৩৪ বছরের এক দিল্লিবাসী মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত। রবিবার এ খবর হয়েছে। এই আক্রান্ত ব্যক্তি বিদেশে যাননি। ফলে তিনিই এ দেশের প্রথম ব্যক্তি, যাঁর মাঙ্কিপক্স হল বিদেশ থেকে না ফিরে। স্থানীয় ভাবে সংক্রমিত হচ্ছে এ ফলে বানর বসন্ত। এই তালিকায় তিনি প্রথম নাম লেখালেন। এই আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে আসার এক দিন আগেই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা মাঙ্কিপক্স নিয়ে ঝোড়ো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পাপলিক হেলথ ইমার্জেন্সি অফ ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন। পিএইচইআইসি। মাঙ্কিপক্স নিয়ে এমনই সতর্কবাণী হু-র। এটা হল, কোনও রোগ-অসুখ ছড়ানো নিয়ে এটা হল অ্যালার্মের সর্বোচ্চ ধাপ।
পিএইচইআইসি কী?
যখন কোনও অসুখ আন্তর্জাতিক ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, যা একেবারে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি, প্রয়োজন হয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের। তখনই পাপলিক হেলথ ইমার্জেন্সি অফ ইন্টারন্যাশনাল কনসার্নের কথা বলে হু।
হ্যাঁ, সারা পৃথিবীতেই মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ছে। কোভিডের চেয়ে গতি কম হলেও, ছড়াচ্ছে মন্দ নয়। এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে তার বিচরণ দেখা যাচ্ছে। যেখানে আগে কখনও মাঙ্কিপক্সের কোনও চিহ্ন দেখা যায়নি, সেখানেও দেখা যাচ্ছে এই রোগ ডালপালা মেলছে। ৭২টি দেশ থেকে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের খবর এসেছে। জুলাইয়ের ২০ তারিখ পর্যন্ত সংখ্যাটা ১৪,৫৩৩। মে মাসের শুরুতে ৪৭টি দেশে বানর বসন্ত ছড়িয়েছিল, আক্রান্ত সংখ্যা তখন ছিল ৩,০৪০। মৃত্যুসংখ্যাটা একেবারে তলানিতে যদিও। পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তিন জন নাইজেরিয়ার, দু’জন সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাব্লিকের। এখানে অবশ্য আগেও মাঙ্কিপক্স তার দাঁত-নখ বার করেছে, এটাই প্রথম বার নয়।
কোথায় আগেও দেখা গিয়েছে মাঙ্কিপক্স?
মাঙ্কিপক্স কোভিড-নাইন্টিনের মতো কোনও নতুন রোগ নয়। মাঙ্কিপক্সের ইতিহাস এই পৃথিবীতে অনেকটাই পুরনো। প্রথম মাঙ্কিপক্সের মানব দংশনের খোঁজে নামলে চলে যেতে হবে—১৯৭০ সালে। ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোয় তখন একটি ন’ বছরের শিশু আক্রান্ত হয়েছিল এই অসুখে। গ্রামীণ অঞ্চলেই বেশি হত এটি, কারণ সেখানে পশুপ্রাণীর সঙ্গে মানুষের স্পর্শের যোগাযোগ হত বেশি। প্রথমটিও তেমন সংযোগের ফলই ছিল। আফ্রিকার বাইরে প্রথম এই রোগ তার পা রাখে ২০০৩ সালে, মার্কিন মুলুকে ৭০ জনের মাঙ্কিপক্স ধরা পড়ে তখন। এবার যদি জাম্পকাটে চলে আসি ২০২২-এ। বর্তমান সংক্রমণে। দেখা যাচ্ছে, মধ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় সংখ্যাটা বাড়ছিল প্রথমে, তার পর বাইরে ছড়াল, ছড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন Explained: মাঙ্কিপক্সের ভয় বাড়ছে, প্যানিক নয়, কী ভাবে মাঙ্কিপক্স ছড়ায় জানুন
কী জানা গিয়েছে এই অসুখ সম্পর্কে?
মাঙ্কিপক্স নিজে নিজেই সেরে যায়। কিন্তু প্রবল কষ্ট দিয়ে যায়। ফলে একে হালকা ভাবে একেবারেই নেওয়া যাবে না। এর উপসর্গ দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে। ইনকিউবেশন পিরিওড-টা হল (সংক্রমণ থেকে উপসর্গ আসা পর্যন্ত সময়) হল ৭ থেকে ১৪ দিন। এটা ৫ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত ঘোরাফেরা করতে পারে। ব়্যাশ বেরনোর ১ থেকে ২ দিন আগে থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত সমস্ত খোসা ঝড়ে পড়ে যায়, ততক্ষণ এটি ছোঁয়াচে। স্কিনে ব়্যাশ বেরিয়ে আসার পর্বটা শুরু হয় জ্বর আসার দু’দিনের মধ্যে। দেখা যায়, ব়্যাশ বেশির ভাগের মুখে হয়। আবার অনেকের হাতের তালুতে, পায়ের পাতা, গোড়ালিতে ব়্যাশ বেরোয়। চোখের সাদা অংশ, মণি এবং জনন অঙ্গেও ব়্যাশ-এর হামলা দেখা যায়। ত্বকে সংক্রমণের কাল ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত চলে। এই সময়টা খুবই কষ্টকর। প্রথমে ব়্যাশ-এ পরিষ্কার তরল থাকে, তার পর যা পুঁজে পরিণত হয়, তার পর শুকোতে থাকে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশিকা হল, এই সময়টা আলাদা করে রাখতে হবে রোগীকে। এবং চোখে যন্ত্রণা, এর ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্ট, প্রস্রাব কমে যাওয়া, ইত্যাদির দিকেও নজর রাখতে হবে।
কোনও ভ্যাকসিন আছে কি?
স্মলপক্স পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়েছে। এই মাঙ্কিপক্স হল স্মলপক্সের সমগোত্রের অসুখ। স্মলপক্সের ভ্যাক্সিন এই অসুখেও কাজ করে। আমেরিকায়, যেখানে ২,৮০০ জনের মাঙ্কিপক্স হয়েছে, স্মলপক্সের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। প্রাপ্ত বয়স্কদের ভ্যাক্সিন জিনিয়োস (Jynneos) দেওয়া হচ্ছে দু’ডোজ করে। হু বলছে, এই ভ্যাক্সিন নেওয়া থাকলে ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মাঙ্কিপক্স রোখা সম্ভব। আর ওষুধ? উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ নেই।
আরও পড়ুন Explained: মাঙ্কিপক্সের প্রথম হামলা ভারতে, জানেন এই রোগের উপসর্গগুলি কী?
মাঙ্কিপক্স কি যৌনতায় ছড়ায়?
এ ব্যাপারে হু স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। তবে এতে এখন আতসকাচ ফেলে রাখা হয়েছে। কারণ, দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত সমকামী বা উভকামী। নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে লন্ডনে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ৫২৮ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে এর মধ্যে ৯৮ শতাংশই সমকামী বা উভকামী। ৯৫ শতাংশের ক্ষেত্রেই যৌনাচারের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে বলে বলা হয়েছে ওই লেখায়। ৩২ জনের শুক্রাণু পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে তাতে রয়েছে মাঙ্কিপক্সের জীবাণু। তবে, যৌচানারে এই রোগ ছড়ায় কিনা, তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে কেউ আসেননি এখনও।