স্কুল নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে এ রাজ্য সরগরম। মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে চাকরির প্রতিশ্রুতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই মামলায় গ্রেফতারও হয়েছেন। আঙুল উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দিকে। মহারাষ্ট্রেও নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ সরকার। টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট বা টেট নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নাম উঠে এসেছে শিবসেনার বিদ্রোহী বিধায়ক আব্দুল সাত্তারের। অওরঙ্গাবাদ থেকে নির্বাচিত এই ব্যক্তিকে এ সপ্তাহে মহারাষ্ট্র মন্ত্রিসভাতেও স্থান দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতিতে নাম জড়ানোর ঠিক একদিন পর মঙ্গলবার তিনি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, উদ্ধব ঠাকরের মন্ত্রিসভাতেও কিছু সময়ের জন্য তিনি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। অভিযোগটা কী, মহারাষ্ট্র স্টেট কাউন্সিল অফ এডুকেশন এ মাসের তিন তারিখ টেট পরীক্ষার ৭,৮৮৮ জন টেট প্রার্থীকে ডিসকোয়ালিফাই করে দেয়। এরা পাসের সার্টিফিকেটে নম্বর বাড়িয়েছেন কিংবা ভুয়ো সার্টিফিটেক জোগাড় করেছেন, টাকা দিয়ে বা অন্য কোনও উপায়ে—অভিযোগ এমনই। এখন এই তালিকায় দেখা গিয়েছে, মন্ত্রী আব্দুল সাত্তারের দুই মেয়ে রয়েছেন। যদিও মন্ত্রী এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, তাঁর মেয়েদের টেট পাসে কোনও বেনিয়ম নেই।
মহারাষ্ট্রের টেট
শিক্ষার অধিকার আইনে শিক্ষক নিয়োগে টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট দিতে হয়। ২০১৩ সাল থেকে মহারাষ্ট্রে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষক নিয়োগে এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। যাঁরা প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষকের চাকরি করতে চান, তাঁদের টেট-এর একটি পেপারে পাশ করলেই হয়ে যায়। কিন্তু ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষকের চাকরি পেতে গেলে দ্বিতীয় পেপারটিতেও পাশ করতে হবে। পাশের জন্য ৬০ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। এটা খুবই শক্ত ব্যাপার, ফলে পাশের হার ১০ শতাংশের নীচে থাকে।
মহারাষ্ট্রে টেট দুর্নীতিটা কী?
নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে তদন্তে টেটের এই দুর্নীতি সামনে এসেছে ২০২১ সালে। গ্রুপ ডি পদে নিয়োগের পরীক্ষায় বেনিয়োমের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছিল। পুণের সাইবার সেল পুলিশে গত বছরের নভেম্বর মাসে এই সংক্রান্ত এফআইআর-টি হয়েছিল। গ্রুপ ডি পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। যদিও টেট দুর্নীতিতে তেমন কোনও অভিযোগ নেই। এখানে অভিযোগটি হল, নম্বর বাড়িয়ে সার্টিফিটেক কিংবা ভুগো সার্টিফিকেট বার করা হয়েছে।
মহারাষ্ট্রে টেট দুর্নীতি কী সামনে আনল?
এই তদন্তে মহারাষ্ট্র পুলিশ ৭,৮৮০ জন প্রার্থীর একটি তালিকা তৈরি করে, যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে নম্বর বদল করে সার্টিফিকেট কিংবা ভুয়ো সার্টিফিটেক বার করার অভিযোগ। সেই তালিকা মহারাষ্ট্র স্টেট কাউন্সিল অফ এডুকেশনকে দেওয়া হয়। সমস্ত ভেরিফিকেশনের পর, দেখা যায় ৭,৮৮০ জন প্রার্থীর মধ্যে ৭,৫০০ জন পাশ করেছেন টেটে নম্বর বাড়িয়ে নিয়ে। ২৯৩ জন প্রার্থী পাশের সার্টিফিকেট জোগাড় করেছেন। ৮১ জনের সার্টিফিটেকও কোনও বেনিয়মের ফল। মন্ত্রী আব্দুল সাত্তারের মেয়েরা ২৯৩ জনের তালিকায় রয়েছেন। মানে নম্বর বদল করেননি, অভিযোগ পুরো সার্টিফিকেটই তাদের ভুয়ো।