Advertisment

আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মিশন কী?

কী গ্রাম, কী শহর-- জনস্বাস্থ্যে হাল এই মিশনে অনেক বদলে যাবে বলে দাবি করা হচ্ছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Ayushman Bharat Health Infrastructure Mission

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের লোকসভা কেন্দ্র বারাণসী থেকে আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মিশনের সূচনা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের লোকসভা কেন্দ্র বারাণসী থেকে আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মিশনের সূচনা করেছেন। যাকে বলা হচ্ছে, ভারতীয় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো সম্প্রসারণে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। কী গ্রাম, কী শহর-- জনস্বাস্থ্যে হাল এই মিশনে অনেক বদলে যাবে বলে দাবি করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থার মোকাবিলায় এর ফলে নাকি আর বেগ পেতে হবে না। এই মিশনের সূত্রপাতের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ন'টি মেডিক্যাল কলেজের উদ্বোধন করেন। সিদ্ধার্থনগরের এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, রাজ্যপাল আনন্দিবেন প্যাটেল এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য। ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে গিয়ে মোদী এ ছাড়াও বারাণসীর জন্য ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের ঢাকে কাঠিও দিয়েছেন। আমাদের অবশ্য এই লেখার লক্ষ্যে আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মিশন। এর অলিগলিতে ঘুরে দেখতে চেয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

Advertisment

মিশনের মোদ্দা কথা

এই পরিকাঠামো মহা-উন্নয়ন প্রকল্পটি ন্যাশনাল হেলথ মিশন, বা জাতীয় স্বাস্থ্য প্রকল্পকে মানুষের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছে দেবে। এটাই এর গোড়ার কথা। ১৭ হাজার ৭৮৮টি গ্রামীণ স্বস্থ্যকেন্দ্র এবং ওয়েলনেস সেন্টার বা নিরাময় কেন্দ্রে সহযোগিতার পোক্ত হাত বাড়িয়ে দেবে। ১০টি রাজ্যকে হাই-ফোকাসে রাখা হয়েছে এ ক্ষেত্রে। পাশাপাশি, মিশনে ১১ হাজার ২৪টি স্বাস্থ্য ও নিরাময় কেন্দ্র তৈরি করা হবে সারা দেশে।

প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শহর ও গ্রামে গণস্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় বিশেষ করে ক্রিটিকাল কেয়ার এবং প্রাথমিক চিকিৎসার মধ্যে যে ফাঁক রয়েছে, তা ভরাট করাই মিশনের লক্ষ্য। ক্রিটিকাল কেরার পরিষেবার সুবিধা যাতে সমস্ত জেলাগুলির মানুষ পায়, তা সুনিশ্চিত করা হবে এই মিশনে। যে সব জেলায় ৫ লক্ষের বেশি জনসংখ্যা, সেখানে গড়ে তোলা হবে এক্সক্লুসিভ ক্রিটিকাল কেয়ার হসপিটাল ব্লক। ৫ লক্ষের চেয়ে কম জনসংখ্যা যে সব জেলায়, সেখানে রেফারাল সার্ভিস ব্যবস্থা, মানে নিকটবর্তী ক্রিটিকাল কেয়ার হাসপাতালে পাঠানোর সুব্যবস্থা করা হবে। জনস্বাস্থ্য ল্যাবরেটরি তৈরি করা হবে দেশের সমস্ত জেলায়। যাতে সাধারণ মানুষ রক্ত-মল-মূত্র ইত্যাদি নানা পরীক্ষানিরীক্ষা সহজেই করাতে পারেন।

রোগের উপর নজরদারি

আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মিশনের অন্যতম একটি লক্ষ্য অসুখ-বিসুখে কড়া নজরদারি। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে এই কাজটি করা হবে। নজরদারিতে একটি সুচারু নেটওয়ার্ক তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন ব্লক, জেলা, স্থানীয় স্তরে গড়ে উঠবে এই ব্যবস্থা। সমস্ত পাবলিক হেলথ ল্যাব একে-অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে হেলথ ইনফরমেশন পোর্টালের মাধ্যমে। সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ছড়ানো থাকবে ডালপালা, এমনই বলছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর।

করোনাভাইরাসের আবহে গোটা বিষয়টিকে দেখা হয়েছে। বলা হচ্ছে, জনস্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে, সেই বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। এর জন্য তৈরি করা হবে ১৭টি নতুন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এখন যে ৩৩টি পাবলিক হেলথ ইউনিট রয়েছে, তার পরিকাঠামো আরও বলিষ্ঠ করা হবে। এই সব ইউনিট থেকে কী করে স্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থার মোকাবিলা করা যায়, স্বাস্থ্যকর্মীদের তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

এ ছাড়াও আরও নানা কিছু তৈরি হবে স্বাস্থ্য-পরিকাঠামো উন্নয়নের এই মহাযজ্ঞে। তৈরি হবে যৌথ স্বাস্থ্যে ন্যশনাল ইনস্টিটিউট, ভাইরোলজিতে চারটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জন্য একটি গবেষণা প্ল্যাটফর্ম। ন'টি বায়োসেফটি লেভেল-থ্রি পরীক্ষাগার, এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ বা ডিজিড কন্ট্রোল সংক্রান্ত আঞ্চলিক কেন্দ্র হবে পাঁচটি।

এই মিশন এতটা গুরুত্বপূর্ণ?

মহামারিই দেখিয়ে দিয়েছে ভারতের গণস্বাস্থ্যে ফাঁক রয়েছে। তা ছাড়া, লোকনীতি সিএসডিএস ২০১৯-এর একটি সমীক্ষায় সামনে এসেছে কী ভাবে প্রান্তিক মানুষের একটা বড় অংশ স্বাস্থ্যপরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সমীক্ষা বলছে, গ্রাম-শহর মিলিয়ে ৭০ শতাংশ এলাকায় স্বাস্থ্যপরিষেবা পৌঁছচ্ছে। গ্রামীণ ক্ষেত্রে যা ৬৫ শতাংশ, শহরে অবশ্য বেশি, ৮৭ শতাংশ।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সব মিলিয়ে ৪৫ শতাংশ এলাকায় মানুষ হেঁটে গিয়ে পৌঁছতে পারেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, আর ৪৩ শতাংশে প্রয়োজন হয় যানবাহনের। শহরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছানো স্বাভাবিক ভাবেই সহজ, সমীক্ষাও তা-ই জানাচ্ছে, ৬৪ শতাংশ শহুরে অঞ্চলের মানুষ পায়ে হেঁটে স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেন। গ্রামীণ এলাকায় এই হারটা অনেক কম, মাত্র ৩৭ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি আরেকটি স্বাস্থ্য প্রকল্পের সূচনা করেছেন। তার নাম, আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল মিশন বা এবিডিএম। এর মাধ্যমে প্রত্যেকের হেলথ আইডি তৈরি হবে, আপনার স্বাস্থ্যের সব তথ্য যেমন মিলবে, তেমনই পরিষেবার হাতে-গরম ইনফর্মেশনের ব্যবস্থা থাকবে। মানে নেট-মাধ্যমেই স্বাস্থ্য-বন্ধু পেয়ে যাবেন। নিমেষে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Ayushman Bharat Ayushman Bharat Health Infrastructure
Advertisment