Advertisment

কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোয়া সফর?

মমতার এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণতূর্য।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Tmc supremo Mamata Banerjee is overwhelmed by the success of the party in the coroporation election

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতার এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণতূর্য। বাঁশের বাঁশরীটা বাজাচ্ছেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। রণতূর্যটি বিজেপির বিরুদ্ধে। গোয়ায় গিয়ে মমতা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কী বললেন? 'কংগ্রেসের জন্যই বিজেপি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।' আগামী লোকসভা ভোটে যখন বিজেপিকে কোণঠাসা করতে বিরোধী জোটের জোর সলতে পাকানো চলছে, তখন গোয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য কী বার্তা দেবে? সেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisment

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অনেকের মত, রাজনীতির স্বার্থরক্ষায় সামনেটাই মূল লক্ষ্য, সেটাই অতি জরুরি হয়ে যায়। কাছের নজরটা প্রখর হওয়ার দরকার হয়ে পড়ে। দূরবিনটাকে নামিয়ে রাখতে হয়। এ অবশ্য নিখাদ তাত্ত্বিক বিষয় একটা। একটা গ্রাম্ভারি উদাহরণও এ নিয়ে দেওয়া যেতে পারে। গান্ধিজি অস্পৃশ্যতাকে ঘৃণা করতেন। ১৯৩৪ সালে বিহারে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর গান্ধিজি বলেছিলেন, 'আমার মতো একজন এটা বিশ্বাস করতে বাধ্য যে, এই ভূমিকম্প পাপের শাস্তি হিসেবে ভগবানের অভিশাপ। বিহারের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে অভিযানের মধ্যে প্রগাঢ় সম্বন্ধ রয়েছে।'

অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গান্ধিজি অবৈজ্ঞানিক ভাবে ভূমিকম্পকে অস্ত্র করেছিলেন। রাজনীতির স্বার্থে করেছিলেন। যার তীব্র সমালোচনা করেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথও অস্পৃশ্যতাকে গান্ধিজির চেয়ে কোনও অংশে কম ঘৃণা করতেন না। কিন্তু গান্ধিজির সমালোচনায় তাঁর ছিল কবির সততা। রাজনীতির সঙ্গে যার দুস্তর গ্যাপ। যা হোক এখন বলতেই হচ্ছে, আসন্ন গোয়া সহ রাজ্যগুলির ভোট তৃণমূলের কাছে বেশি জরুরি। বিজেপি বিরোধী লক্ষ্যে সততার পথে হাঁটলে কংগ্রেসকে আক্রমণ করা যায় না, কিন্তু গোয়া জিততে গেলে সেটা করলে চলবে না মোটেই।

রাজনৈতিক মহলে অনেকেই বলছেন: সবটা নিকট কিংবা দূরের নিরিখে বিচার করা যায় না, বা মোটেই তা উচিত নয়। কারণ, গোয়ায় তৃণমূলের ফল ভাল হলে বিরোধী জোটে তাদের প্রভাব বাড়বেই। কংগ্রেসকে নিয়ে যদি শেষ পর্যন্ত বিরোধী জোট হয়, তা হলেও মমতার কথার ওজন এই ফল বাড়াবে। তাঁরা বলছেন, রাজনীতিটা হল কৌশলের। যে কৌশল-পরিধির বইরে কোনও ব্যক্তি বা দল নেই, থাকতে পারে না, কখনওই তা ছিল না।

নতুন ভোরের ডাক

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিন দিনের গোয়া সফর। আগামী বছরে সেখানে নির্বাচন হতে চলেছে। তারই প্রচারে তৃণমূলের ঢাকে তিনি বোল তুললেন। বিজেপির মরিয়া চেষ্টা সত্ত্বেও এ রাজ্যে তাদের হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে ফুটন্ত তৃণমূল এখন এই ভাবে জাতীয় স্বপ্নে। ২০২২-এর গোয়া ভোটের প্রচারকে তৃণমূল নাম দিয়েছে-- গোয়ায় নতুন সকাল। ডেরেক ও' ব্রায়েন, বাবুল সুপ্রিয়, সৌগত রায়ের মতো নেতারাও নতুন সকালের লক্ষ্যে নেমে পড়েছেন। জুনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। তৃণমূলকে রাজ্যের গন্ডি থেকে বার করে জাতীয় স্তরে ছড়ানোর দায়িত্ব রয়েছে তাঁর কাধে। সেই মতো পরিকল্পনাও হয়েছে। কোন কোন রাজ্যে তৃণমূল বিস্তার লাভ করতে পারে তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। ত্রিপুরা ছাড়াও অসম, মেঘালয়, উত্তর প্রদেশে টিএমসি ডানা মেলতে চাইছে, সে পথেই একটি স্টেশন গোয়া। বিশেষ করে ছোট রাজ্যগুলিতে এই জন্য নজর যে, সেখানে সংগঠন গড়ে তুলতে তুলনায় অনেক কম শ্রম দিতে হবে। গোয়ায় ৪০টি বিধানসভা আসন, সেখানে নিজেদের উপস্থিতি বোঝানো সহজ।

বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে লড়াই

লড়াইয়ের এই ময়দানে মোটামুটি বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি রয়েছে। বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিতে যে ভাবে তৃণমূল নিজেকে প্যান-ইন্ডিয়া বিজেপি-বিরোধী প্রধান মুখ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে, এটাই তার আদর্শ সময়। যা তাদের লোকসভার স্বপ্নকে স্বার্থক করে তুলতে সাহায্য করবে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সভায় সম্প্রতি বলেওছেন, একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারেন। তাঁর কথায়, 'মানুষ এখন বলছেন, দেশ কা নেতা ক্যায়সা হো, মমতা ব্যানার্জি য্যায়সা হো।'

গোয়া এবং অন্যান্য রাজ্য হয়ে দিল্লি চলো

ফলে তৃণমূলের পরিকল্পনা খুবই সহজ ও স্পষ্ট, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জাতীয় নেত্রী হিসেবে তুলে ধরা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মমতাই যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য মুখ, সেইটি প্রতিষ্ঠা করা। বাংলা লাগোয়া ত্রিপুরায় সবচেয়ে বেশি নজর দিয়েছে তৃণমূল। গত কয়েক মাস ধরেই সে রাজ্যে শিরোনামে তৃণমূল। সেখানে শাসক দল বিজেপি তৃণমূলের অগ্রগতির পথে বাধা তৈরি করছে, যা অনৈতিক, এই বার্তা তারা ইতিমধ্যেই ত্রিপুরা তো বটেই অন্যত্রও ছড়াতে পেরেছে বলে অনেকেই মনে করছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই অভিযানে বিজেপি-কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আসছেনও হেভিওয়েটরা। যেমন কংগ্রেস থেকে সুস্মিতা দেব, বিজেপির দু'বারের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলভুক্ত। আবার গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরো তৃণমূলে। যিনি আবার কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা এই সাতটি রাজ্যে কংগ্রেসের দায়িত্বে ছিলেন।

বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারছে না কংগ্রেস, প্রচারে এটাই তৃণমূলের কৌশলী অবস্থান। মমতা-অভিষেকরা এই অস্ত্রেই শান দিচ্ছেন নিয়ম করে। তৃণমূলের মুখপাত্র 'জাগো বাংলা'য় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, এবং একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই সেই ক্যারিশমা রয়েছে, যিনি বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের লিড করতে পারেন, এটা তুলে ধরেছে জাগো বাংলাও। কংগ্রেসকে তারা গৌণ-শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

কংগ্রেসের শক্তি ঘাসফুলে

গোয়ায় নিজেদের শক্তি প্রমাণে কংগ্রেসের শক্তি নিতে হবে তৃণমূলকে। লুইজিনহো ফেলেইরোর তৃণমূল যোগ নিশ্চিত ভাবেই সেখানে ঘাসফুল ফোটার পথে বড় পদক্ষেপ। লুইজিনহোকে অক্টোবরের ২২ তারিখে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতিও করা হয়েছে। ঘাসফুল নির্দল বিধায়ক প্রসাদ গাঁওকরের সমর্থনও পেয়েছে। গোয়ায় কংগ্রেসের মাত্র চার জন বিধায়ক রয়েছেন। এ রাজ্যে মমতা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল গড়ার পর, গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি কংগ্রেসের আম-আঁটি সব এখানে তৃণমূল নিয়ে নিয়েছে বলা চলে। গোয়ায় কংগ্রেস এক সময় বড় শক্তি ছিল, কিন্তু লাগাতার সেখানে চলছে কংগ্রেসক্ষয়। মমতা চাইতেই পারেন, কংগ্রেসক্ষয়ে বিজেপি না বেড়ে বাড়ুক তৃণমূল। কে বলতে পারে কংগ্রেসের এতে মঙ্গল হবে না? রাজনীতিতে সবই কৌশল, সেখানে কবির সততার মূল্য শূন্য।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

tmc Mamata Banerjee Goa
Advertisment