দুর্নীতির নয়া অভিযোগের অভিঘাত। এবার রাজধানীতে। দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া উপ-রাজ্যপাল ভি কে সাক্সেনার কাছে চিঠি লিখে দিল্লি পুরসভার বিরুদ্ধে টোল ট্যাক্স দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অফ দিল্লি বা এমসিডি-র বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযোগ, দুটি টোল ট্যাক্স সংস্থার সঙ্গে পুরসভার যোগসাজশের ফলে পুর-তহবিলে ৬ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সিসোদিয়ার এমনও তোপ, ১০ লক্ষ বাণিজ্যিক গাড়ি দিল্লিতে প্রতি দিন ঢোকে, তাদের থেকে করও নেওয়া হয়, কিন্তু সেই করের অর্থ ছিঁটেফোঁটাও পুরসভার ঘরে পৌঁছয় না।
এমসিডি-র টোল ট্যাক্স নেওয়ার পদ্ধতি কী?
দিল্লিতে যে সব বাণিজ্যিক গাড়ি ঢোকে, তাদের ৭০০ থেকে ১,৪০০ টাকা পর্যন্ত এনভায়রনমেন্ট কম্পপ্লায়েন্স সার্টিফিকেট বাবদ দিতে হয়। এবং ১০০ থেকে ২,০০০ টাকার টোল দিতে হয় আকার ও ক্যাটেগরির উপর। এমসিডি টোল সংগ্রহের মূল দায়িত্বে। কিন্তু টোল ট্যাক্স আদায় করা হয় বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে। পুরসভা টেন্ডার দিয়ে সেই সংস্থাকে নিয়োগ করে। দিল্লির ১২৪টি পয়েন্টের মধ্যে আরএফআইডি বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন ব্যাবস্থার মাধ্যমে টোল সংগ্রহ করা হয় ১৩টি প্রধান প্রবেশ বিন্দুতে। আপের দাবি অনুযায়ী, এই সব প্রবেশপথ দিয়ে দৈনিক ১০ লক্ষ বাণিজ্যিক গাড়ি দিল্লিতে ঢোকে হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং অন্যান্য সংলগ্ন শহর থেকে। সিসোদিয়ার বক্তব্য, ২০১৭ সালে এমসিডি একটি বেসরকারি সংস্থাকে টোল ট্যাক্সের টেন্ডার দেয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি বছর এমসিডি-কে ওই সংস্থার দেওয়ার কথা ১,২০০ কোটি টাকা। সংস্থাটি প্রথম বছর পুরো টাকাও দেয়। কিন্তু তার পর দিল্লি পুরসভার সঙ্গে অবৈধ আঁতাঁতের ফলে তারা টাকা দেওয়া বন্ধ করে। পুরসভার উচিত ছিল, ওই সংস্থার টেন্ডার বাতিল করে দেওয়া, তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা, নতুন একটি সংস্থাকে টেন্ডার দেওয়া। কিন্তু তারা এ সব কিছুই করেনি। সিসোদিয়ার অভিযোগ, উল্টে ২০২১ সালে ওই সংস্থারই একটি সহ-সংস্থাকে টেন্ডার দেওয়া হয়। এবং আরও কমে। মহামারির কারণে ৮৩ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: < লেখক রুশদিকে আক্রমণের নেপথ্যে বছর ২৪-এর হাদি মাটার, চিনে নিন মাস্টারমাইন্ডকে! >
এমসিডি-র বক্তব্য কী?
২০১৭ সালে যে কম্পানিকে টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল, চুক্তি অনুযায়ী তাদের প্রতি বছর ১,২০৬ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। পাঁচ বছরের জন্য এই চুক্তিটি করা হয়। কন্ট্রাক্ট পাওয়ার পর, সংস্থাটি দাবি করে তারা লোকসানে চলছে। ফলে আদালতে যায় মামলা। এমসিডি-র সিনিয়র আধিকারিকের কথায়, আদালত সংস্থাটিকে ফ্রি লেনগুলি থেকে কর নেওয়া বন্ধ করতে বলে। আর তার জেরে তারা ক্ষতিপূরণ চায়। পুরসভার আধিকারিকের এও বক্তব্য, এমসিডি বহু বার বৈঠক করেছে সংস্থাটির সঙ্গে বিষয়টি মেটাতে। কাজ হয়নি। ফলে তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিলও করা হয়। বর্তমানে এমসিডি সংস্থাটির সম্পত্তি ক্রোক করে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সব রকম আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
উপ-রাজ্যাপালের সঙ্গে আপ-এর সংঘাতের নব সংস্করণ
দিল্লি সরকারের বেশ কয়েক জন অফিসারকে দুর্নীতির অভিযোগে সাসপেন্ড করেছেন দিল্লির উপ-রাজ্যপাল। গত সপ্তাহে ১১ জন অফিসারের বিরুদ্ধে রাজ্যপালের এই সিলমোহর পড়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এক্সাইজ কমিশনারও। আপ বলছে, দিল্লির সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছেন উপ-রাজ্যপাল, কিন্তু দিল্লি পুরসভার এত বড় একটি দুর্নীতির অভিযোগ তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন। সিবিআই তদন্ত হলেই দুধ-কা-দুধ পানি-কা-পানি হয়ে যাবে।