Advertisment

চিনের প্রেসিডেন্টকে না চটাতেই কি নাম হল ওমিক্রন? নেপথ্য কাহিনি কী?

ওমিক্রনের ভাগ্য কেন ভাল? দাপিয়ে বেড়ানো ভ্যারিয়েন্টের কটা ভাগ?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Covid-19 variant B.1.1.529

বিজ্ঞানীদের অনেকে বলছেন, B.1.1.529 বেশি সাহসী, তেজস্বী হওয়ার আশঙ্কা

একেই বলে দুর্ভাগ্য। কার বদলে কে পেল নামের মহিমা। নাহ, যতই বলুন না কেন গোলাপকে যে নামেই ডাকো না কেন সে গোলাপই, তাতে চিঁড়ে ভিজবে না। নি বা নিউ কিংবা সি বা জাই-এর চোখের জল তাতে আটকানো যাচ্ছেই না। সারা পৃথিবী যে ভাইরাসের ভয়ে থরহরি কম্পমান, তার নাম হওয়ার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হওয়া-- কেমন করে মানা যাবে! সৌভাগ্যটা ঠিক কানের সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেল যে! গিয়ে তা ওমিক্রনের ঝুলিতে পড়ে গেল। তাই মুখে মুখে এখন ওমিক্রন ওমিক্রন…।

Advertisment

শি জিনপিংয়ের চেয়েও বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে। হ্যাঁ, এই শি জিনপিং, ভালই হল তাঁর নামটা এসে গেল। জাই-এর নামভাগ্য তাঁর জন্যই অন্ধকারে চলে গিয়েছে। আর নি বা নিউটা গিয়েছে 'নতুন'-এর খপ্পরে পড়ে। না না, নতুন দাদা কিংবা নতুন বৌঠান এসব কিছু নয়, কিংবা নুভেল ভাগ বা নিউ ওয়েভ (চলচ্চিত্র আন্দোলন) ও সবকেও ভাগিয়ে দিতে পারেন। তা হলে? জটজটিল লাগছে কি না? জটিলতার কিচ্ছুটি নেই, জলের মতো সহজ। করোনার যে নবভাইরাসটি বাজার গরম করছে, গ্রিক বর্ণমালা অনুযায়ী তার নাম হওয়ার কথা ছিল নি বা নিউ (nu)।

গ্রিক বর্ণমালা মেনে নামকরণের পদ্ধতি স্থির করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যাতে যে দেশে স্ট্রেনটা প্রথম মিলল, ভাইরাসের সঙ্গে সেই দেশের নাম জড়ানো বন্ধ করা যায়। যেমন এখন যাকে ডেল্টা বলা হয়, সেটিকে ভারতীয় স্ট্রেন বলে বলে পচিয়ে ফেলা হয়েছিল। ভারত-নামে ভাইরাসের ছায়া পড়ছিল। গ্রিক বর্ণের চতুর্থ ডেল্টা এ থেকে মুক্তি দিয়েছে। আবার, ব্রিটেন স্ট্রেন বলা হচ্ছিল যাকে, সে পেয়েছে গ্রিক বর্ণমালার প্রথমটি মানে আলফা-কে। এই ক্রম অনুযায়ী চলতে থাকলে গ্রিক বর্ণমালার ১৩ তম বর্ণ-- নি বা নিউ (nu)-এর দান আসে। কিন্তু নিউ মানে নতুন, এমনিতেই সার্স কোভ-টু-কে নোভেল করোনাভাইরাস বা নতুন করোনা বলা হয়। এখন দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন স্ট্রেনকে যদি নিউ নাম দেওয়া হয়, সব গুলিয়ে যাবে। তাই বাদ ১৩ তম বর্ণ।

এই বার আসছে ১৪-- সি বা জাই (xi)-এর দান। যদিও উচ্চারণ সি বা জি বা জাই- কিন্তু ইংরেজিতে লিখতে হলে তো xi লিখতে হবে। না, আমাদের চেয়্যারম্যান তিনি না হলেও, চিনের চেয়্যারম্যান থুড়ি প্রেসিডেন্ট তো শি জিনপিং, শি বানান তো ইংরাজিতে ওই xi-ই লিখতে হয়, দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রেসিডেন্টের নামের সঙ্গে ভাইরাসের নাম মেলানো যায় না, যেতে পারে না। ভুল করে যদি হু এটা করে ফেলত, তা হলে ধড় থেকে মুন্ডুটা কুচ করে কাটা পড়ে যেত। তা এই দু'জনের পর কে-- ওমিক্রন। গ্রিক বর্ণমালার পঞ্চদশ। ওমিক্রনের ভাগ্যটি ফুলে ভরে গেল। বি. ১. ১. ৫২৯ (B.1.1.529)। করোনার এই স্ট্রেন তাকে পেল। বোঝাই যাচ্ছে হু-র হুজ-হু-রা অনেক ভেবেচিন্তেই এই নামটি দিয়েছেন।

ভ্যারিয়েন্ট ভাগ

এখানে বলি সার্স কোভ-টুয়ের যে সব স্ট্রেন আসে, তাদের গঠনের ভিত্তিতে প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা হয়। ভ্যারিয়েন্ট অফ ইন্টারেস্ট ও ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন। স্ট্রেন খুব মারাত্মক হলে ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন, ওমিক্রন যে স্তরে। তুলনায় কম ক্ষতিকরকে রাখা হচ্ছে ভ্যারিয়েন্ট অফ ইন্টারেস্টের মধ্যে।

আবার আমেরিকার সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা সিডিসি বা সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন আরও দুটি ভাগ বাড়িয়েছে। ভ্যারিয়েন্টস বিয়িং মনিটর্ড-- মার্কিন মুলুকে যে সব ভ্যারিয়েন্ট ঘুরছে, সবগুলিই এর মধ্যে থাকছে এবং ভ্যারিয়েন্ট অফ হাই কনসিকোয়েন্স-- নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে, যে ভ্যারিয়েন্ট অত্যন্ত মারাত্মক মানে কনসার্নের উপর, তার স্থান এতে।

আরও পড়ুন করোনাজয়ীদেরও ধরতে পারে Omicron, কী ভাবে? বাঁচার পথ আছে?

হু-র হিসেবে এখন ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন কোনগুলো?

ওমিক্রন (B.1.1.529): মিলেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়, গত মাসে

ডেল্টা (B.1.617.2): ২০২০-তে এটি চিহ্নিত ভারতে

গামা (P.1): ২০২০-র শেষে ব্রাজিলে আবির্ভাব

বেটা (B.1.351) : দক্ষিণ আফ্রিকায় এরও খোঁজ, ২০২০-র শুরুতে

আলফা (B.1.1.7) : ব্রিটেনে ছড়াল ২০২০-র শেষে

ভ্যারিয়েন্ট অফ ইন্টারেস্ট

মিউ বা মি (Mu) (B.1.621): কলোম্বিয়াতে, ২০২১-এর শুরুতে

লাম্বডা (C.37), উৎপত্তি পেরুতে, ২০২০-র শেষে

এর পরেও আরও কত সদস্য বাড়বে কে জানে। করোনার শত পুষ্পের বিকাশ, আর মানুষের নাভিশ্বাসে কবে যবনিকা পড়বে কেউ জানে না!

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Omicron Xi Jinping
Advertisment