন চামড়ার কারখানায় বিক্রি করে থাকে জামাত-উদ-দাওয়া। ডন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট মোতাবেক, ২০০৯ সালে এই বিক্রি থেকে ১.২ মিলিয়ন ডলার অর্থ তারা জোগাড় করে। অর্থ সংগ্রহের তাদের অফিস রয়েছে বাংলাদেশ, নেপাল, মলদ্বীপ, উপসাগরীয় অঞ্চলে।

হাফিজের শাস্তির গুরুত্ব কী?

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বার বার অভিযোগ উঠেছে যে, হাফিজকে সরকারি ভাবে তারা বাঁচিয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আমেরিকা যান। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখাও করেন। ঠিক তার আগে হাফিজকে গ্রেফতার করে সিটিসি। লাহোর থেকে গুজরানওয়ালা যাওয়ার পথে সইদকে গ্রেফতার করা হয়। এই ভাবে নিজের জঙ্গি বিরোধী ভাবমূর্তি আমেরিকার তখনকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন ইমরান। কারণ ট্রাম্পও মনে করতেন পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

Hafiz Saeed pakistan Terror Funding
Advertisment