Advertisment

Explained: কে এই নবাব মালিক, কেনই বা তাঁকে গ্রেফতার করল ইডি?

এনসিবি কর্তা সমীর ওয়াংখেড়ের সঙ্গে সংঘাত থেকে বিজেপির সঙ্গে দীর্ঘ শত্রুতা, গ্রেফতারির নেপথ্যে কোন কারণ?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Nawab Malik, NCP, Congress, BJP, Shiv Sena, NCB, Sameer Wankhede, ED, Money Laundering, Dawood Ibrahim, Indian Express Explained, bangla news, bengali news

হাওয়ালা কাণ্ডে দাউদ ইব্রাহিম এবং তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে যোগের অভিযোগে মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিককে গ্রেফতার করল ইডি।

হাওয়ালা কাণ্ডে দাউদ ইব্রাহিম এবং তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে যোগের অভিযোগে মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিককে গ্রেফতার করল ইডি। বুধবার মহারাষ্ট্রের এনসিপি নেতাকে জেরা করার পর গ্রেফতার করা হয়। কেন মালিককে গ্রেফতার করা হল, তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার এবং এনসিপি-তে তাঁর গুরুত্ব কতটা, আসুন তাতে নজর দেওয়া যাক।

Advertisment

কে নবাব মালিক

মুম্বইয়ের অনুশক্তি নগর থেকে পাঁচবারের বিধায়ক নবাব মালিক, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির জাতীয় মুখপাত্র এবং বর্তমানে রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য। তিনি সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী। ১৯৫৯ সালে উত্তরপ্রদেশের ধুশওয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মুম্বইয়ে পরিবার ব্যবসায়িক সূত্রে চলে আসে। তিন মাস বয়সে মুম্বইয়ের ডোংগরি এলাকায় চলে আসেন নবাব।

এনসিপি-র সঙ্গে কী ভাবে যুক্ত হলেন

সঞ্জয় গান্ধির ভক্ত নবাব মালিক যুব কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। সঞ্জয়ের মৃত্যুর পর তিনি সঞ্জয় বিচার মঞ্চে যোগ দেন। মানেকা গান্ধির এই সংগঠন তখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির বিরোধিতায় আন্দোলন শুরু করে। এরপর ১৯৮৪-র লোকসভা নির্বাচনে মঞ্চ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন ২৬ বছরের মালিক বম্বে উত্তর-পূর্ব কেন্দ্রে দুই হেভিওয়েট প্রমোদ মহাজন এবং গুরুদাস কামাতের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়েন। কিন্তু মাত্র ২,৯৫০ ভোট পেয়ে ধরাশায়ী হন।

১৯৯২-৯৩ সালের দাঙ্গার পর কংগ্রেসের প্রতি ক্ষোভে সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেন মালিক। তার পর নেহেরুনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়ান। কিন্তু শিবসেনার সূর্যনাত মাহাড়িকের কাছে হেরে দ্বিতীয় হন। মাহাড়িকের জয় পরে অবশ্য খারিজ হয়ে যায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। ১৯৯৬ সালে উপনির্বাচনে নবাব মালিক ৭ হাজার ভোটে প্রথমবার জেতেন।

১৯৯৯ সালে সমাজবাদী পার্টির টিকিটে ফের ভোটে জেতেন তিনি। ভোটের কংগ্রেস এবং এনসিপি জোটের সিদ্ধান্ত নেয়। তাতে সমাজবাদী পার্টি সমর্থন দেয়। যার ফলে একটি মন্ত্রিত্ব পদ পায় সপা। সেইসময় মালিকের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে। আবাসন এবং ওয়াকফ বোর্ডের প্রতিমন্ত্রী হন তিনি। কিন্ত্ু মন্ত্রী হয়েই সপা থেকে দূরত্ব তৈরি করেন মালিক। ২০০১ সালের ১৩ অক্টোবর তাঁকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর পর শরদ পওয়ারের সংস্পর্শে এসে এনসিপি-তে যোগ দেন তিনি।

মালিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

এনসিপিতে যোগ দিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রিত্ব সামলেছেন মালিক। উচ্চশিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, শ্রমের মতো দফতর সামলেছেন কংগ্রেস-এনসিপি সরকারে। আন্না হাজারে মালিক এবং আরও তিন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিলেন। হাজারের অভিযোগ ছিল, মালিক মুম্বইয়ের একটি চালের পুনর্নিমাণ আটকে দেন যাতে প্রোমোটারদের সুবিধা হয়।

২০০৫ সালে পি বি সাওয়ান্ত কমিশন তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত করেই মালিক মন্ত্রীপদ থেকে ইস্তফা দেন। আত্মপক্ষে সমর্থনে মালিক তখন জানান, যে প্রজেক্ট নিয়ে তাঁকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, সেই কাজ বিজেপি-শিবসেনা সরকারের জমানায় বিল্ডারের দোষে এটা হয়েছে। তিন বছর পর অশোক চহ্বন সরকারের মন্ত্রিসভায় ফের ঠাঁই হয় তাঁর। ২০০৮ সালে শ্রম মন্ত্রী হন তিনি। ২০০৯ সালে কংগ্রেস-এনসিপি সরকার ফের ক্ষমতায় ফিরলেও মালিক মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। তার পর তাঁকে দলের মুখপাত্র করা হয়।

এর পর ২০১৪ সালে মালিক মাত্র হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। তখন দলের সাংগঠনিক দায়িত্বে মনোযোগ দেন মালিক।

আরও পড়ুন উত্তরপ্রদেশে সাইকেলে সওয়ার বিতর্ক, চালাচ্ছেন মোদী, কী করছেন অখিলেশরা?

এনসিপি-তে মালিকের গুরুত্ব

মারাঠা-কেন্দ্রীক দলে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম মুখ নবাব মালিক। ২০১৯ সালের বিধানসবা নির্বাচনে মালিক দলের তরফে বিরাট ভূমিকা নিয়েছিলেন বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া মেশিনারির বিরুদ্ধে। প্রায় দশ বছর বাদে ফের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয় তাঁর। অনেকেই ভেবেছিলেন, অনকে গুরুত্বপূর্ণ দফতর পাবেন মালিক। যেহেতু তিনি পওয়ারের কাছের লোক।

বিরোধীদের মুখ মালিক

গত বছর জানুয়ারিতে মালিকের ব্যবসায়ী জামাই সমীর সাব্বির খানকে গ্রেফতার করে সমীর ওয়াংখেড়ে নেতৃত্বাধীন এনসিবি। এক ব্রিটিশ ব্যক্তির কাছ থেকে মাদক কেনার অভিযোগে গ্রেফতার হন সমীর। পরে অবশ্য জামিন পেয়ে যান। কিন্তু মালিকের দাবি ছিল, তাঁর জামাইকে ফাঁসানো হয়েছে।

এর পর শাহরুখের ছেলে আরিয়ান খান গ্রেফতার হওয়ার সময়েও মালিক একা হাতেই জাতীয় সংবাদমাধ্যমে একের পর এক বোমা বিস্ফোরণ করছিলেন সমীর ওয়াংখেড়েকে নিয়ে। বিজেপির বোড়ে হয়ে ওয়াংখেড়ে কাজ করছে বলে দাবি করেন তিনি। বহু জলঘোলার পর কর্ডেলিয়া প্রমোদতরী মাদক কাণ্ডের তদন্ত থেকে সমীরকে সরানো হয়।

আরও পড়ুন Explained: সমীর ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ, কেন দায়ের FIR?

কেন এখন মালিক প্রশ্নের মুখে

বুধবার সকাল সাতটার সময় মালিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে ইডি। তাঁকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করার পর তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তদন্তকারী সংস্থা কুরলায় মালিকের সম্পত্তি সংক্রান্ত লেনদেন নিয়ে তদন্ত করে। তদন্তে জানা গিয়েছে, দাউদ ঘনিষ্ঠ একজনের কাছ থেকে সম্পত্তি কিনেছিলেন মালিক। বাজরদর থেকে অনেক কম দামে সেই সম্পত্তি তিনি কেনেন বলে জানা গিয়েছে।

ncp Explained ED Nawab Malik
Advertisment