scorecardresearch

Explained: রাশিয়ার রোখ আরও বাড়াচ্ছে নেটোর শক্তি, কী ভাবে জানেন?

ইউক্রেনের নেটোভুক্তির সম্ভাবনা ঘনিয়ে ওঠাই সে দেশে রাশিয়ার হামলার একটা বড় কারণ।

Explained, Who is a war criminal, and who gets to decide this
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

দু’দিকে খাড়াই পাহাড়, মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে সমুদ্র। চোখ ফেরানো যায় না, সৌন্দর্য এমনই। নরওয়েজীয় খাঁড়ি পর্যটকদের কাছে তীব্র আকর্ষণের। তবে কোনও ভ্রমণ কাহিনি লিখছি না আমরা, লিখতে চলেছি যুদ্ধ-কাহিনির একটি আপডেটের বিশ্লেষণ।

হ্যাঁ, নরওয়েজীয় এই পর্বত-সাগরাঞ্চল মুখরিত হয়ে উঠেছিল গুলি ও মিসাইলের শব্দে। এখানে কোনও যুদ্ধ হচ্ছিল না যদিও। চলছিল মহড়া। এই মহড়া নেটোর। ২৭টি দেশের ৩০ হাজার সেনা অংশ নিয়েছিল। ছিল ২২০টি এয়ারক্রাফট এবং ৫০টি যুদ্ধজাহাজ। এই মহড়ায় অংশ নিয়েছিল ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন। এটাই ড্রিলের নিউজপয়েন্ট। কারণ এই দুই দেশ মোটেই নেটোভুক্ত নয়। তবে কেন অংশ নিল?

মহড়ার পরিকল্পনা অনেক আগে ছিল, তবুও ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের এতে অংশ নেওয়াটা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠল। মহড়ার নাম কোল্ড রেসপন্স ২০২২ বা ঠান্ডা জবাব ২০২২। তীব্র শীত এবং পাহাড়ি অঞ্চলে সামরিক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যা চলেছিল। ধরে নেওয়া হয়, নরওয়ে হামলার মুখে পড়েছে, এবং নেটোভুক্ত সবাই একসঙ্গে তা প্রতিহত করছে। যেমন ভাবে হামলা প্রতিরোধ করার শপথ করে থাকে এই সামরিক জোট।

কিন্তু এই মহড়ায় সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের অংশ নেওয়াটা রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের রক্তচাপ বাড়িয়েছে বইকি। সকলেই জানেন যে, ইউক্রেনের নেটোভুক্তির সম্ভাবনা ঘনিয়ে ওঠাই সে দেশে রাশিয়ার হামলার একটা বড় কারণ। কিন্তু এখন এই দুটি দেশ মানে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে নিয়ে রাশিয়া কী করবে! এদেরকেও হামলা করবে নাকি!

আরও পড়ুন Explained: যুদ্ধের অস্ত্র কি মুদ্রা? পুতিনের মুদ্রা-সিদ্ধান্তে রাশিয়া কতটা ভুগবে?

অনেকেই বলছেন, ইউক্রেনে রুশ হামলা, যার প্রেক্ষিত তৈরি হচ্ছিল অনেক দিন ধরে, আরও অনেক দেশকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঠেলে দিয়েছে, সুরক্ষাসঙ্কটে ফেলে দিয়েছে, ফলে নেটোর সদস্যসংখ্যা আরও বেড়ে যাওয়ার আদর্শ আবহাওয়া তৈরি হয়ে গিয়েছে ইউরোপে।

ফিনল্যান্ডের সীমান্তের ১,৩০০ কিলোমিটার রয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে। ফলে তারা নেটোতে যোগ দিতে এখন দু’হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাওলি নিনিসো নেটোর মহাসচিব ইয়েনস টোলটেনবার্গের কাছে জানতে চেয়েছেন নেটোর সদস্য হতে গেলে পদক্ষেপগুলি কী। যা ফেসবুকে লিখে জানিয়েছেন তিনি, মানে জানিয়ে দিয়েছেন সাধারণ জনগণকে, সারা পৃথিবীকেও। এবং ফিনল্যান্ডের নেতারা নেটোভুক্ত দেশগুলির প্রায় সবার সঙ্গেই কথা বলে ফেলেছেন। এ নিয়ে একটি রিপোর্ট তাঁরা পার্লামেন্টে জমা দেবেন এপ্রিলের মাঝামাঝি। রয়টার্সকে এমনটাই জানিয়েছেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী পেক্কা হাভিস্তো।

সুইডেন, যারা ১৮১৪ সাল থেকে কোনও যুদ্ধই লড়েনি, পরিশ্রুত শান্তি যেখানে, যে দেশ নোবেল পুরস্কারের নিজগৃহ, তারা কিন্তু এই নিয়ে একটু দ্বিধায়। যদিও নেটোর দিকেই ঝুঁকে অনেকটা। সুইডিশ একটি টিভি চ্যানেলের সাম্প্রতিক এক ওপিনিয়ন পোল বা মতামত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যদি ফিনল্যান্ড যোগ দেয় নেটোয় তা হলে ৫৯ শতাংশ সুইডেনবাসীই নেটোভুক্তির পক্ষে।

আরও পড়ুন Explained: যুদ্ধ নয় শান্তির বাণী, রাশিয়ায় ধাক্কা পদত্যাগের, জানেন কেন?

টোলটেনবার্গ মার্চের শুরুতে জানিয়েছিলেন, নেটো ইউক্রেন-যুদ্ধ নিয়ে সমস্ত তথ্য সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে জানিয়ে চলেছে। দুটি দেশ নিয়মিত ভাবে নেটোর বৈঠকেও থাকছে। টোলটেনবার্গ এই দুই দেশের পিঠও চাপড়ে দিয়েছেন। কিন্তু এটাও স্পষ্ট করেছেন, পুরোপুরি নিরাপত্তা কিন্তু নেটোভুক্ত দেশগুলিই পাবে। ফলে নেটোর বাইরে থাকায় এই দুটি দেশ যদি কোনও হামলার মুখে পড়ে তবে তারা নেটোর সুরক্ষা গ্যারান্টি পাচ্ছে না। বা সেই গ্যারান্টি পুরোপুরি থাকছে না, নেটো বদান্যতা করলে অবশ্য আলাদা কথা। কারণ নেটোর সুরক্ষার মোদ্দা কথাটাই হল, নেটোভুক্ত একটি দেশকে হামলা মানে নেটোর সব দেশকে হামলা করা। সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের মোট জনসংখ্যা হল ১ কোটি ৬০ লক্ষ। অনেকেই বলছেন, সিংহ ভাগ মানুষই চাইছেন, যত দ্রুত সম্ভব নিরাপত্তার খাতিরে নেটোয় যোগ দেওয়া হোক।

এখন মস্কো কী করবে?

মস্কোর অবশ্য মহড়াকে পাত্তা না দেওয়ার ভঙ্গি। তবে, এই দুই দেশকে নেটো-যোগের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দিয়েছে। মার্চের ১২ তারিখ রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রক বলেছে, নেটোয় যদি এরা যোগ দেয় তা হলে সামরিক এবং রাজনৈতিক প্রতিফলের জন্য তৈরি থাকতে হবে।

কিন্তু হুমকি বা চমকানোর ফল কী ভাল হয় কখনও। রাশিয়াকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় উঠতে হবে। সময় তখন তাদের হাত থেকে বেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছে অনেক অনেক পিছনে।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Explained news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Explained why putin faces more nato in the arctic after ukraine invasion