Advertisment

গাঁজা থেকে ওষুধের দুনিয়ায় দুরন্ত অগ্রগতি, কারণটা জানেন কি?

ক্যানাবিসে তৈরি ওষুধের চাহিদা বিশ্ববাজারে কেমন?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

গাঁজা। প্রতীকী ছবি

গাঁজা। লাস্ট ট্রেনে ভেন্ডারে চড়লে যে বস্তুটির গন্ধে চারদিক ম-ম করে। রেললাইনের ধারেও জটলা করে গঞ্জিকা সেবনের ছবিটা খুবই পুরনো। সন্ধে ঘন হলে শহর কলকাতার নীচে যে আরেকটা শহর আছে, তার গলিতে ঝুপ্পুস অন্ধকারে, কিংবা রেমব্রান্ট লাইটে গাঁজায় দম দিতে যদি কাউকে না দেখেন, তা হলে বুঝবেন চোখে চালসে। আমাদের বাড়ি লাগোয়া জমিতে একবার একটি গাঁজাগাছ মাথা চাড়া দিয়েছিল। আমি তখন ছোট, বাবার মুখ থেকে ওইটির নাম শুনেছিলাম প্রথম। বাবা বস্তুটির মাধ্যমে নেশারাজ্যে প্রবেশের সম্পর্কে কিচ্ছুটি বলেনি, বলেছিল তার ওষুধের গুণাগুণ নিয়ে দু'-এক বাক্য।

Advertisment

পরে জানতে পারি-- সিদ্ধি, হাশিস, মারিজুয়ানা… এবং ওষুধবিসুধের রাজ্যে এই মহার্ঘ্য বস্তুটি ক্যানাবিস নামে বিখ্যাত। সে বাজারে গিয়ে কানা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেও ক্যানাবিস দেখিয়ে দেবে, 'ওই তো, ওই তো' বলে-- খোঁড়া বাদশাকে বললেও, টগবগিয়ে এক দৌড়ে পৌঁছে যাবে যথাস্থানে। আপাতত, এই গাঁজা মানে মারিজুয়ানা থুড়ি ওই ক্যানাবিসের দৌরাত্ম্য মানে মহত্ম আরও বাড়ছে ওষুধের বাজারে। বিশেষ করে ভারতের বিচারে। আমাদের ওষুধপ্রস্তুতকারক বড় সংস্থা ডক্টর রেড্ডি’স ল্যাবরেটরিস জানিয়ে দিয়েছে, তারা জার্মান সংস্থা নিম্বাস হেলথকে কিনে নিচ্ছে। নিম্বাস হল ক্যানাবিস নির্ভর ওষুধ তৈরিতে একটি হেভিওয়েট সংস্থা।

ডক্টর রেড্ডি'সের কী পরিকল্পনা এর পিছনে?

সংস্থাটি জানিয়েছে, নিম্বাস হেলথের মাধ্যমে ক্যানাবিসে তৈরি ওষুধকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরও তাৎপর্যের জায়গায় নিয়ে যাবে তারা। নিম্বাস হেলথের নাম বদল হচ্ছে না কোনও ভাবে, ওই নামেই এই সংস্থাটি ডক্টর রেড্ডি'সের সাবসিডিয়ারি বা অধিনস্থ সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। দুই সংস্থা এখনও তাদের এই সংক্রান্ত চুক্তির টার্ম অ্যান্ড কন্ডিশনের বিস্তারিত জানায়নি। তবে রেড্ডি'সের তরফে জানা গিয়েছে, তারা এই ক্রয়ে অর্থের ব্যাপারে কোনও কার্পণ্য করেনি। ব্যথাবেদনা, স্নায়ুর ওসুখে ক্যানাবিসে তৈরি ওষুধের ব্যবহার বাড়ছে। এ নিয়ে প্রচুর গবেষণাও হয়েছে, হচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এর ব্যবহার বাড়ানোর অনেক সুযোগ রয়েছে বলে তাঁদের বিশ্বাস, বলছেন ডক্টর রেড্ডি'সের ইউরোপিয়ান জেনেরিক্সের প্রধান প্যাট্রিক আগহানিয়ান।

ক্যানাবিসে তৈরি ওষুধের চাহিদা বিশ্ববাজারে কেমন?

ডক্টর রেড্ডি'স বলছে, গত কয়েক বছরে মেডিক্যাল কেনাবিসের চাহিদা জার্মানিতে অনেক বেড়ে গিয়েছে। কারণটা হল সেখানে এ সম্পর্কে ২০১৭ সালে তৈরি করা আইন। সংস্থাটি জানাচ্ছে, ২০২০ -র তুলনায় ২০২১ সালে এর ব্যবহার বেড়েছে ২৫ শতাংশ। কম্পাউন্ড অ্যানুয়াল গ্রোথ রেট বা CAGR অনুযায়ী বৃদ্ধি হয়েছে ২০১৭-র তুলনায় ৫৫ শতাংশ। এর ফলে এই জাতীয় ওষুধের বাজারে ইউরোপের এক নম্বর এখন জার্মানি। আন্তর্জাতিক ভাবে এই ক্যানাবিস ওষুধের বাজার ২০২৫ সালের শেষে ১৪৬.৪ বিলিয়নে পৌঁছবে বলে অনুমান। ResearchAndMarkets.com-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০-এর মধ্যে ক্যানাবিস ওষুধের মার্কেট ১৭৬ বিলিয়নে পৌঁছবে। কারণ, বেশ কয়েকটি দেশ এটি বৈধ করার পথে আইন আনার চিন্তাভাবনা করতে শুরু করে দিয়েছে।

কী ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে?

বেশ কয়েকটি দেশ ক্যানাবিসের পথে বাধা হটাতে আইনের পথে হাঁটলেও, এর ব্যবহারে এখনও একাংশ কিন্তু নাক উঁচু করে বসে। কারণ, এতে তৈরি ওষুধের যে পরীক্ষামূলক ব্যবহার চলছে, সেইটি তাদের কাছে ভরসাযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি। কয়েকটি সংস্থার পরীক্ষামূলক ওষুধই তাদের চিন্তায় রেখে দিয়েছে। যদিও বড় বড় ওষুধ সংস্থাগুলি মাঠে নেমে পড়েছে এখন। বিরাট অঙ্কের অর্থের খেলাটা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, বেঁকে থাকা-দের সোজা পথে আসতে বেশি সময় লাগবে না।

আরও পড়ুন কত বার ব্যবহার করা যায় N95 মাস্ক, জানেন কি?

ভারতে ক্যানাবিসের কী অবস্থা?

ভারতে ক্যানাবিস এখনও গাঁজার ধোঁয়ার অন্ধকারে অনেকটাই। এখানে এখনও মূলত বিষ। নার্কোটিক্স ড্রাগ অ্যান্ড সাইকোট্রোপিক (NDPS) আইন ১৯৮৫ অনুযায়ী এখানে ক্যানাবিস থুড়ি গাঁজা খাওয়া ও বিক্রিবাটা নিষিদ্ধ। মেডিক্যাল-কাজে এর ব্যবহার করা হোক, এই দাবি বেশ কয়েক বছর ধরে ঘুরছে। জোরাল হচ্ছে। এই জানুয়ারিতে সরকার দিল্লি হাইকোর্টে জানিয়েছে, ভারতে গাঁজা পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়। বৈজ্ঞানিক কাজে ও ওষুধ তৈরির জন্য এর ব্যবহার করা যায়, তবে তার জন্য রাজ্য সরকারের প্রয়োজনীয় অনুমতি নিতে হয়। ২০১৮ সালে উত্তরাখণ্ড গাঁজাগাছ চাষের জন্য প্রথম অনুমতি দিয়েছিল। তার পর মধ্যপ্রদেশও সেই পথে হাঁটে।

যার নাম গাঁজা, তিনিই ক্যানাবিস। যার নাম বিষ তিনিই ওষুধ। আপনি ওষধির সঙ্গে থাকবেন না কি নেশায় নয়ন বুজে হারিয়ে যাবেন ঘুরঘুটিয়া রাতে, সেটা আপনাকে ঠিক করতে হবে।

Cannabis Explained
Advertisment