ভারতের মুখে হাসি ফুটিয়েছে মুডি'স রেটিং সংস্থা। যখন কোভিডের কালো ছায়া দেশে ছড়ানো, তখন এই রেটিং সংস্থা ভারতকে নেগেটিভ থেকে নিয়ে গিয়েছে স্টেবল-এ। মানে, নেতিবাচক থেকে করে দিয়েছে স্থিতিশীল। গত বছর মুডি'স ভারতের সার্বভৌম রেটিং বিএএ-২ থেকে বিএএ-৩ করে দিয়েছিল। বিনিয়োগের বিচারে যা সর্বনিম্ন। বলেছিল, নীতি রূপায়ণে সমস্যা, এবং অর্থনৈতিক অবনমন-- এসবই এই সর্বনিম্নে পৌঁছানোর কারণ।
কী ভাবে ভারত এক ধাপ উঠল রেটিংয়ে?
ক্যাপিটালের শক্তি বেড়েছে, দেশে নগদের পরিমাণও বেড়েছে, ব্যাঙ্ক এবং নন-ব্যাঙ্কিং অর্থনৈতিক সংস্থাগুলির ঝুঁকি কমেছে। তাই এই উন্নতি হয়েছে বলেই জানাচ্ছে মুডি'স। তারা মনে করছে, আগামী কিছু বছরে রাজস্ব ঘাটতি কমবে, যা এ দেশের ক্রেডিট প্রোফাইলকে তলানোর হাত থেকে রক্ষা করবে। যদিও এখনও ঋণের বিপুল বোঝা রয়েছে ভারতের ঘাড়ে, রয়েছে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্বল অবস্থান। মুডি'স বলেছে, 'পুরনো জর্জরিত সম্পদ, যা আসলে দায়, ব্যাঙ্কগুলি তা-ই ঝেড়ে ফেলার পথে পদক্ষেপ করেছে, ধীরে ধীরে এটা হচ্ছে। এর সঙ্গে ব্যাঙ্কগুলির মূলধনী হালও শুধরেছে। এতে ঋণ নেওয়ার ক্ষমতাও বেড়েছে, যা অর্থনীতির চাকা ঘোরাচ্ছে।' এবং রেটিং ওঠাচ্ছে।
কী ভাবে ব্যাঙ্কের ক্ষমতা বাড়ছে?
গত ছ'টি অর্থ বছরে ব্যাঙ্ক বিপুল পরিমাণে অনাদায়ী ঋণ উদ্ধার করেছে। পরিমাণটা মোটামুটি ৫.০১ লক্ষ কোটি। এটাই ঘুরে দাঁড়ানোর একটা বড় কারণ। সরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে ঢালা হয়েছে ৩.০৬ লক্ষ কোটি টাকা। সরকার এ কাজ করেছে ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষের মধ্যে। বেশ কিছু সংস্কারের পদক্ষেপ করা হয়েছে, যা অর্থনৈতিক পক্ষে ভাল বার্তা বয়ে এনেছে।
কী পদক্ষেপ?
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ী ঋণ নিয়ন্ত্রণে একটি সংস্থা তৈরি হয়েছে। নাম, ন্যাশনাল অ্যাসেট রিকনস্ট্রাকশন কোম্পানি বা এনএআরসিএল। এটির ঘোষণা করা হয়েছিল ২০২০-২১-এর বাজেটে। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির যৌথ উদ্যোগ এটি। সম্প্রতি এনএআরসিএল কাজ শুরু করেছে। গত মাসে ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ী ঋণ মোকাবিলায় গ্যারেন্টি হিসেবে সরকার ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে এই সংস্থাকে। এটি ব্যাঙ্কগুলির প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণ ধাপে ধাপে গ্রহণ করবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত ব্যাঙ্কগুলির পক্ষে বিস্তর ভাল হয়েছে, মুডি'সের রেটিংয়েও তার সু-প্রভাব পড়েছে, বলছেন অর্থনীতিবিদদের অনেকেই।
মুডি'স-এর এই মূল্যায়নের আরও কারণ?
২০২০-২১ অর্থবর্ষে ভারতের অর্থনীতির হাল কী ছিল? দেখা গিয়েছে খারাপ সময় পেরিয়ে ভালয় ফেরার পদধ্বনি। জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে ভারতের অর্থনীতি বৃদ্ধির হার ১.৬ শতাংশ। আর্থিক হাল ফেরার স্পষ্ট ছবি এটাই। যদিও গোটা অর্থবর্ষে জিডিপি সংকোচনের হার ছিল ৭.৩ শতাংশ। পূর্বাভাসের থেকে অবশ্য ভাল, কারণ পূর্বাভাস ছিল যে, সংকোচন হতে পারে ৮ শতাংশ। অর্থনীতির চাকা ঘোরাটা শুরু হয়েছিল ২০-২১ অর্থবর্ষের দ্বিতীয় অর্ধ থেকে। কারণ কঠোর লকডাউনের কাল পেরনোর পর হু হু করে এগিয়ে যাওয়া শুরু হয়ে যায়। কেয়ার রেটিংয়ের মতো সংস্থাও এই আশাব্যঞ্জক কথাটা বলছিল আগে। বিশ্লেষকদের অনেকের মত, প্রকৃত জিডিপি বিশ্লেষণে ভারতকে ধরতে পারেনি মুডি'স, ফলে তারা দেশের রেটিংয়ে অবমূল্যায়ন করেছিল। বৃদ্ধির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে ভারতের, অর্থনীতির ট্র্যাকে ফেরার পর তা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট, মুডি'সও সেটা বুঝতে পারছে এখন।
আরও পড়ুন কয়লা-ঘাটতি, তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে নাভিশ্বাস, কেন?
আপগ্রেডেশনের প্রভাব কী?
এর ফলে ভারত সরকার ও কর্পোরেট ক্ষেত্র সুলভে ঋণ পেতে পারবে। গচ্ছিত কম রাখার সম্ভাবনা তৈরি হবে, বিদেশি বিনিয়োগের বাতাস জোরে বইবে, কারণ মুডি'স রেটিং দেখে এ দেশে টাকা ঢালায় অস্বস্তি কাটিয়ে উঠবেন বিদেশি পুঁজিপতিরা। কর্পোরেট বন্ডও মিলবে কম দামে। কোভিড যে ভাবে দেশের অর্থনীতিকে প্রবল রোগগ্রস্ত করে তুলেছিল, কার্যত কোমায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল তাকে। তাতে সরকারের ঘুম ছুটে গিয়েছিল। মুডি'সের মুড ফেরা সেই ঘুম ফিরে আসারই জোরদার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন