টম্যাটো ফ্লু। বাচ্চাদের দুনিয়ায় ভয় দেখাচ্ছে। কেরল, তামিলনাড়ু, হরিয়ানা এবং ওড়িশা থেকে এই জ্বরের খবর এসেছে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এই অসুখ নিয়ে গাইডলাইন্সও প্রকাশ করেছে।
টম্যাটো ফ্লু সম্পর্কে কয়েকটি কথা
টম্যাটো ফ্লু বা টম্যাটো ফিবার। বাংলায় বলতে পারেন, টমেটো জ্বর। এই অসুখে টেমেটোর মতো গোল গোল চাকা চাকা rash তৈরি হয় গায়ে। জ্বর হয়, নানা জয়েন্টে যন্ত্রণা হয়। ডায়ারিয়া হয়। ডিহাইড্রেশন, বমি-বমি ভাব বা বমি এবং ক্লান্তি আসে। মোটামুটি পাঁচ বছরের কম বয়সিদের হয়ে থাকে। টম্যাটো ফ্লু সাধারণত এইচএফএমডি। মানে, হ্যান্ড ফুট মাউথ ডিজিজ। অন্ত্রের মাধ্যমে ছড়ানো এক ধরনের এনটেরোভাইরাসে এই অসুখ। মনে করা হচ্ছে, কক্সস্যাকিভাইরাস এ-সিক্স এবং এ-সিক্সটিনের ফলে টম্যাটো ফ্লু হচ্ছে।
ল্যানসেটে এই ফ্লু নিয়ে একটি প্রবন্ধও প্রকাশিত হয়েছে। কী বলেছে সেখানে?
চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গির আফটার এফেক্ট হিসেবে বাচ্চাদের শরীরে এই রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে। আবার হাত, পা, মুখের অসুখের (HFMD) জন্য দায়ী ভাইরাসের একটি ভ্যারিয়েন্টের মাধ্যমেও আক্রান্ত হতে পারে তারা। যাদের বয়স এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে, তারাই এই ভাইরাসের লাল চোখে পড়ে। তবে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা যাঁদের তলানিতে, তেমন বয়স্কদেরও এই অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইনস্টিটিউট অফ লিভার অ্যান্ড বাইলারি সায়েন্সের ভাইরোলজির অধ্যাপক ডা. একতা গুপ্ত বলেছেন, HFMD নতুন কোনও সংক্রমণ নয়। এটি সম্পর্কে আমরা টেক্সবুক থেকেই জানতে পারি। দেশের নানা অংশ থেকে নানা সময়ে এই সংক্রমণের খবর আসে। তবে একে খুব সাধারণ অসুখ বলা যায় না।
কেন এখন টম্যাটো ফ্লু ছড়াচ্ছে?
ডা. গুপ্ত বলছেন, এ বছর বেশি সংখ্যায় এই ফ্লু হচ্ছে, তাই আমাদের নজর পড়েছে। আসলে আমরা ভাইরাস সংক্রমণের দিকে এখন আরও ভাল নজরদারি চালাচ্ছি, হতে পারে তাই এমনটা ঘটছে। অনেক ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে থাকে বাচ্চাদের মধ্যে। সবার ক্ষেত্রে নমুনা ল্যাবে পরীক্ষা করানো যায় না, তার কোনও দরকারও নেই। কিন্তু গত পাঁচ বছরে দেখা যাচ্ছে ভাইরোলজি ল্যাবগুলিতে পরীক্ষা করানোর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে অনেক। সারা দেশে বহু ভাইরোলজি ল্যাবও তৈরি হয়েছে। মহামারির ধাক্কায় এই নজরদারি ও পরীক্ষা বেড়েছে বেশ খানিকটা। HFMD কিন্তু উপসর্গ দেখেই সহজেই বোঝা যায়। লাল রঙের rash হলে তো কথাই নেই।
কেরলের ডা. আসাওয়াথিরাজ, যিনি এই সংক্রমণ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। জানাচ্ছেন, বর্তমানের সংক্রমণটি হয়েছে কক্সস্যাকিভাইরাস এ-সিক্স এবং এ-সিক্সটিন, এবং আরেকটি প্যাথোজেন এন্টেরোভাইরাস সেভেন্টিওয়ানের ফলে। এই ভাইরাসের সংক্রমণে স্নায়ু সংক্রান্ত কিছু উপসর্গ দেখা যেতে পারে। এনসেফালাইটিসও (মস্তিষ্কে সংক্রমণ) হতে পারে। ৯৯.৯ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগটি নিজে থেকে সেরে যায়। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে সমস্যা তৈরি করে। টম্যাটো rash সাধারণত জিভ, মাড়ি, গালের ভিতরে, তালু এবং গোড়ালিতে হয়ে থাকে। পাছায় কিংবা নখের নীচেও হচ্ছে অনেকের।
মাঙ্কিপক্সের সঙ্গে কি টম্যোটো ফ্লু-র rash গুলিয়ে যেতে পারে কি?
ডাক্তারবাবু জানাচ্ছেন, না তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। মাঙ্কিপক্সের rash আরও গভীর। শরীরে সেই rash-এর ছড়িয়ে থাকাটাও অন্য রকম।
টম্যাটো ফ্লুয়ের চিকিৎসা কী?
কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই টম্যাটো ফ্লু-র। উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকার এই অসুখের যে গাইডলাইন্স প্রকাশ করেছে, সেখানে বলা হচ্ছে উপসর্গ দেখা দিলে পাঁচ থেকে সাত দিন আলাদা করে রাখতে হবে। বাচ্চাদের শেখাতে হবে, এই রোগে আক্রান্ত এমন কোনও বাচ্চাকে সে যেন জড়িয়ে না ধরে, কিংবা স্পর্শ না করে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। বাচ্চারা যেন আঙুল না চোষে সে দিকে নজর রাখতে হবে। সে ব্যাপারে বারণও করতে হবে।