Advertisment

পেগাসাসে সুপ্রিম কোর্ট তদন্ত কমিটি গড়ল কেন?

আদালত দেখতে চাইছে পেগাসাসে আদৌ এ দেশের নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছিল কি না?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Pegasus Explained

সুপ্রিম কোর্ট পেগাসাসে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট পেগাসাসে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এ জন্য গড়েছে কমিটি। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আর ভি রবীন্দ্রনকে বসানো হয়েছে তদন্ত কমিটির শীর্ষে। ইজরায়েলি স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে আড়ি পাতার অভিযোগে বিদ্ধ কেন্দ্রীয় সরকার। তদন্ত করে দেখা হবে সেই কাজটি তারা করেছিল কি না।

Advertisment

টার্ম অফ রেফারেন্স

তদন্তের গতিপ্রকৃতির কী হবে, স্থির করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সাতটি টার্ম অফ রেফারেন্সের কথা বলেছে শীর্ষ আদালত। মোটামুটি পেগাসাস নিয়ে কী খুঁজে বার করতে হবে, এ তারই দিকনির্দেশ। কমিটিকে আট সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। টার্ম অফ রেফারেন্সগুলি দেখে নেওয়া যাক।

১. পেগাসাস ব্যবহার করে ভারতীয় নাগরিকদের ফোন এবং অন্যান্য যোগাযোগ-যন্ত্রে থাকা তথ্যে উঁকি মারা বা তথ্য-হাতানো হয়েছিল কি? কথোপকথনে কি আড়ি পাতা হয়েছিল?

২. এই হামলার শিকার যাঁরা, তার বিস্তারিত তথ্য।

৩. ২০১৯ সালে পেগাসাস ব্যবহার করে ভারতীয়দের হোয়্যাটঅ্যাপ হ্যাক করার যে খবর হয়, তা নিয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার?

৪. পেগাসাস কি কেন্দ্রীয় সরকার কিংবা অন্য কোনও রাজ্য সরকারের কাছে রয়েছে? কিংবা কেন্দ্রের বা রাজ্যের কোনও এজেন্সির কাছে রয়েছে কি এই স্পাইওয়্যার, যা ভারতীয়দের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে?

৫. যদি কোনও সরকারি এজেন্সি ভারতীয়দের উপর নজরদারিতে পেগাসাস ব্যবহার করে থাকে, তার কী আইন, নিয়ম বা গাইডলাইন্স রয়েছে?

৬. দেশীয় কোনও কর্তৃপক্ষের তরফে ভারতীয়দের উপর এই নজরদারি কি অনুমোদিত?

৭. এ ছাড়াও এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যা কিছু রয়েছে, সে ব্যাপারে কমিটি তদন্ত করবে।

কেন কমিটি

সাধারণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পেপাসাসে। অনেক কিছুই রয়েছে অজানা এবং ধোঁয়াশায় ঢাকা, ফলে তদন্ত কমিটি গঠন। এই ধরনের কমিটি কোর্টের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। সংশ্লিষ্ট নানা জনকে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে রিপোর্ট তৈরি করে আদালতে জমা দেয়। সরকার পেগাসাসে কোনও তথ্য দেয়নি আদালতে। যেহেতু এটা একটি স্পাইওয়্যারের ব্যাপার, তাই প্রযুক্তিগত অনেক কিছু এর সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই জড়িয়ে রয়েছে। সেই নিরিখেই কমিটি গঠন।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ববীন্দ্রনের নেতৃত্বাধীন কমিটিতে রয়েছেন, গান্ধিনগর জাতীয় ফরেন্সিক বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ড. নবিনকুমার চৌধুরী, কেরল অমৃত বিশ্ব বিদ্যাপীঠমের প্রোফেসর ড. প্রবহারণ পি, বম্বে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ইনস্টিটিউ চেয়ার অ্যসোসিয়েট প্রোফেসর ড. অশ্বিন অনিল গোমস্তে।

আদালত দেখতে চাইছে পেগাসাসে আদৌ এ দেশের নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছিল কি না? অতিরিক্ত হলফনামা জমায় কেন্দ্রের প্রত্যাখ্যানের ফলে এই কমিটির মাধ্যমে এই বিষয়টি নিয়ে আদালতের তরফে আরও তথ্যে নজর দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছিল। কমিটি আদালত নির্ধারিত প্রশ্নগুলির যে উত্তর বার করবে, তার ভিত্তিতেই এটা যদি স্পষ্ট হয়, পেগাসস ব্যবহার করা হয়েছিল, তা হলে সেটা আইনসিদ্ধ কি না, তা দেখা হবে, যদি না হয়, তবে পেগাসাস-নজরদারির অভিযোগে যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের পক্ষে কী সিদ্ধান্ত নেবে সর্বোচ্চ আদালত, সেই দিকেও নজর দিতে হবে।

সরকার কি উত্তর দেবে?

এখনও পর্যন্ত সরকারের বক্তব্য খুব স্পষ্ট: যেহেতু বিষয়টির সঙ্গে দেশের সুরক্ষা জড়িয়ে, তাই আর কোনও হলফনামা তারা আদালতে জমা দেবে না। তবে তাদের বিশেষজ্ঞদের কমিটিকে এ নিয়ে তথ্যাবলি জানাতে কোনও সমস্যা নেই। সরকার নিজেই এ নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করতে চেয়েছিল, আদালত তাতে সবুজ সিগন্যাল দেয়নি অবশ্য। জানিয়েছে, বিচারের নীতিই হল পক্ষপাতের ঊর্ধ্বে ওঠা, সরকারের প্রস্তাব মানলে তা লঙ্ঘিত হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রবীন্দ্রনের কমিটি সরকারের থেকে নয়া-জবাব চাইবে এখন। তবে সরকারের বিরুদ্ধে অতি-সক্রিয়তার অভিযোগ উঠলে এই জাতীয় কমিটি গঠন করতে আগেও বহু বার দেখা গিয়েছে আদালতকে, কিন্তু বিচার বহির্ভূত হত্যার মতো বেশ কিছু বিষয়ে সরকারের তরফে অসহযোগিতাই চোখ টাটিয়েছে। বিচারপতি রবীন্দ্রনের এই কমিটি অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক, আইন বিশেষজ্ঞ অথবা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারবে, আরও অনেক কিছু পারবে তদন্তের স্বার্থে। তাদের ক্ষমতা-পরিধি মোটেই ছোট নয়।

পশ্চিমবঙ্গের প্যানেল

জুলাইয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পেগাসাসে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মদন বি লোকুর এবং কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের সেই কমিটির ভূমিকা এখন কী হবে সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। সুপ্রিম কোর্ট সেই তদন্তে কোনও স্থগিতাদেশ না দিলেও, রাজ্য সরকার আদালতকে জানায় এই কমিটির কাজ থেমে রয়েছে, এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত পেগাসাসে জনস্বার্থ মামলাগুলি আদালত না শুনবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কিছু হওয়ার নয়।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Pegasus Spyware supreme court
Advertisment