scorecardresearch

করোনা মুক্তির পথটা কি অনন্ত বুস্টার ডোজে, নাকি মুক্তির উপায় এখনও অন্ধকারে?

যতই আপনাকে ভ্যাকসিন দেওয়া হোক না কেন, শরীরের প্রকৃতির উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।

As India completes year of vaccination, govt tells SC, No forced jabs, vaccine certificate not a must
ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কাউকেই করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে না, সুপ্রিম কোর্টে জানাল কেন্দ্র।

বেশি দিন আগের কথা নয়। যখন ভ্যাকসিনের একটি ডোজ নিলেই মনে বেশ কোভিড-প্রতিরোধী মেজাজ তৈরি হত। দুটি ডোজ নিলে তো কথাই নেই! তখন ভ্যাকসিন নেওয়ার পর এক-দু’জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন এমন খবর মিলছে। বিপুল সংখ্যকই যে সুচ ফোটানোর পর সুরক্ষিত, সেই ভেবে মাস্ক খুলে পাগল হাওয়ায় উড়িয়ে দেন অনেকেই। কোভিশিল্ড কিংবা কোভ্যাক্সিনের দুটি জোড, জনসন অ্যান্ড জনসনের একটি, কিন্তু সব ভ্যাকসিনেরই এক রিংটোন– আমরা কোভিড-কবচ। আমাদের নাও এবং বেঁচে যাও– টিংটং! কিন্তু সার্স কোভ-টু– পরিবর্তনের বন্ধু, মানে ত্বরা বদলে যাচ্ছে এইটি।

৫০ বার বদলের পর নাকি ওমিক্রনের উৎপত্তি দক্ষিণ আফ্রিকায়। ফলে সামান্য দিন পুরনো ভ্যাকসিনে আর হবে কেন কাজ, এখন তাই দু’-ডোজ বা এক ডোজে মেজাজটা ফুরফুরে হচ্ছে না, কারণ, ফেসবুকের দেওয়ালে কিংবা এদিক ওদিক তাকালে বহু মানুষজনকে দেখা যাচ্ছে, যাঁরা দু’ডোজের সুচ ফুটিয়েও পজিটিভ। ফলে, নতুন হাওয়ায় বেশ কিছু দেশেই তৃতীয় ডোজ শুরু হয়ে গিয়েছে, এগিয়েওছে অনেকটা। ইজরায়েল তো হাই-রিস্ক গ্রুপকে চতুর্থ-টিও দিতে শুরু করেছে। মানে, কোভিড যেমন-যেমন বদলাবে ভ্যাকসিনের সিংহাসনে ভগবানের সংখ্যা যোগ করে যেতে হবে সেই মতো। এই কি তবে ললাট-লিখন!

বুধবার, আমেরিকার স্বাস্থ্য সংস্থা সেন্টার্স অফ ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনও দু’জোড যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছে। রোগ প্রতিরক্ষায় বুস্টার ডোজের প্রয়োজনীয়তা তারা ইতিমধ্যে অনুভব শুধু করেনি, বুস্টার-পতাকা তারা উড়িয়ে দিয়েছে বেশ কিছু দিন হল। এক নম্বরি অর্থনীতির দেশ আমেরিকার উন্নাসিকরা একটু চিন্তায় রয়েছেন তার পরেও, কত দিন আর এই ভাবে হাতা তুলে সুচকে রাস্তা করে দিয়ে যেতে হবে, এই পথের শেষ কোথায়, কী আছে শেষে…!

বিজ্ঞানীরা তো আর গণৎকার নন, তাঁরা কী করে বলবেন কী হবে এর পর। তবে, এই ভাবে নির্দিষ্ট সময় পর পর, বিপুল জনগণকে বুস্টারের বলে বলিয়ান করে তোলাটা মোটেই বাস্তবানুগ এবং বিজ্ঞানসম্মত নয়, তা না বোঝার কিচ্ছুটি নেই। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে নানা বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞকে এমনটা বলতে শোনা গিয়েছে সম্প্রতি। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোগপ্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ আকিকো ইয়াসাকি বলেছেন, ‘নির্দিষ্ট সময় অন্তর ভ্যাকসিন নেওয়াটা অজানা কোনও ব্যাপার নয়। কিন্তু প্রতি ছ’মাস অন্তর বুস্টার ডোজ নেওয়ার চেয়ে ভাল পথ নিশ্চয়ই কিছু আছে বলে আমার মনে হয়। আমাদের অনন্ত বুস্টারের জীবন থেকে বেরোতে হবে।’

আর একটা কথাও অনেকে বলছেন– বুস্টার কি করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুরোপুরি জিততে পারবে! এর কোনও গ্যারান্টি আছে কি! তা ছাড়া, এই ডোজ বিশাল জনগোষ্ঠীর সামান্য অংশকে দেওয়ার আগেই তো ভোল-বদলানো করোনা শরীরে সেঁদিয়ে যেতে পারে! যেমন আমেরিকার কথাই ধরুন, সেখানে ১৮-ঊর্ধ্ব ৭৩ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন নিয়ে ফেলেছেন, মানে প্রাথমিক ডোজের কোর্স কমপ্লিট তাঁদের, আর বুস্টার-বাবু? স্বাভাবিক ভাবেই অনেক পিছিয়ে, মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ জনগণ তা নিতে পেরেছেন। বোঝাই যাচ্ছে, ওমিক্রনের ছড়ানোর যা স্পিড, তার সঙ্গে বুস্টারের গতি কোনও দিন সমানে সমানে পৌঁছতে পারবে না। বড় অংশের সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে এতে করে, তাই না? অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীপ্ত ভট্টাচার্য চিন্তার সুরে বলছেন, ‘আমাদের দীর্ঘ মেয়াদি পথ ভেবে বার করতে হবে, এ ছাড়া উপায় নেই।’

তবুও আমেরিকা জুড়ে হাওয়া উঠেছে, ওমিক্রন রুখতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বুস্টার ডোজ নিয়ে নিন…। সেই বিচারে ভারত কোথায়? ভারত তো পুরো খুল্লম খুল্লা হয়ে আছে, চোর আসবে জানা, কিন্তু ছিটকিনি যে ভাঙাচোরা! এসো ষাঁড় আমাকে গুঁতোও, এই অবস্থা এখানে। তবে স্বস্তি যে, এই চোর আলমারির লকার ভেঙে সোনার গয়না নেয় না, বা নিতে পারে না, চোর-ই সে ডাকাত নয়, বড়জোর আপনার নতুন কেনা জুতো জোড়া নিয়ে ধাঁ হতে পারে।

আরও পড়ুন ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রন সংক্রামক বেশি! কিন্তু গুরুতর নয় কেন, কী বলছে সমীক্ষা

ওমিক্রনকে বুস্টার ঠেকাতে পারবে কিনা, তা নিয়ে অনেকের সংশয় থাকলেও, বুস্টারে যে প্রতিরোধশক্তি বাড়ছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই কারওর। সাধে কি আমেরিকানরা বুস্টার-বুস্টার করে হেদিয়ে যাচ্ছে! কিন্তু কত দিন থাকবে সেই শক্তি? বাড়তি এই ডোজ কতটা শক্তি দিতে পারে, কত দিন শক্তি ধরে রাখতে পারে, সেই পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে জোর কদমে। এবং হ্যাঁ, তার ফল তেমন আশার মোড়কে সামনে আসেনি এ পর্যন্ত। প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বুস্টারের ফলে যে অ্যান্টিবডির জন্ম হচ্ছে, তার লেভেল খুব তাড়াতাড়ি হ্রাস পেয়ে যাচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার লা হোইয়া ইনস্টিটিউট অফ ইমিউনোলজি-র বিশেষজ্ঞ শ্যান ক্রোটি বলছেন, ‘বুস্টার নয়, ওমিক্রনের জন্য আলাদা করে একটি ভ্যাকসিনের দরকার। তাতে তুলনায় ভাল কাজ হবে।’ ফাইজার-এনবায়োটেক, মর্ডানা এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের মতো সংস্থারা জানিয়েছে, ওমিক্রনের জন্য ভ্যাকসিন নিয়ে কাজকর্ম শুরু হয়েছে, পরীক্ষা চলছে, কয়েক মাসের মধ্যেই তার দেখা মিলতে পারে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোগপ্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ আলি ইলেবেদি এই শুনে একটু স্বস্তি পেয়েছেন। বলছেন, ‘তৃতীয় ডোজের পর যদি আর একটি ডোজ নিতে হয়, তা হলে আমি ওমিক্রনের ভ্যাকসিনের জন্য আপেক্ষা করতেই পারি।’

আরও পড়ুন মেয়াদ উত্তীর্ণ কোভ্যাক্সিন দেওয়া হচ্ছে কি? প্রশ্ন উড়িয়ে কী বলছে কেন্দ্র

এটা ঠিক এই সময়ে বুস্টার শটের গুরুত্ব অপরিসীম। কবে ওমিক্রনের ভ্যাকসিন আসবে সেই অপেক্ষা করে যাওয়াটা মোটেই ঠিক কাজ হবে না। আবার, এ ব্যাপারে আরও একটি ভয় ঘনিয়ে উঠেছে। না, একটা নয়, ভয় দুটি। কেমন ভয়? কিছু গবেষক বলতে শুরু করেছেন, বার বার বুস্টার ডোজে শরীরের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। হিতে বিপরীত হতে পারে। দেখা গেল যে, এর চোটে দেহের প্রতিরোধ শক্তি করোনার বিরুদ্ধে কাজ করাটা বন্ধ করে দিল! না– বেশির ভাগ ইমিউনোলজিস্ট এই তত্ত্ব মানছেন না। দ্বিতীয় যে ভয়ের কথাটা বলা হচ্ছে, তার পক্ষে অবশ্য অনেকে। বলা হচ্ছে, অনেক সময় দেখা যায় রোগপ্রতিরোধে রক্তে কিছু অস্বাভাবিক কাজকর্ম হতে থাকে। রক্ত মূল ভাইরাসটিকে চিনলেও, তার ভ্যারিয়েন্টকে চিনতে পারছে না। ওরিজিনাল অ্যান্টিজেনিক সিন বলা হয় একে। এতে মূল ভাইরাসটির বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে শরীরে। কিন্তু তার নতুন রূপের বিরুদ্ধে হবে না।

আসলে শরীরই তো ঈশ্বর। ভাইরাস– শয়তান। যতই আপনাকে ভ্যাকসিন দেওয়া হোক না কেন, শরীরের প্রকৃতির উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। শয়তানকে শেষ করতে কুদরতি কেরামতি কতটা দেখাতে পারছে সে, সেইটাই কিন্তু শেষ কথা।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Explained news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Explained will forever boosting beat the coronavirus