অপরাধস্থলে মেলা আঙুলের ছাপ, ছবি ইত্যাদির সঙ্গে কারওর আধার-তথ্য মিলিয়ে দেখার অনুমতি দেওয়া যায় না। ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা UIDAI এমনটাই জানিয়ে দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্টে। দিল্লি পুলিশ তদন্তের স্বার্থে আধার তথ্যের সঙ্গে অভিযুক্তের আঙুলের ছাপ-ছবি মিলিয়ে দেখার অনুমতি চেয়ে আদালতে যে আবেদন জানিয়েছিল, তাতে ঠান্ডা জল ঢেলে দেওয়ার সামিল UIDAI-এর এই বক্তব্য। তারা এর পক্ষে আইনের মোক্ষম যুক্তিও তুলে ধরেছে তাদের হলফনামায়।
তাদের কথা অনুযায়ী, এটি আধার আইনের বিরুদ্ধে যেমন, তেমনই এ কাজে প্রযুক্তিগতও সমস্যা রয়েছে। ২৯ জুলাই দিল্লি হাইকোর্টে ওই হলফনামা দেয় UIDAI।
ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লি হাইকোর্ট UIDAI-এর কাছে জানতে চেয়েছিল, অপরাধস্থল থেকে পাওয়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ছবি ইত্যাদি আধার-তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে আধার আইন ২০১৬ ছাড়পত্র দেয় কিনা? ২০১৮ সালে একটি সোনার দোকানে ডাকাতি এবং খুনের ঘটনার তদন্তে তেমনই প্রয়োজন ছিল পুলিশের।
আরও পড়ুন Explained: মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অতীতে বারেবারে ব্যর্থ হয়েছে RBI, গলদ মুদ্রানীতিতেই
UIDAI তাদের হলফনামায় জানিয়েছে, পরিচিতি এবং আধার নম্বর বার করার প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনও কাজে বায়োমেট্রিক তথ্য কাউকে দেওয়ার অনুমতি দেয় না আইন । পাশাপাশি তাদের এমনও বক্তব্য, ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং আধারের যে ডেটাবেস রয়েছে, তার সঙ্গে অপরাধস্থলে পাওয়া এ জাতীয় কিছু মিলিয়ে দেখার জন্য উপযুক্ত কোনও প্রযুক্তিও নেই।
কী আইন
আধার আইন ২০১৬-র ২৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী এই বায়োমেট্রিক তথ্য শেয়ার করা যাবে না। আইন মোতাবেক কেউ তাঁর পরিচিতির প্রয়োজনে, কিংবা আধার নম্বর বার করতে হলে এই আধার-তথ্য অপর কাউকে দিতে পারেন। এ ছাড়া যে কোর বায়োমেট্রিক ইনফর্মেশন সংগ্রহ করা হয়েছে আধারের জন্য, তা কারওর সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না।
আইন অনুযায়ী কোর বায়োমেট্রিক ইনফর্মেশনের মধ্যে রয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং চোখের আইরিশ স্ক্যান ইত্যাদি। ফলে UIDAI-এর বক্তব্য, যখন আইনে স্পষ্ট এই কাজে নিষেধ করা হয়েছে, তখন কী করে এই তথ্য নেওয়া সম্ভব!
ওই আইনের ৩৩ নম্বর ধারায় রয়েছে, নির্দিষ্ট কোনও ঘটনার প্রেক্ষিতে আইন পরিচয়ের প্রমাণ সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ প্রয়োজন। তবে সেই নির্দেশ দিতে হলে UIDAI এবং আধার কার্ড হোল্ডারের বক্তব্য শুনতে হবে আদালতকে। তাতেও বলা হচ্ছে, কোর বায়োমেট্রিক তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।
আরও পড়ুন Explained: ভারতে কোভিডের মৃত্যু ৯০ শতাংশই নথিভুক্ত করা হয়নি, WHO-র দেওয়া হিসেবে মাথায় হাত
UIDAI-এর হলফনামা বলছে, ধারা ৩৩ অনুযায়ী কোনও আধার হোল্ডারের ফোটোগ্রাফ, স্থানসংক্রান্ত তথ্য দেওয়া গেলেও যেতে পারে, কিন্তু আধার নম্বর না থাকার ফলে কোনও অজানা অভিযুক্তের ছবি বার করে দেওয়া প্রযুক্তিগত ভাবে সম্ভব নয়, আর সেই আবেদনটিই জানানো হয়েছে পুলিশের তরফে।
আগেও মামলা
স্কুল টয়লেটে সাত বছরের এক পড়ুয়ার ধর্ষণের মামলায় তদন্তের স্বার্থে UIDAI-এর কাছ থেকে আধার তথ্য চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল সিবিআই। এই মামলায় ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি UIDAI-কে নির্দেশও দেয় বম্বে হাইকোর্ট। প্রথমে ২০১৩-র অক্টোবরে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে UIDAI হেরে যায়, সিবিআইকে তথ্য দেওয়ার জন্য তাদের নির্দেশ দেন বিচারক। UIDAI গোয়ার বম্বে হাইকোর্টে এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। তারা আধার কার্ড হোল্ডারের পক্ষ নিয়ে বলে, ডেটাবেসের সঙ্গে তথ্য তুলনা করতে তারা অপারগ (ওই মামলাটিতেও অকুস্থল থেকে প্রাপ্ত ফিঙ্গারপ্রিন্টের সঙ্গে আধারতথ্য মিলিয়ে দেখতে চাওয়া হয়েছিল)।
UIDAI-এর ডেটাবেস সফটওয়্যারের ক্ষমতা কতটা, এই কাজটা কী করা সম্ভব, সে ব্যাপারে তাদের জানাতে বলে উচ্চ আদালত। মানে, অপরাধস্থল থেকে যা পেয়েছে সিবিআই তার সঙ্গে কি আধারতথ্য মিলিয়ে দেখা সম্ভব কি না, জানতে চাওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয় ২০১৪ সালের ২৪ মার্চ। সুপ্রিম কোর্টে আধার আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেও মামলা হয়েছিল। ২০১৮-র সেপ্টেম্বর, সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ আধার আইনের পক্ষেই রায় দেয়। বলে এই আইন সাংবিধানিক। সিবিআইকে আধারতথ্য দেওয়ার জন্য UIDAI-কে যে নির্দেশ দিয়েছিল জেলাশাসকের আদালত, তা খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলে এই নির্দেশে আধার আইনের ৩৩ নম্বর ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে।