ধারাবাহিক বিস্ফোরণে বৃহস্পতিবার রক্তাক্ত হয়েছে কাবুল এয়ারপোর্ট। অন্তত ১০০-র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায়। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ১৩ জন মার্কিন সেনা। তবে হামলা নিয়ে আগেই আমেরিকা সতর্ক করেছিল। হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট খোরাসান। আইএস-কে সংগঠন আফঘানিস্তানের খোরাসান প্রদেশের নাম নিয়ে জঙ্গি নেটওয়ার্ক চালাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য বিষয়, মধ্যযুগীয় ইতিহাসে আফগানিস্তান-ইরানের মাঝখানে অবস্থিত এই অঞ্চলের উল্লেখ আছে।
মার্কিন আধিকারিকরা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-কে জানিয়েছে, এই হামলা তালিবান ও মার্কিন সেনার বিরুদ্ধে পরিকল্পনামাফিক হামলা। আফগানিস্তানের দখল নেওয়ায় তালিবানও এখন জঙ্গি নিশানায়! মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আবার IS-K নিয়ে আগাম সতর্কবার্তার কথা বলেছেন। ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পর হোয়াইট হাউস থেকে জঙ্গি সংগঠনকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। IS-K তালিবানের ঘোষিত শত্রুও বটে। কিন্তু IS-K কারা, কোথা থেকে গজিয়ে উঠল তারা, সেটা জানা যাক।
কথায় বলে, জিহাদিদের কোনও ধর্ম হয় না। কিন্তু এই ক্ষেত্রে IS-K এবং তালিবান মতাদর্শের দিক থেকে আলাদা। আফগানিস্তানে অনেক দিন আগে দুই গোষ্ঠী যুদ্ধরত। বৃহস্পতিবারের বিস্ফোরণের আগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম দাবি করে, আফগানিস্তান দখলের সময় খোরাসানের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তালিবানের। একাধিক তালিবান চেক পয়েন্টে খোরাসানের বহু জঙ্গিকে খতম করে তারা। পাল্টা খোরাসানের হামলায় প্রাণ যায় বেশ কিছু তালিবানের। বোমায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তাদের দেহ।
আরও পড়ুন পঞ্জশির-পতন তালিবান-লক্ষ্য, গড় রক্ষায় মরিয়া মাসুদ, কে এই আফগান নেতা?
তালিবান ও খোরাসান কীভাবে আলাদা
সালাফি আন্দোলনের আদর্শে ব্রতী আইএস খোরাসান, অন্যদিকে তালিবান দেওবন্দ স্কুলের ছাত্র। তালিবান যেখানে আফগানিস্তানে ইসলামিক আমিরশাহী বানাতে চায়, খোরাসানরা সেখানে দক্ষিণ ও মধ্য অশিয়ায় খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যত। ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক-সিরিয়ার মতো খোরাসানরাও বিশ্বজুড়ে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে।
এবার প্রশ্ন হল, শরিয়া আইনকে কীভাবে পালন করছে দুই গোষ্ঠী। খোরাসানের মতে, তালিবান যথেষ্ঠ কঠোর নয়। আইএস যোদ্ধারা তালিবানকে দিকভ্রষ্ট এবং কাফের বলে থাকে কারণ আমেরিকার সঙ্গে তারা শান্তিচুক্তি করতে গিয়েছিল বলে। এর ফলে জিহাদের মূল্য লক্ষ্য থেকে তালিবান সরে এসেছে বলে মনে করে আইএস। জিহাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তালিবান।
সেই কারণেই কাবুল দখলের পর বিশ্বজুড়ে বহু জঙ্গি সংগঠন যখন তালিবানকে অভিনন্দন জানিয়েছে, আইএস তা করেনি। বরং তারা তালিবানের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তালিবান যোদ্ধারা আবার মার্কিন এবং আফগান বাহিনীর সঙ্গে মিলে ইসলামিক স্টেটকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান থেকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করেছে।
আরও পড়ুন বাড়ছে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান, সে দেশ আবার কি রক্তে ভাসবে?
জুলাই মাসের রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, আইএস-কে ৫০০ থেকে দেড় হাজার যোদ্ধা সম্বলিত বাহিনী তৈরি করেছে আফগানিস্তানে। আর কাবুলে একের পর এক হামলাও চালাতে পারে। তার চেয়েও বড় কথা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি চুক্তি নিয়ে বিরক্ত তালিবান যোদ্ধাদের দলে নিয়েছে তারা। এছাড়াও সিরিয়া, ইরাক থেকে যোদ্ধা সাপ্লাই তো রয়েইছে।
বস্তুত, আইএস-কে পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালিবান গোষ্ঠী থেকে জন্ম নিয়েছে। ইসলামের সশস্ত্র ছাত্র নিজেদের দেশেই খতম হওয়ার ভয়ে আফগানিস্তান সীমান্তে পেরিয়ে ঢুকে পড়ে এবং তার পর ২০১৪ সালে ইসলামিক স্টেটের প্রধান বাঘদাদির সঙ্গে হাত মেলায়। তার ঠিক একবছর পরই বাঘদাদির মৃত্যু হয় বলে খবর।
মধ্য এশিয়ায় আইএস-কে নাম নিয়ে সংগঠন বিস্তারের কাজে নেমেছে তারা। ইরাক ও সিরিয়ায় যখন আইএসের ক্ষমতা শিখরে, তখন আফগানিস্তানে শাখা সংগঠনকেও টাকা-অস্ত্র দিয়ে বাড়তে সাহায্য করছে তারা। আইএস-কে এখন তালিবানকে বিদেয় করে আফগানিস্তান কবজা করতে চাইছে। সেটাতে তারা কতটা সফল হয় এখন সেটাই দেখার।