আততায়ীর গুলিতে নিহত জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। শুক্রবার জাপানের সরকারি টিভি ঘোষণা করে আবের মৃত্যুসংবাদ। গুলি খাওয়ার পর অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। রক্তপাতও হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। টেটসুয়া ইয়ামাগামী নামে ৪১ বছরের প্রাক্তন নৌসেনা কর্মী-ই আবেকে হত্যা করেছে গুলি করে। আবের মৃত্যুকে জাপানের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটা যুগের অবসান হল।
দুবার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেন আবে। দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ২০০৬-০৭ আবার ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আবে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০২০ সালে পদত্যাগ করেন। মেয়াদ পূর্ণ হলে ২০২১ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কুর্সিতে থাকতেন তিনি।
নিজের কার্যকালে ভারতবন্ধু বলে বিখ্যাত ছিলেন আবে। ভারতের সঙ্গে জাপানের বন্ধুত্বের নয়া অধ্যায়ের সূচনা করেন তিনি। তার অন্যতম কারণ হল এশিয়ায় চিনের আগ্রাসী মনোভাব। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দারুণ ভাব ছিল। আবের মৃত্যুতে শোকাতুর মোদী। টুইট করে ভেঙে পড়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
দুবছর আগে সরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করতেই মোদী প্রথম টুইট করে বিস্ময় প্রকাশ করেন। আবেকে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য প্রার্থনা জানান।
ভারত-জাপান বন্ধুত্ব এবং আবের ভূমিকা-
প্রথমবার কার্যকালে আবে ভারতে এসে সংসদ ভবনে বক্তৃতা রেখেছিলেন। দ্বিতীয় বার কার্যকালে তিনি তিনবার ভারতে আসেন। ২০১৪, ২০১৫ এবং ২০১৭ সালে। আর কোনও জাপানি প্রধানমন্ত্রী এত বার ভারতে পা রাখেননি।
২০১৪ সালে প্রথম জাপানি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে মুখ্য অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ পান আবে। সেটাই ছিল ভারতের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের পরিচয়। সেই বছরই মে মাসে লোকসভা নির্বাচন ছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। সেই সময় বিরোধীপক্ষের নেতা নরেন্দ্র মোদীও তাঁকে স্বাগত জানান।
২০০১ সালে ইন্দো-জাপান গ্লোবাল পার্টনারশিপের শিলান্যাস হয়। ২০০৫ সালে বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক সম্মেলন হওয়ার চুক্তি হয়। তার পর ২০১২ সাল থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের গতি বাড়ান আবে।
মোদী-আবের সম্পর্ক-
মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বেশ কয়েকবার জাপানে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে জাপানেই গিয়েছিলেন মোদী। তখন মোদী-আবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপে বাড়ানোর লক্ষ্য নেন দুই রাষ্ট্রনেতা। অসামরিক পরমাণু শক্তি থেকে নৌসীমায় সুরক্ষা, বুলেট ট্রেন থেকে পরিকাঠামো উন্নয়ন, অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি, ইন্দো-প্যাসিফিক রণকৌশলের মতো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করেন দুজনে।
চিনের সঙ্গে সংঘাতের সময় ভারতের পাশে দাঁড়ায় জাপান
২০১৩ সাল থেকে ভারত-চিন সেনা সীমান্তে অন্তত চারবার সংঘাতে জড়িয়েছে। আবের নেতৃত্বে জাপান তখন প্রতিবার ভারতের পাশে দাঁড়ায়। ডোকলাম বিবাদের সময় থেকে লাদাখ সীমান্ত বিবাদ, জাপান প্রতিবার কড়া ভাষায় চিনের সমালোচনা করেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে গুয়াহাটি আসার কথা ছিল আবের। কিন্তু তখন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের কারণে আবের সফর বাতিল হয়। তার পর পরের বছর পদত্যাগ করেন আবে। চলতি বছর ২৪ মে শেষবার মোদী-আবে সাক্ষাৎ হয় টোকিওতে কোয়াড সম্মেলনে। সেটাই দুই বন্ধুর শেষ দেখা।