আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ওয়ার ক্রিমিনাল বা যুদ্ধাপরাধী বলেছেন। প্রেক্ষিত, ইউক্রেনে রুশ হামলা, নির্বিচারে হত্যা-কাহিনি রচনা। কিন্তু বাইডেন বললেই পুতিন আন্তর্জাতিক ভাবে যুদ্ধাপরাধী হয়ে যাবেন না। কাউকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। সেই প্রক্রিয়াপথ পেরনোর আগে এমন তকমা লাগানো যায় না। হোয়াইট হাউজ প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই মন্তব্যকে একটু অন্য ভাবে দেখছে। প্রেসিডেন্ট নিজের মনের কথা বলেছেন। জানাচ্ছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জেন সাকি।
পুতিন যুদ্ধাপরাধী কি না, সেই তদন্ত অবশ্য় শুরু হয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাশের পর, আমেরিকা এবং আরও ৪৪টি দেশ হাতে হাত মিলিয়ে পুতিনের বিরুদ্ধে তদন্তে নামছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট, বা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত, পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে।
কে যুদ্ধাপরাধী?
আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘর্ষ আইন, ল অফ আর্মড কনফ্লিক্ট, ভঙ্গকারীকেই যুদ্ধাপরাধী বলা হয়ে থাকে। তবে তদন্ত করে দেখা হবে সেই ব্যক্তি এই আইনটি ভেঙেছেন কিনা। আইন অবশ্য একটি নদীর মতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার বদল হয়, এইটিরও হয়েছে। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জেনেভা কনভেশন থেকে এই আইনের মোদ্দা চেহারাটি সামনে আসে। যাঁরা যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন না, মানে সাধারণ মানুষ প্রধানত, এ ছাড়াও আহত সৈন্য, যুদ্ধবন্দির দল, এদের রক্ষা করাই আইনের উদ্দেশ্য। বিভিন্ন চুক্তি এবং প্রোটোকল রয়েছে আইনের আধারে। সেই অনুযায়ী বেশ কিছু অস্ত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার সিলমোহর পড়েছে। রাসায়নিক অস্ত্র স্বাভাবিক ভাবেই এর মধ্যে রয়েছে প্রথম দিকে।
আরও পড়ুন- Explained: ইউক্রেনকে প্রাণঘাতী কামিকাজে ড্রোন দিল আমেরিকা, কী এই কামিকাজে ড্রোন
বিচারের পথটা কী?
প্রথমত, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট কাউকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করতে পারে, অবশ্য তদন্তের পর। দ্বিতীয়ত রাষ্ট্রপুঞ্জ এ ব্যাপারে তদন্ত কমিশন গঠন করতে পারে। তৃতীয় ক্ষেত্রে, বিশেষ করে পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করায় ভূমিকা নিতে পারে ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নুরেমবার্গের বিচার বা আন্তর্জাতিক নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের কথা মনে করা যেতে পারে এ প্রসঙ্গে। যে ট্রাইবুনাল গঠন করেছিল ফ্রান্স, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন এবং আমেরিকা, যৌথ ভাবে।
যদিও প্রথমে এই জাতীয় বিচারে ব্রিটেনের আপত্তি ছিল। তারা সমাধান চাইছিল রাজনৈতিক পথে। ১৯৪৫ সালের ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছিল নুরেমবার্গের বিচার। সোভিয়েত, ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং আমেরিকার এক জন করে চার জন বিচারপতি ছিলেন এতে। বিচার চলেছিল প্রায় ১১ মাস। নাৎসি জার্মানির ১২ জন জীবিত নেতাকে তোলা হয় কাঠগড়ায়। এই বিচারে আইনজীবীদের একজন ছিলেন বেঞ্জামিন ফেরেঞ্জ, যাঁর নামে এখনও স্মরণ করা হয়ে থাকে।
কিন্তু ন্যুরেমবার্গের বিচার হয়েছিল নাৎসি জার্মানির পতনের পর। এ ক্ষেত্রে কি তেমনটা হবে? তা না হলে বিচারের দোষী সাব্যস্ত হলেও, পুতিন তা মানবেন কেন। যেমন ক্রিমিয়া ইউক্রেনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়ার পরও পুতিন আন্তর্জাতিক রায় মানেননি।
Read story in English