দাম বৃদ্ধির দৌড় চলছে। সেই দৌড়ানোর গতিটা আরও একটু বাড়তে চলেছে। লেবেল সাঁটা প্যাকেটবন্দি নানা খাদ্য পণ্যের দাম বাড়ছে ১৮ জুলাই থেকে। এই তালিকায় রয়েছে এমনকি মুড়িও। এ ছাড়া, লেবেল সাঁটা এবং প্যাকেটবন্দি মাছ, মাংস (বরফে রাখা নয়), দই, পনির, চাল, ডাল, আটা, পাঁপড়, মধু, গুড় থাকছে তালিকায়।
জিএসটি ছাড়ের সুবিধা এত দিন এ সবে ছিল। এবার থেকে ৫ শতাংশ জিএসটি দিতে হবে। জিএসটি কাউন্সিলের দু'দিনের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে, জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। দুগ্ধজাত এবং কৃষিজাত আন-ব্র্যান্ডেড কিংন্তু প্যাকেটবন্দি পণ্যকে জিএসটি তালিকাভুক্ত করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল রাজ্যগুলির অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত প্যানেল ও ফিটমেন্ট কমিটি। তা-ই মেনে নিয়েছে জিএসটি কাউন্সিল।
৪৭ তম জিএসটি কাউন্সিলের এই বৈঠকে অন-লাইন গেম, ক্যাসিনো এবং ঘোড় দৌড় ইত্যাদিকে ২৮ শতাংশ (জিএসটির সর্বোচ্চ হার) বসানো নিয়ে আলোচনা হলেও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যদিও এই প্রস্তাবও ছিল প্যানেলের। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীগোষ্ঠীকে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট দিতে। অনেকেই বলছেন, সাধারণের দিনযাপনের সঙ্গে সম্পৃক্ত পণ্যগুলিতে কর দেগে দেওয়ার চেয়ে জুয়ায় কর নিয়ে কেন্দ্রের চিন্তা বেশি। তাই তো রিপোর্ট না নিয়ে এগতে পারছেন না নির্মলা সীতারমণ। রয়েছে আরও আলো-আঁধারি।
২০১৭ সালের ১ জুলাই জিএসটি চালু হয়েছে। বলা হয়েছিল, এর ফলে রাজ্যগুলির যে ক্ষতি, তা পূরণ করে দেওয়া হবে। কিন্তু জিএসটি কাউন্সিলের এই বৈঠকে সে ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কিন্তু উল্টো পথে প্যাকেটের দই-মুড়িতে মে ভাবে জিএসটি বসানো হয়েছে, তা নিয়ে অনেকেরই বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না। এবং এই ইস্যুতে সংসদ উত্তপ্ত হতে পারে বাদল অধিবেশনে, যা শুরু হচ্ছে আগামী মাসের ১৮ তারিখ থেকে।
জিএসটি যখন চালু হল, তখন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি এই কর-কে গব্বর সিং ট্যাক্স বলেছিলেন, এদিন টুইটে রাহুল বলেন, গৃহস্থি (গৃহস্থালী) সর্বনাশ ট্যাক্স। সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণে বিরোধীরা কি এককাট্টা হতে পারবে জিএসটি-র এই নব্য ইস্যুতে, সেই জল্পনার ঢাকেও কাঠি পড়েছে। অনেকেরই মতে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির করুণ সময়ে এটা অত্যন্ত বড় ইস্যু, ফলে বিরোধীদের উচিত একে হাতিয়ার করে এক হয়ে লড়াইয়ে দ্বিধা না করা।
জিএসটি চালু হওয়ার পর পাঁচ বছর কেটেছে। এই কর থেকে কেন্দ্রের আয়ও হয়েছে বিরাট। ঊর্ধ্বগতির ছবিটা বেশ চোখে পড়ার মতো। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির এই সময়ে কি মধ্যবিত্তকে এমন চাপ না দিলে চলছিল না, এতে আরও মুদ্রাস্ফীতি কি বাড়বে না, প্রশ্নটা নিয়ে ভাবনাচিন্তার মধ্যেই জিএসটি কাউন্সিল এবং জিএসটি-র শুরুয়াৎ নিয়ে দু'-চার কথা বলে নেওয়া যেতে পারে।
গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স। পণ্য এবং পরিষেবা কর। সংবিধানের ১২২ তম সংশোধনী হিসেবে এই বিল পাশ হয় ২০১৬ সালের মে মাসে। ১৫টির বেশি রাজ্যের বিধানসভা এটিতে অনুমোদন দেওয়ার পর রাষ্ট্রপতি এই বিলে সম্মতি দেন। জিএসটির উদ্দেশ্য করের সরলীকরণ। হাজারো করের জটিলতা থেকে মুক্তি দেওয়া। এক দেশ, এক কর, এই হল কেন্দ্রের নীতি। ৩০ জুন-১ জুলাই মধ্যরাতে সংসদের সেন্ট্রাল হলে বিশেষ অধিবেশন যাকে মেগা ইভেন্ট বলেছেন অনেকে, এর সূত্রপাত ঘটে। তখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
জিএসটির নির্ধারণে তৈরি হয় জিএসটি কাউন্সিল। এটি যৌথ কমিটি, কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির। রাষ্ট্রতি এই কমিটি গঠন করেন ধারা ২৭৯-এ (১) অনুযায়ী। কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। এর সদস্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীও। প্রতিটি রাজ্য তাদের অর্থমন্ত্রী বা অন্য কোনও মন্ত্রীকে এই কাউন্সিলে পাঠাতে পারেন।
জিএসটি চালু নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে মোদী সরকার। তাড়াহুড়ো করে এই কর চালু করা হচ্ছে, এর ফলে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে, এই ছিল অভিযোগ। বিশেষ করে নোটবন্দি, ২০১৬-র ৮ নভেম্বরের পর অর্থনীতির অবস্থা জর্জরিত, এমন একটি পদক্ষেপ নেওয়া পুরোমাত্রায় হঠকারিতা। অভিযোগ তোলে কংগ্রেস সহ বিরোধীরা। ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের সর্বনাশ হবে, তাদের পকেট গড়ের মাঠ হবে। তোপ দাগেন রাহুল গান্ধি।
নরেন্দ্র মোদী অবশ্য একে গুড অ্যান্ড সিম্পল ট্যাক্স বলেছিলেন। গব্বর সিং ট্যাক্স, মানে রাহুলের কামড় এরই পাল্টা ছিল। এর পর লোকসভা ভোটে এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণও শানিয়ে যান রাহুল। তবে ভোটবাক্সে রাহুল তার ফসল পাননি প্রায়।