ইউক্রেনের খারকিভে রুশ হামলায় নিহত ভারতীয় পড়ুয়া। এই প্রথম ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলায় কোনও ভারতীয়ের মৃত্যু হল। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে নিহত ছাত্রের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। একইসঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে ইউক্রেন ও রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গেও। পুতিন ফৌজের গোলাবর্ষণে পড়ুয়ার মৃত্যুতে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ ভারতের। এদিকে এই মৃত্যু ঘিরে ঘরে বাইরে চাপের মুখে পড়তে হয়েছে মোদী সরকারকে। কেন ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয় পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেল না উঠেছে প্রশ্নও। আসরে নামতে হয়েছে বিদেশ সচিবকে।
গত ৭ দিনের তীব্র আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার পর কিছুটা হলেও স্বস্তির বার্তা পেলেন ভারতীয়রা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে থাকা পড়ুয়াদের সুরক্ষিত ভাবে দেশে ফেরানো নিয়েই এই মূহুর্তে উদ্বিগ্ন ভারত। জটিল পরিস্থিতির মধ্যে তাদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে একটা বড় ধাপ পেরোনো গেল। গতকাল সেই বার্তাই দিলেন বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শৃঙ্গলা
এদিকে খারকিভে রুশ হামলায় নিহত কর্নাটকের বছর ২১’র পড়ুয়ার মৃত্যুর পর ইউক্রেনে থাকা ভারতীয় পড়ুয়ারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে দিল্লি। কিয়েভ ছেড়ে ইতিমধ্যেই সকল ভারতীয় অন্যত্র চলে গেছেন। এমনই দাবি করেছেন বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শৃঙ্গলা। তিনি বলেন, সমস্ত ভারতীয় নাগরিক রাশিয়ান সেনাদের আক্রমণের মুখে ইউক্রেনের রাজধানী শহর কিয়েভ ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি আরও বলেন যে মোট ভারতীয় নাগরিকদের ৬০ শতাংশ ইউক্রেন থেকে নিরাপদে দেশে ফিরে এসেছেন।
বিদেশ মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে কিয়েভে প্রায় ২০ হাজার ভারতীয় পড়ুয়া ছিলেন। প্রথম বার কিয়েভ ছাড়ার নির্দেশের পর সেখান থেকে ১২ হাজার পড়ুয়া কিয়েভ ছেড়েছেন। বিদেশ সচিব শৃঙ্গলা জানিয়েছেন যে বাকি ৪০ শতাংশের মধ্যে প্রায় অর্ধেক খারকিভ, সামি এবং বাকী অর্ধেক হয় ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্তে পৌঁছে গেছেন বা ইউক্রেনের পশ্চিম অংশের দিকে চলে গেছে, যেটিকে নিরাপদ স্থান হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
সেই সঙ্গে তিনি বলেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ইতিমধ্যে ভারতীয় পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে কথা হয়েছে। সেই সঙ্গে আগামী তিনদিনের মধ্যে ইউক্রেন সহ আশেপাশের দেশগুলিতে আটকে থাকা ভারতীয় পড়ুয়াদের উদ্ধারের ব্যাপারে নড়েচড়ে বসেছে মোদী সরকার। আগামী তিনদিনে মোট ২৬ টি বিশেষ বিমানে আটকে থাকা সকল ভারতীয় পড়ুয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে এমনটাই জানিয়েছেন বিদেশ সচিব।
হটাত করেই কিয়েভে ভারতীয় ছাত্রের মৃত্যু পর ইউক্রেনে আটকে থাকা প্রায় ৪ হাজার পড়ুয়ার নিরাপত্তা এখন প্রথম ও প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে দিল্লির কাছে। এদিকে ভারতীয় পড়ুয়ার মৃত্যুর পর বিদেশ সচিব কথা বলেছেন রাশিয়া এবং ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে সেখানেও উঠে এসেছে ভারতীয় পড়ুয়াদের নিরাপত্তার বিষয়। শ্রিংলা বলেন, "আমরা শুধু দিল্লিতে নয়, মস্কো এবং কিয়েভে উভয় দেশের কূটনৈতিক ও সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি আরও জোরালো করেছি।"
যদিও সূত্রের মতে খারকিভের পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক এমন পরিস্থিতিতে সরকারের প্রথম ও প্রধান চ্যালেঞ্জ কীভাবে সেখানে আটকে থাকা ভারতীয়দের উদ্ধার করা যায় সেদিকে লক্ষ্য দেওয়া। যদিও এব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন।
ভারতীয় নাগরিকদের এবং তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। তিনি "সহিংসতা এবং শত্রুতা অবিলম্বে বন্ধ করার" এবং আলোচনার পথ খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, স্লোভাক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গেও এবং ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গেও সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছিলেন যিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে তার সঙ্গে একাধিক বার ফোনে কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের আবেদনও জানানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের কুটনৈতিক কৈশল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তবে ছাত্র মৃত্যু চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে ভারতের কুটনীতিকে। প্রশ্ন উঠেছে কেন ছ'দিনের মাথাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেল না ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয়দের।