মাথা নুইয়েছে কোভিড। ভয় না কাটলেও, সেই ভয়ানক ভীতিটা আর নেই। ফলে কোভিডে যে মরিয়া ভাব ছিল, অনেক দেশই তা শিথিল করেছে। যেমন ব্রিটেনে কোভিড আক্রান্তরা আর গৃহবন্দি থাকতে বাধ্য নন। পরীক্ষার ক্ষেত্রেও রশি আলগা করার কথা ভাবা হচ্ছে সেখানে। ক্যালিফোর্নিয়াও তাদের কড়া অবস্থান থেকে সরে এসেছে অনেকটা। নতুন কোনও ভ্যারিয়েন্ট এসে হাজির হয়েছে কিনা, সেই দিকে প্রখর নজর রাখছে তারা। তারা এনডেমিকের প্রক্ষিতে ভাবতে শুরু করেছে কোভিডকে। এনডেমিক, অর্থাৎ অসুখ মোটামুটি যখন একটি নির্দিষ্ট এলাকাতে সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে।
এনডেমিক স্টেজটা কী?
এনডেমিক বলতে বোঝায় কোনও রোগব্যাধি যখন একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক এলাকায় থাকছে। আরও স্পষ্ট করে বললে, কোনও অসুখ, এ ক্ষেত্রে যেমন সার্স কোভ-টু,সে আর বড় কোনও কাণ্ড সে আর ঘটাচ্ছে না, যেরকম এই দু'বছর ধরে সে করে গিয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট এলাকায় ঘুরছে। ভারতের বিচারে বলতে হবে যে, এখানে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, কিন্তু এনডেমিকের তকমা সে কবে পাবে, তা নির্দিষ্ট করতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। ট্রান্সলেশনাল হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট ফরিদাবাদের অধিকর্তা ড. প্রমোদ গর্গ বলছেন, 'এনডেমিক মানে হচ্ছে, জনগোষ্ঠীতে ভাইরাস ঘুরতে থাকবে, মাঝে মাঝে প্রকোপ বাড়বে, মাঝে মাঝে কমবে। কারণ কখনও সেই অসুখের প্রকোপে প্রকৃতি সহায় হয়, কখনও আবার তা হয় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ফ্লু শীতকালে বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ঋতুপরিবর্তনের সময়ে।… কোভিডও সেই রকম হয়ে উঠবে এবং দুর্বলের উপর কামড় বসাবে।'
তার মানে কি আমরা সুরক্ষিত এখন?
না, সুরক্ষিত মনে করে হাত-পা তুলে নাচার মতো কিছু ঘটেনি। এনডেমিক মানেটা এমন নয় যে, এটিতে কোনও ক্ষতি হবে না। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রোফেসর এবং ভাইরাসবিদ ডা. আরিস কাটজোরাকিস বলছেন, এনডেমিক বা একটি ভৌগলিক চৌহদ্দিতে কোনও অসুখ প্রবল ভাবে ছড়াতে পারে, এবং মৃত্যুর কারণও হতে পারে। ম্যালেরিয়ার হাতে যেমন মারা পড়েছে, ২০২০ সালে, অন্তত ৬ লক্ষ। ওই বছরই যক্ষ্মায় অসুস্থ হয়েছেন ১ কোটি। ১০ লক্ষ ৫০ হাজারের মৃত্যু হয়েছে। ফলে এনডেমিক মানে এটা নয় যে, জীবাণুর শক্তি তলানিতে তাই এখনই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেলে কিচ্ছুটি হবে না।
এখন মাস্ক পরে থাকার দরকার আছে?
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, রোগকে এনডেমিক হিসেবে ঘোষণা করার কোনও প্রত্যক্ষ সুফল নেই। ফলে এখন সব নিয়মকানুন জলাঞ্জলি দেওয়ার কোনও দরকার নেই। মনে করে নিতে হবে, আমরা নিউ নর্মালে রয়েছি। এক দিকে অসুখের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে হবে, অন্য দিকে অর্থনীতিকে বাঁচাতে হবে খেয়েপরে বাঁচার জন্য। তাই নিউ নর্মালে মাস্ক পরাটাই স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নিতে হবে।
Read story in English