দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক। ইউক্রেনের এই দুটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চলকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর জবাবে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ মোক্ষম তোপ দেগেছেন। বলেছেন, নতুন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে রাশিয়ার। ফলে সমস্যা বাড়ছে। সমস্যাটির মূলের দিকে তাকানো যাক।
বিচ্ছিন্ন অঞ্চল বলতে কী বোঝায়?
দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে এক সঙ্গে দনবাস বা ডনবাস বলা হয়। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেরিয়ে আসে এই ডনবাস। ঘোষণা করে গণপ্রজাতন্ত্রের। যদিও তাতে এখনও আন্তর্জাতিক সিলমোহর পড়েনি। সেই সময় থেকে, ইউক্রেনের বক্তব্য হল, সংঘর্ষে নিহত ১৫ হাজার। রাশিয়া দ্বন্দ্বে নিজেকে জড়াতে আক্ষরিক ভাবে চায়নি শুরু থেকে, কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নানা ভাবে ভাবে সাহায্য করে গিয়েছে। অর্থনৈতিক মদত যেমন জুগিয়েছে, তেমনই কোভিডের ভ্যাকসিন দিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বুঝিয়ে দিয়েছে, পুতিন তোমাদেরই পুত্র। শুধু তাই নয়, এই অঞ্চলের আট লক্ষ মানুষকে রাশিয়া পাসপোর্ট দিয়েছে।
দুই অঞ্চলকে রুশ স্বীকৃতির মানে কী?
রাশিয়া এই ঘোষণা প্রথম করলেও এই নয় যে, এত দিন ডনবাস ইউক্রেনের প্রকৃত অর্থে অংশ ছিল। আসলে এই ঘোষণার প্রকৃত অর্থ হল, এহার মস্কো এই অঞ্চলে নিজেদের সেনা পাঠাতে পারবে খুল্লমখুল্লা। তাদের সহজ যুক্তি হয়ে উঠবে, বন্ধুর পাশে দাঁড়াতে তারা সেনা পাঠিয়েছে। কেউ এই যুক্তি খণ্ডন করতে পারবে না। বন্ধুকৃত্যে বাধা দেওয়া তো পাপ, তাই না! রুশ সংসদের সদস্য এবং দোনেৎস্কের প্রাক্তন রাজনৈতিক নেতা, আলেকজান্দার বরোদাই রয়টার্সকে গত মাসে বলেন, রাশিয়ার সাহায্য প্রয়োজন। এই ভাবে এই দুই অঞ্চলের যে অংশ এখনও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তা ছিনিয়ে আনা যাবে। যদি এমন কিছু ঘটে, তা হলে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সেনাসংঘাত এড়ানো যাবে না।
আরও পড়ুন কোভিডের সংক্রমণ এখন কোন স্তরে, আর মাস্ক পরার প্রয়োজন আছে কি?
মিনস্ক শান্তি প্রক্রিয়া কী?
রাশিয়ার এই স্বাধীনতার সিলমোহরের অর্থ মিনস্ক শান্তি চুক্তির অন্ত্যেষ্টি। যদিও এই চুক্তি এখনও বাস্তবায়িত করা হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী, ইউক্রেনের ভিতরে এই দুই অঞ্চল হবে স্বায়াত্তশাসিত। বৃহত্তর স্বায়াত্ত শাসন দেওয়ার কথাই বলা হয় চুক্তিতে।
পশ্চিমের প্রতিক্রিয়া কী?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের পক্ষে রয়েছে। প্রথম থেকেই। গত সপ্তাহে মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, রাশিয়া বিচ্ছিন্ন অঞ্চলকে স্বীকৃতি দিলে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করা হবে। বুড়ো আঙুল দেখানো হবে ইউক্রেনের অখণ্ডতাকে।
আরও পড়ুন Explained: বিদেশের সমালোচনার বিরুদ্ধে মুখর ভারত, মুখর হওয়ার ইতিহাসটা জানেন কি?
আগে কি কখনও রাশিয়া এমন স্বীকৃতি দিয়েছে?
হ্যাঁ দিয়েছে। রাশিয়া আবখাজিয়া এবং দক্ষিণ ওসেটিয়ার স্বাধীনতায় সিলমোহর দেয়। এই দুটিই বিচ্ছিন্ন অঞ্চল। জর্জিয়ার সঙ্গে স্বল্পকালীন একটি লড়াইয়ের পর, ২০০৮ সালে, এই ঘোষণা। রাশিয়া এই দুটি অঞ্চলকে আর্থিক সাহায্য করেছিল। বিশাল সেনা সেখানে মোতায়েন করে রেখেছিল। কোভিডে অর্থনীতি এখন খানখান। এখন রণবাদ্য কেন বাজবে, সেই প্রশ্নের কোনও জবাব কিন্তু পুতিন সাহেবের কাছে নেই। তা ছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বপ্ন তিনি দেখছেন কিনা, দেখলেও তা তিল থেকে তাল হবে কি না, সেই প্রশ্ন অধরা মাধুরী, এখনও।