দ্বি-মেরুর লড়াই: উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের শুরু থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, লড়াইটা বিজেপি বনাম সমাজবাদী পার্টির। কারণ, প্রথম থেকেই দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথরা টার্গেট করে চলেছেন অখিলেশ যাদব এবং তাঁর দল সমাজবাদী পার্টিকে। সপা-সমর্থকরা লাল টুপি পরেন, সেই লাল টুপির দিকে ছুটে গিয়েছে গেরুয়া তির। মাফিয়াবাদ এবং লাল টুপিওয়ালাদের গুন্ডাগার্দি এবং একটি সম্প্রদায়ের (মুসলিম) প্রতি তুষ্টিকরণ-- এই সব বাছা-বাছা আক্রমণ শোনা গিয়েছে তাঁদের গলায়। ফলাফল থেকেই স্পষ্ট, ভোটার দুই বিকল্পের মধ্য থেকে কাকে বেছে নিয়েছেন। তবে সেই সঙ্গে এটাও সত্যি যে, সপা-র ফলও বেশ ভাল, রীতিমতো পাতে দেওয়ার মতো। কিন্তু ওই যে বিজেপি রাজনীতির পালস-টা বুঝতে পেরেছিল পুরোদমে, যেটা পশ্চিমবঙ্গে তারা, অনেকেই মনে করেন, পারেনি। পালস বুঝে কংগ্রেস কিংবা বসপা-কে আক্রমণের লক্ষ্য না করে তাদের অবহেলার অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছেন গেরুয়ার রথী-মহারথীরা। বিজেপির সাফল্যের পিছনে এটা একটা বড় কারণ।
নিরাপত্তা: বহু ভোটার মনে করেন, শাসক দলের পুনর্নির্বাচিত হওয়াটার পিছনে নিরাপত্তা একটি বড় ইস্যু। ল অ্যান্ড অর্ডার, আইনশৃঙ্খলাটা কেমন, সেটা যদি ভাল হয়, ভারসাযোগ্য হয়, তা হলে অনেকেই শাসক দলকে ফিরিয়ে আনার কথা ভাবতে থাকেন। বোতামটিও সেই মতো টেপেন। বহু মানুষ মনে করেন, কোনও সরকারই মুদ্রাস্ফীতি বেকারত্বের মতো সমস্যাগুলি সমাধান করতে পারে না, ফলে সেইগুলো ভোটের ময়দানে একটু ন্যূন হয়ে যায়, আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নটা এই ভাবেও বড় হয়। বা, এই ভাবে বড়র মতো দেখায়। যোগী আদিত্যনাথের আইনশঙ্খলা রক্ষায় গা-জোয়ারিপনা, মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকেই, মানুষ ভাল ভাবে নিয়ে নিয়েছে। গর্মি ঠান্ডা কর দুঙ্গা। বুলডোজার চলেঙ্গে। এই জাতীয় রণহুঙ্কার, মানুষ মনে করেছে, যোগীই পারবেন তাদের নিরাপত্তার জীবন দিতে।
যোগীর ভাবমূর্তি: কাট টু ২০১৭। ২০১৭-র উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন। নোটবন্দির হাওয়া তখন সাইক্লোন। মোদী কার্যত মহাশক্তিধর এক শাসকের মার্যাদা পাচ্ছেন। উত্তরপ্রদেশের একের পর এক সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখে উঠে আসছে নোটবন্দি-র গর্জন। তিনিই ছিলেন একমাত্র মুখ তখন। যোগীকে ক'জন আর চিনত গোরক্ষপুরের বাইরে। কিন্তু যোগী মুখ্যমন্ত্রী হলেন, এবং এই পাঁচ বছরে তিনি করলেনটা কী, তার হিসেব দেওয়ার জন্য তাঁকেই মুখোমুখি হতে হয়েছিল এবার। প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা থাকলেও, পাবলিকের বন্দুকটা তো ঘোরানো যোগীর দিকে। বিভিন্ন সভায় মোদী এবং শাহরা যোগী সরকারের গুণকীর্তন করে গিয়েছে়ন এর ফলে, যা স্বাভাবিকই দেখিয়েছে, যোগীর সাফল্যটা তো প্রমাণ করতে হবে। সাফল্য-কথা বার বার বলতে হবে, তাই না! প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা যেন যোগী-বিচারে সাধারণের সার্টিফিটেক হয়ে গিয়েছিলেন সভা থেকে সভায়। যা কাজ করেছে সে-রাজ্যে।
আরও পড়ুন Explained: উত্তরপ্রদেশে বিজেপির জয়ের পাঁচটি কারণ
সপা-র পুনর্জাগরণে ধাক্কা: অখিলেশ যাদব ও তাঁর দল আশায় বুক বেঁধেছিলেন। ভেবেছিলেন তাঁরা ক্ষমতায় আরোহণ করবেন। যোগীকে মানুষ দুরছাই করে দেবে। তাঁদের এমনও ধারণা ছিল যে, ক্ষমতায় এলে তাঁদের সাধের সংগঠনেও জোয়ার আসবে। কিন্তু ভাল ফল-টা বড় কথা নয়, জেতা-হারাটাই বড়, যো জিতা ওহি সিকন্দর… এখন দলটাকে উত্তরপ্রদেশে জীবিত রাখাটাই অখিলেশদের কাছে একটা লড়াই হয়ে দাঁড়াবে বলে অনেকের মত।
বিএসপি তলানিতে: বিএসপি-র ভোট শেয়ার আসমান থেকে জমিতে এসে মাথা কুটছে। ২২ শতাংশ থেকে পৌঁছে গিয়েছে ১২ শতাংশে। ২০০৭-তেও যে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। মনে করা হচ্ছে, বহুজন সমাজ পার্টি ও বহেনজি ময়াবতীর মায়া ত্যাগ করেছেন যাদবরা, যাঁরা বসপা-র বড় ভোটব্যাঙ্ক ছিল। দলিতের সঙ্গে তাঁরাও তরণী ভিড়িয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। বসপার হাতে এখন পেনসিলটাও আর নেই।