জুলাইয়ের ২৭ তারিখ আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডেরাল রিজার্ভ সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে ০.৭৫ শতাংশ বা ৭৫ বেসিস পয়েন্টস। মুদ্রাস্ফীতির গলায় ফাঁসটা কষে বাঁধতে পর পর দুবার ০.৭৫ করে সুদের হার বৃদ্ধি তারা করেছে। যা ঐতিহিসিক। এবং সেপ্টেম্বরে আরও একবার সুদের হার তারা বাড়াবে বলে শোনা যাচ্ছে, সেই বৃদ্ধি হতে পারে ০.৫০ শতাংশ। মুদ্রাস্ফীতি এ দেশেও শিরপীড়ার কারণ। ফলে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ককেও সুদের হার বাড়াতে হচ্ছে, ধাপে ধাপে। মহামারির ধাক্কায় পর্যুদস্ত অর্থনীতির সঙ্গে লড়াইয়ের লক্ষ্যে যে সুদের হার অনেক দিন না বাড়িয়ে তারা এগিয়ে চলছিল, এখন সেই হার বাড়িয়ে যেতে হচ্ছে লাগাতার। এ ছাড়া কী বা করার রয়েছে তাদের! শুক্রবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে ৫০ বেসিস পয়েন্টস বা ০.৫০ শতাংশ। এর ফলে রেপো রেট পৌঁছেছে ৫.৪ শতাংশে। মুদ্রাস্ফীতি রুখতেই এই পদক্ষেপ, আরও একটু স্পষ্ট করে বললে মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে, ফলে এই সুদের হার বৃদ্ধি।
রেপো রেট, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে যে অর্থ ধার দেয়, তার জন্য যে সুদ আরবিআইকে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি দেয়, তার হার। এখন রেপো রেট বাড়লে গাড়ি বাড়ি ইত্যাদি নানা কিছুতে সুদের হার বাড়াবে ব্যাঙ্কগুলি। যেহেতু তাদের আরবিআইকে বেশি সুদ দিতে হচ্ছে ধারের অর্থে, তাই আপনি তাদের থেকে যে ধার নেবেন তার উপরেও তারা বেশি সুদ নেবে। এই যে বেশি সুদ নিচ্ছে, এর ফলে বাজার থেকে বাড়তি অর্থ চলে আসছে ব্যাঙ্কের ঘরে। মুদ্রাস্ফীতিতে এর ফলেই লাগাম দেওয়া যাচ্ছে। আরবিআইয়ের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস এর পাশাপাশি, জিডিপি বৃদ্ধির হার এই অর্থবর্ষে ৭.২ শতাংশই রেখেছেন। ২০২২-২৩-এর মুদ্রাস্ফীতির হার ৬.৭ শতাংশ হবে বলেও জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন রেপো রেট বাড়াল RBI, ব্যাঙ্ক-ঋণে বাড়তি বোঝা
সুদ বৃদ্ধির বিস্তারিত
“মুদ্রাস্ফীতির হার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে, তাই মহামারির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার অর্থনৈতিক নীতি প্রত্যাহারের পথে আরও এগিয়ে মনিটারি পলিসি কমিটি রেপো রেট আরও ৫০ বেসিস পয়েন্টস বাড়িয়েছে।” বলেছেন শক্তিকান্ত। তিনি জানিয়েছেন, “সিপিআই বা কনজিমার প্রাইজ ইনডেক্স অর্থাৎ খুচরো বাজারে মুদ্রাস্ফীতি এপ্রিলে যে জায়গায় উঠে গিয়েছিল, তা থেকে নেমেছে। কিন্তু এখনও লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশ পৌঁছয়নি, আন্তর্জাতিক বাজারের যে অস্থিরতা, তার প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও। টাকার উপরেও সেই প্রভাব পড়েছে।”
দাম কমার যাত্রাটা শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে। তার প্রভাব স্বাভাবিক ভাবেই পড়েছে এ দেশেও। কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলের গম ফের আসছে, এটাও এই মূল্যহ্রাসের একটা কারণ। এখন যদি বর্ষা স্বাভাবিক থাকে, এবং অপরিশোধিত তেলের দাম বাকি বছর ব্যারেল পিছু ১০৫ ডলার থাকে, তা হলে গোটা ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে মনে করছে আরবিআই। এবং মুদ্রাস্ফীতির হার ৬.৭ শতাংশ থাকবে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দার মেঘ ঘনিয়ে ওঠার যে জল্পনা চলছে, তা নিয়েও চিন্তার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের মনিটারি কমিটিতে। বুঝিয়ে দিয়েছে আরবিআই। তবে এখন যে মুদ্রাস্ফীতিতে রোখাই তাদের এক নম্বর টার্গেট, এবং সেটাই যে পাখির চোখ, আমেরিকার মতোই। বুঝিয়ে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।