ভারতের পতাকা বিধি। ফ্ল্যাগ কোড অফ ইন্ডিয়া। ২০০২-এর এই নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা, ওড়ানো কিংবা প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। সমস্ত আইন, রীতি, নির্দেশ ইত্যাদি এক করে এই বিধি তৈরি করা হয়েছে। সরকার হোক কিংবা ব্যক্তিগত-- এই বিধি-র বাইরে গিয়ে পতাকা নিয়ে কিছু করা যায় না। ২০০২ সালের ২৬ জানুয়ারি এই পতাকা বিধি কার্যকর করা হয়। সাধারণ জন, বেসরকারি সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সকলেই পতাকা ওড়াতে পারে এই আইনে, কারওর কোনও বাধা নেই।
এবার আসা যাক সংশোধনীতে
পতাকা বিধি ২০০২-তে সংশোধন করেছে মোদী সরকার। ২০২১-এর ৩০ ডিসেম্বরের সেই সংশোধনী অনুযায়ী পলিয়েস্টারে তৈরি করা যাবে জাতীয় পতাকা। এর ফলে জাতীয় পতাকা তৈরি করা যাচ্ছে-- সুতি/ পলিয়েস্টার/ উল/ সিল্ক/ খাদিতে-- নয়া বিধি পতাকা তৈরি উপাদানের পরিধি বাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার 'হর ঘর তিরঙ্গা' প্রচার শুরু করবে শিগগিরই। এই প্রচারের লক্ষ্য হল, সাধারণ মানুষকে জাতীয় পতাকা ওড়ানোর ব্যাপারে আরও উৎসাহিত করা। ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের দিকে তাকিয়েই এই কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৫ অগস্টের মধ্যে ২০ কোটি বাড়িতে সরকার তারা এই পতাকাপ্রচার পৌঁছে দিতে চাইছে।
যেহেতু পলিয়েস্টারে পতাকা বানানোর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, ফলে অনেক বেশি পতাকা তৈরি করা যাবে, এবং অনেক মানুষের কাছেও তা পৌঁছে যেতে পারবে। এই অভিযানের সাফল্যে যা প্রাণস্পন্দন। ইন্টারনেটের মাধ্যমেও জাতীয় পতাকা কিনে নিতে পারেন কেউ। কয়েকটা ক্লিকেই কার্য সমাধা হবে। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অফিসারদের বক্তব্য, অন্তত ৩০টি অন-লাইন পোর্টালে পাওয়া যাচ্ছে ভারতের পতাকা। পতাকা বিধি বদল হওয়ার পরেই সরকার পতাকা নির্মাণকারী এবং ই-কমার্স সাইটগুলিতে কড়া নেড়েছে, যাতে তারা শুভ কাজে দেরি না করে। এই পথে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজন এবং ফ্লিপকার্টের সঙ্গেও বৈঠক করেছে সরকার।
আরও পড়ুন Explained: অসংসদীয় শব্দে ঝড় উঠেছে, সংসদে কণ্ঠরোধের অভিযোগ, কোন শব্দে আপত্তি?
এবার সমালোচনা
বিধি সংশোধনকে বহু জনই স্বাগত জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন শিল্পপতি এবং প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ নবীন জিন্দল, যাঁর আবেদনের ভিত্তিতে ১৯৯৫ সালে দিল্লি হাইকোর্ট ব্যক্তিগত পরিসরে জাতীয় পতাকা ওড়ানোয় ছাড়পত্র দিয়েছিল। যদিও অনেকেই জাতীয় পতাকার এই বিধি-সংশোধনকে কাঠগড়ায় তুলছেন। তাঁদের মত, জাতীয় পতাকার সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও খাদির যে যোগসূত্রটি রয়েছে, তা এই সংশোধনীর ফলে ছিন্ন হবে। এবং চিনা-মেড পতাকায় ভরবে। কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ বলেছেন, 'পলিয়েস্টারে তৈরি তিরঙ্গা আমদানিতে ছাড় দেওয়ার মানে হবে প্রতি ঘরে চিনে তৈরি জাতীয় পতাকা ওড়ানোর বন্দোবস্ত করে দেওয়া। যে চিন আমাদের জমি দখল করে রয়েছে।' কংগ্রেস মুখপাত্র অজয় কুমারের কটাক্ষ, 'বিজেপি সরকার দেশের সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছে। এখন তাদের লক্ষ্য জাতীয় পতাকা বিক্রি করে দেওয়া, দেশের কোষাগার নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।'
খাদির তাঁতিরা কী বলছেন?
খাদি তাঁতি অ্যাসোসিয়েশন সহ অনেকেই এই সংশোধনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছেন। কর্নাটক খাদি গ্রামোদ্যোগ সংযুক্ত সংঘ দেশ জোড়া আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, স্বাধীনতা দিবসের প্রেক্ষিতে ২ থেকে ৪ কোটি পতাকার অর্ডার তারা পেয়ে থাকে, কিন্তু সংশোধনের সৌজন্যে এ বছর তা ভয়ঙ্কর ভাবে তলানিতে। এই কর্নাটক খাদি গ্রামোদ্যোগ সংযুক্ত সংঘ বা কেকেজিএসএস ২০০৬ সালে জাতীয় পতাকা তৈরি ও বিক্রিতে আইএসআইয়ের সংশাপত্র পায়। এর পর তারা সারা দেশে পতাকা বিক্রিতে একটি অগ্রণী সংস্থা হয়ে ওঠে। খাদি এবং গ্রামীণ শিল্পের ছাড়পত্র থাকা এই সংস্থাটি সারা দেশের একমাত্র জাতীয় পতাকা নির্মাণ এবং সরবরাহকারীও। ফলে কেন্দ্রের পলিয়েস্টার সিদ্ধান্তে তাদের অর্থনীতিতে সমূহ বিপদ আসন্ন, এ নিয়ে চিঠিও লিখেছে তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।
তবে কেন্দ্র পলিয়েস্টারের পথ থেকে পতাকা নিয়ে আদৌ সরবে কি, এ সব আবেদন নিবেদনে আদৌ কোনও কাজ হবে কি, এমন প্রশ্ন থাকছেই।