সিঙ্গল-ইউজ অর্থ্যাৎ এক বার ব্যবহারের উপযোগী প্লাস্টিক। জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে যা নিষিদ্ধ। ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত বছর কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের তরফে একটি গেজেট নোটিফিকেশন প্রকাশ করে এই ঘোষণটি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কী কী নিষেধাজ্ঞার তালিকায়, তাও প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রক বলেছে, ২০২২-এর ১ জুলাই থেকে সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক তৈরি, আমদানি, বণ্টন, বিক্রি ইত্যাদি করা যাবে না । নিষেধাজ্ঞায় থাকছে পলিস্টাইরিনও।
সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক কী?
নাম থেকেই স্পষ্ট বস্তুটা। প্লাস্টিক আইটেম যা কিনা একবার ব্যবহারের পরই মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এই ধরনের প্লাস্টিকই সবচেয়ে বেশি তৈরি এবং ব্যবহার করা হয়। প্যাকেজিংয়ের জন্য এর ব্যবহার করা হয় বিপুল ভাবে। শ্যাম্পু, জিটারজেন্ট, কসমেটিক্স ইত্যাদির প্যাজেজিংয়ে এর ব্যবহার। বোতল তৈরি হয় এ থেকে। পলিথিন ব্যাগ ছাড়া ইদানিং গাদা গাদা মানুষের চলেই না। ফেসমাস্ক, কফিকাপ, খাবারের প্যাকেট এমন হরেক রকমে এই প্লাস্টিকের মহা-মূল্য প্রয়োজন, কার্যত জীবনের অঙ্গ এই প্লাস্টিক। যা সরকার আপাতত খরচের খাতায় পাঠিয়ে দিচ্ছে। দূষণ যে মাথার উপর ঠেলে উঠছে, এটা না করলে চলছিল না আর। সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক নিয়ে গত বছর একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছিল অস্ট্রেলীয় সমাজসেবামূলক সংস্থা মিন্ডেরু ফাউন্ডেশন। সেই সমীক্ষা বলেছে, সারা বিশ্বে সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক মোট প্লাস্টিকের তিন ভাগের এক ভাগ। যার ৯৮ শতাংশই তৈরি হয়ে থাকে ফসিল ফিউয়েল বা জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে, বা বেশির ভাগটাই পোট্রোলিয়াম থেকে। সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক ২০১৯ সালে নষ্ট করা হয়েছিল ১৩০ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এর মধ্যে পোড়ানো হয়েছিল বিরাট অংশ।
এই পথে চললে ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের ৫ থেকে ১০ শতাংশের জন্য সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক দায়ী থাকবে।
এই জাতীয় প্লাস্টিকের যে বর্জ্য তার বিচারে পৃথিবীর ১০০টি দেশের একটি তালিকা করা হয়েছে। তার মধ্যে ভারত, হ্যাঁ এগিয়ে রয়েছে, ৯৪-এ। শীর্ষের তিনটি দেশ হল, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া এবং ওমান। ভারত এই প্লাস্টিক তৈরি করে এক বছরে মোটামুটি ১১.৮ মেট্রিক টন। রফতানি করে ২.৯ মেট্রিক টন এবং ভারতের প্লাস্টিক বর্জ্য হল ৫.৬ মেট্রিক টন। এবং জন প্রতি এই উৎপাদন দাঁড়াচ্ছে ৪ কেজি। মানে হল গিয়ে আপনার কিংবা আমার মাথায় ৪ কেজির প্লাস্টিকের ভার রয়েছে।
কী কী নিষেধাজ্ঞার তালিকায়
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড যে প্লাস্টিক নিষেধাজ্ঞার তালিকা করেছে, তাতে রয়েছে, ইয়ারবাড, বেলুন স্টিক, ক্যান্ডি এবং আইসক্রিম স্টিক, প্লেট, কাপ, গ্লাস, কাঁটা চামচ, চামচ, ছুরি, ট্রে, মিষ্টির বাক্স, আমন্ত্রণপত্র, সিগারেটের প্যাকেট, পিভিসি ব্যানার (১০০ মাইক্রনের নীচে) এবং সাজানোর জন্য বহুল ব্যবহৃত পলিস্টাইরিন।
ইতিমধ্যেই মন্ত্রকের তরফে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেওয়া হয়েছে পলিস্টাইরিনের ব্যাগে, যা ৭৫ মাইক্রনের কম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার আগে ৫০ মাইক্রনের ব্যাগ নিষিদ্ধ ছিল। আসছে ডিসেম্বর থেকে এই পলিস্টাইরিনের পারদ আরও বাড়বে। এবার যা ১২০ মাইক্রনের নীচে, তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্মাণকারীরা এ ক্ষেত্রে একটু সমস্যায় পড়বেন। কারণ, যে মেশিনে ৫০ মাইক্রনের ব্যাগ তৈরি করা যায়, তাতেই ৭৫ মাইক্রনের ব্যাগ বানানো সম্ভব। কিন্তু ১২০ মাইক্রনের জন্য মেশিন আপডেট করতে হবে। ২০১৬-র প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, গুটখা, তামাক, পান মশলার জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিকের শ্যসে পুরোপুরি নিষিদ্ধ।