Advertisment

Explained: বার বার আল-আকসা মসজিদে রক্তপাত, নয়া অশান্তির দামামা, জানেন কী ভাবে?

আল-আকসা-কে জেরুজালেমের সবচেয়ে পবিত্র মসজিদ হিসেব মনে করা হয়।

author-image
Subhamay Mandal
New Update
Al-Aqsa Mosque

আল-আকসা-কে জেরুজালেমের সবচেয়ে পবিত্র মসজিদ হিসেব মনে করা হয়।

জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ। প্রাচীনতার ঝলকানি যেখানে। পবিত্রতার উষ্ণতা। কিন্তু রবিবার আবারও এই মসজিদ প্রাঙ্গণ রক্তে ভিজে গেল। যেখানে তাঁর প্রার্থনার গুঞ্জরণ, সেখানে সংঘর্ষ, হ্যাঁ, আবারও। জনা ২০ প্যালেস্তিনীয় তাতে আহত হলেন। এই ঘটনাটি ঘটল শুক্রবারের সংঘর্ষের জেরে। এই মসজিদ চত্বরে শুক্রবার ইজরায়েলি পুলিশের সঙ্গে প্যালেস্তিনীয়দের তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা এখন নয়া আগুনের জন্ম দিয়েছে। যে সংঘর্ষে ১৫২ জন প্যালেস্তিনীয় আহত হন।

Advertisment

ইহুদিদের উৎসব পাসোভের, ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে, চলবে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত এবং রমজান পালন, শুরু হয়েছে এপ্রিলের ২ তারিখ থেকে, চলবে ২ মে পর্যন্ত। এক সঙ্গে এই দুই পালনের পর্বই চলছে এখন। পুলিশকে বেশ নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে এতে। এই সংঘর্ষেও তার ছাপ পড়েছে। ইজরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার পাথর, পটকা, আরও নানা কিছু ছোড়া হয় তাদের লক্ষ করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। এই ঘটনার পর, সোমবার গাজা স্ট্রিপ থেকে ইজরায়েলে হামলা চালানো হয়, এবং তার পর গাজায় ইজরায়েলি যুদ্ধবিমান বোমা বর্ষণ করেছে। ইজরায়েল দাবি করেছে, হামাসের বেআইনি অস্ত্র তৈরির কারখানা ভাঙতেই নাকি এই হামলা।

প্যালেস্তিনীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, এতে কারওর মৃত্যু হয়নি। আল-আকসা মসজিদে সীমারেখা লঙ্ঘনে, ইজয়েলি সেনাকে ভারি মাসুল চোকাতে হবে, হুঁশিয়ারি দিয়েছে হামাস। আল-আকসায় সংঘর্ষ নিয়ে, ইজরায়েল ও প্যালেস্তিনীয়রা একে অপরের দিকে আঙুল তুলেছে। আল জাজিরার খবর অনুযায়ী, প্যালেস্তিনীয়দের অভিযোগ, ইজরায়েল সেনা রমজান মাসে এই মসজিদের জবরদখল করে সমস্যা ডেকে এনেছে। ইজরায়েল বলছে, প্যালেস্তিনীয় বিক্ষোভকারীরা মুসলমানদের নমাজ ভঙ্গ করতে চেয়েছিল। পাসোভের উদযাপনে ইহুদিদের বাধা দেওয়াও ছিল উদ্দেশ্য।

কী ঘটনা ঘটেছিল?

আল জাজিরা আল-আকসা মসজিদের কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ইজরায়েলি পুলিশ শুক্রবার ভোরে মসজিদে ঢুকছিল। বিবিসি-র রিপোর্ট অনুযায়ী, পুলিশের বয়ান: জঙ্গি সংগঠন হামাসের পতাকা হাতে এক দল প্যালেস্তিনীয় ভোর চারটে নাগাদ মসজিদের কমপাউন্ডে মার্চ করছিল, এর পরই পাথর এবং বোমা-পটকা ছোড়া শুরু হয়। ইজরায়েল পুলিশ নমাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল বলে দাবি করা হয়েছে, এবং তার পর মসজিদ চত্বরে ঢুকে দাঙ্গাকারীদের ছত্রভঙ্গ করেছে।

অন-লাইনে সংঘর্ষের ভিডিও দ্রুত বেগে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ইজরায়েলি পুলিশ এবং সে দেশের বিদেশমন্ত্রী মসজিদের ভিতরে বোমা-পটকা ফাটানোর দৃশ্য টুইট করেন। যারা এই কাজটি করছে, দেখা গিয়েছে তারা মুখোশাবৃত। ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে পুলিশের দিকে পাথর ছোড়া হচ্ছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

আল-আকসা-কে জেরুজালেমের সবচেয়ে পবিত্র মসজিদ হিসেব মনে করা হয়। কিন্তু এই মসজিদ চত্বরে প্যালেস্তিনীয় এবং ইজরায়েলি বাহিনী ও ইজরায়েলি কট্টরপন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে গত কয়েক দশকে। প্যালেন্তিনীয়দের অনেকেরই বিশ্বাস করেন, এই মসজিদ তাঁদের প্রতিরোধের প্রতীক। তাঁদের সংস্কৃতি এবং জাতীয়তাবাদেরও প্রতীক। আসুন আরেকটু গভীরে যাই।

জেরুজালেমের পুরনো শহর বা ওল্ড সিটি, যা কিনা আধুনিক জেরুজালেমের ভিতর দেওয়াল ঘেরা একটা অঞ্চল। আয়তন ০.৯ বর্গ কিলোমিটার। এরই মধ্যে রয়েছে টেম্পল মাউন্ট বা হারাম আল-শরিফ। অতি প্রাচীন এই ধর্মীয় ক্ষেত্র । ইহুদি, খ্রিষ্ট এবং ইসলাম ধর্মের ত্রিবেণী সঙ্গম। টেম্পল মাউন্টও দেওয়াল ঘেরা। ডোম অফ দ্য় রক উত্তর দিকে এবং আল-আকসা মসজিদ দক্ষিণে।

এখানে একটু বলে নিতে হবে কয়েকটা কথা। সেই কথা, ইসরা-র। হজরত মহম্মদের এক রাত্রিকালীন সফরকে ইসরা বলা হয়। সেই সফর তিনি করেন, মক্কা থেকে জেরুজালেমে, এক রাত্রে। এমনই বিশ্বাস। যা তাঁর স্বর্গের দিকে যাত্রাও। অনেকে বলেন, এই যাত্রা পয়গম্বর মহম্মদের ঘুমের মধ্যে, আসল সফর নয় (সূত্র: ব্রিটানিকা)। যদিও অনেকেরই বিশ্বাস, এই যাত্রা বাস্তবিক এবং অলৌকিক। বলা হয়ে থাকে, এই যাত্রা হজরত করেছিলেন পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় চেপে, যার নাম-- বুরাক। সঙ্গে ছিলেন স্বর্গের প্রধান দূত জেব্রাইল বা গ্যাব্রিয়েল। জেরুজালেমে পৌঁছে মহম্মদের সঙ্গে দেখা হয় ইব্রাহিম (আব্রাহাম), মুসা (মোজেস) এবং ইশা (জিশু)-র। দেখাটা হয়েছিল আল-মসজিদ আল-আকসায়। এর পর প্রার্থনায় জমায়েত হওয়া সমস্ত পয়গম্বরের নেত্বত্ব দেন হজরত মহম্মদ। স্বর্গের পথে তার পর ডোম অফ দ্য রক থেকে রওনা দেন তিনি। যে যাত্রাকে বলা হয় মিরাজ (Miʿrāj)।

টেম্পলের দক্ষিণ-পশ্চিমে দিকে রয়েছে দক্ষিণের প্রাচীর। যার দৈর্ঘ্য ৯২২ মিটার। ইহুদিদের পবিত্রতম ক্ষেত্র সেকেন্ড টেম্পলের দক্ষিণ অংশ, এই সেকেন্ড টেম্পলকে হেরড টেম্পলও বলে।

ইহুদি ধর্মে বিশ্বাস, এখানে ঈশ্বর ধুলো জমা করেছিলেন আদমকে তৈরি করার জন্য। বলা হয়, ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বে রাজা সলোমন পাহাড়ের উপর তৈরি করেছিলেন এক প্রার্থনাগৃহ, যার নাম ফার্স্ট টেম্পল বা প্রথম প্রার্থনাগৃহ। ৮৮৬ খ্রিষ্টপূর্বে ব্যাবিলনের রাজা নেবুকান্দেজারের নির্দেশে এটি ভেঙে ফেলা হয়, জেরুজালেম দখল করার পর নেবুকান্দেজার এই ধ্বংসের নির্দেশ দেন। এর পর খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে ইহুদিদের পুনর্জাগরণ হল যেন, এবং তৈরি করা হল আরেকটি প্রার্থনাগৃহ, সেকেন্ড টেম্পল। যা পুড়িয়ে দিয়েছিলেন রোমান জেনারেল টাইটাস, সেটা ৭০ খ্রিস্টপূর্বের ঘটনা।

১৯৬৭ সালের পর, ইজরায়েল এবং আরব জোটের (জর্ডন, সিরিয়া, মিশর) মধ্যে ছ'দিনের সেনা-সংঘাত। সে সময় আল-আকসা মসজিদ জর্ডনের ওয়াকফ মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে। ইজরায়েল যুদ্ধে জিতল, এই মসজিদ এবং উত্তর দিকের অংশ, হারাম আল-শরিফ, চলে গেল ইসলামিক ওয়াকফ ট্রাস্টের হাতে। ইজরায়েলি সরকারের অধীনে স্বায়ত্তশাসনাধীন এই বডি। ফলে ইজরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী মসজিদ-অঞ্চলে পাহারা দেয়। নিজেদের ক্ষমতা তাদের ধরে রাখতে হবে তো!

Al-Aqsa Mosque Jerusalem Palestine Israel
Advertisment