হায়দরাবাদ হল ভাগ্যনগর। এর গুরুত্ব রয়েছে আমাদের সকলের কাছে। হায়দরাবাদে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে এমন কথা প্রধানমন্ত্রীর। বলেছেন রবিশঙ্কর প্রসাদ। লিখেছে এএনআই। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ এ নিয়ে টুইটও করেন। সেখানে তিনি লেখেন, সর্দার বল্লবভাই প্যাটেল ভাগ্যনগরেই এক ভারত-এর কথা বলেছিলেন, যে কথা (কর্মসমিতির বৈঠকে) বলেছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন বলে বলা হচ্ছে, তা থেকে স্পষ্ট হায়দরাবাদকে ভাগ্যনগর করার বিজেপির পুরনো দাবি এবার পুনরুজ্জীবিত।
২০২০ সালে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পুরভোটের আগে হায়দরাবাদ সফরে গিয়েছিলেন। তিনি ভাগ্যলক্ষ্মী নামে ওই মন্দিরে যান। বিজেপি নেতাদের মতে, ভাগ্যলক্ষ্মী নামকরণ হয়েছে ভাগ্যনগর থেকে। এমনও বলা হয় যে, হায়দরাবাদের আসল নাম ভাগ্যনগর। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ হায়দরাবাদে প্রচারের সময়ে এ প্রসঙ্গটি তুলে ছিলেন। তিনি বলেন, কিছু মানুষ আমায় জিজ্ঞেস করেন যে, কেন হায়দরাবাদের নাম ভাগ্যনগর হতে পারে না? আমি তাদের বলি, কেন হবে না?
ভাগ্যলক্ষ্মী মন্দির কোথায়?
চারমিনারের দক্ষিণপূর্বের মিনার লাগোয়া এই মন্দিরটি। আকারে ছোট। কিন্তু বিতর্কে বড়। বাঁশের খুঁটি এবং ত্রিপল, টিনের ছাদ মন্দিরের। মন্দিরের বয়স কত, সেই প্রশ্নের স্পষ্ট কোনও জবাব নেই। কারণ, এর নির্দিষ্ট কোনও ইতিহাস নেই। তবে, অন্তত ১৯৬০ সাল থেকে এটি রয়েইছে এখানে। এখন যে বিগ্রহ, সেটি সেই সময়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় বলে বলছেন অনেকে। চারমিনারের নির্মাণ শুরু হয় ১৫৯১ সালে। সুলতান মহম্মদ কুলি কুতুব শাহ, তার শাসনাধীন অঞ্চলে প্লেগের দাপট শেষ হওয়াটাকে স্মরণীয় করে রাখতেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেন তিনি। সেকান্দ্রাবাদের সাংসদ জি কিষণ রেড্ডির দাবি অনুযায়ী, এই মন্দির চার্মিনারেরও আগে তৈরি হয়েছিল। চারমিনারের রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব রয়েছে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের। তারা আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছিল, চারমিনারের সংরক্ষিত এলাকা দখল করে রয়েছে মন্দিরটি।
আরও পড়ুন Explained: নূপুর-ধ্বনি কেন শুনল না শীর্ষ আদালত, কীসের ভিত্তিতে নূপুর গিয়েছিলেন সুপ্রিমে?
পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের এক আধিকারিকের বক্তব্য অনুযায়ী, একটি ছোট গার্ড পিলার গাড়ির গতি কম করার জন্য তৈরি গোলাকার ক্ষেত্রের উপর দাঁড় করানো, যেটি ১৯৬০ সালে কোনও সময়ে থেকে দেখা যায় গেরুয়া রঙ করে দেওয়া হয়েছে। তার পর কিছু মানুষ এখানে আরতি করতে শুরু করেন। একটি রাজ্য সড়ক পরিবহণের বাস এটিতে ধাক্কাও মারে, মানে দুর্ঘটনা ঘটে, রাতারাতি ছোট একটি বাঁশের কাঠামো দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। এবং দেবীমূর্তি বসানো হয়। 'এর পর থেকেই প্রতিটি উৎসবেই এই মন্দিরের আয়তন বাড়তে থাকে এক-দু' ফুট করে। ২০১৩ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে যা বন্ধ হয়।' তেলেঙ্গনা বিধান পরিষদের প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের সাবির আলি বলেছেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে।
আরও পড়ুন Explained:কেন অওরঙ্গাবাদ শহরের নাম বদলে সম্ভাজিনগর করল মহারাষ্ট্র সরকার?
মন্দিরের দর্শনার্থী কেমন?
চারমিনার অঞ্চলে যে সব হিন্দু ব্যবসায়ীদের দোকান রয়েছে, তাঁরা এই মন্দিরে যান মূলত। নানা উৎসব বিশেষ করে দিওয়ালিতে ভাল মাত্রায় ভক্তের ভিড় হয়, মন্দিরে দেখা যায় বিশাল লাইনও। সৌভাগ্যের লক্ষ্যে এখানে পুজো দেন ভক্তরা, হিন্দু রাজনৈতিক সংগঠনগুলি বলতে শুরু করে, ভাগ্যনগরের দেবী। তাদের দাবি, হায়দরাবাদের আগের নাম ছিল ভাগ্যনগর। কুতুবশাহি শাসকরা গোলকুন্ডা থেকে রাজধানী সরিয়ে এখানে নিয়ে এলে এর নাম বদল করে দেওয়া হয় হায়দরাবাদ।
রাজনৈতিক উত্তেজনা
হায়দরাবাদের ওল্ড সিটি হল উত্তেজনাপ্রবণ, সাম্প্রদায়িক অশান্তির কেন্দ্রে এই মন্দিরটি রয়েছে অন্তত ১৯৭০ সাল থেকে। ২০২০ সালে গ্রেটার হায়দরাবাদ পুরসভা নির্বাচনের সময়ে ভাগ্যনগরকে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেয় বলে বিজেপি। এমনকি অমিত শাও এই মন্দিরে দেবী দর্শনে যান।