ওমিক্রন, করোনার নতুন ধরন নিয়ে চিন্তার চাপে বিজ্ঞানীরা। এবার কি ওমিক্রন-সৌজন্যে করোনার কোনও ঢেউ উঠবে নাকি, সেই ভাবনাটাও বুকের ভিতর দপদপ, দপদপ…। ফলে ভাইরাসটি নিয়ে কাটাছেঁড়া। বাজারে যে সব ভ্যাকসিন রয়েছে, সেগুলি ওমিক্রনে কতটা কার্যকরী, তা বাজিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন ফাঁকি দিয়ে নব-ভাইরাস শরীরে ঢুকতে পারছে। প্রতিষেধক নেওয়া বেশ কয়েক জনের শরীরে এর সগর্ব উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে যে! আর, প্রতিষেধক না নেওয়া থাকলে তো কোনও কথাই নেই! পুরো ঘ্যাচাং ফু !
ওমিক্রন, ভ্যাকসিন ও বুস্টার
বিজ্ঞানীদের অনেকেই বলছেন, বুস্টার ডোজের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দিচ্ছে ভাইরাস ওমিক্রন। মার্কিন মুলুকে বুস্টার ডোজের অভিযান সব ভ্যাকসিনেই শুরু হয়ে গিয়েছে। শীতকালে করোনা কী আকার নেবে, সেই ভয়ে সেখানে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কিছু দিন আগে। যে বুস্টার-কথা এ দেশে এখনও তেমন করে শোনা যাচ্ছে না। কবে চালু হবে, তা নিয়ে কোনও কিছু ভাসেইনি। ওমিক্রনের ধাক্কায় সেইটি ভাবনাচিন্তার নিকট-বৃত্তে ঢুকে যায় কিনা, সেই জল্পনার জয়ঢাকে পড়েছে কাঠি। যদিও বিজ্ঞানীদের একাংশের মত, বাজারে ভ্যাকসিন যা আছে, তা নেওয়া থাকলে ওমিক্রন ধরলেও, রোগ চরম আকার ধারণ করবে না, মানে, চরম সম্ভাবনাটা কম। ওমিক্রন আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে না যেতেও হতে পারে। মডার্না, ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনের ডোজে কিছু বদল আনা যায় কি না, সে ভাবনাচিন্তাও চলছে।
বিজ্ঞানীরা যখন ওমিক্রনের জন্মমৃত্যু, বড়-হয়ে-ওঠা, সংক্রমণশক্তি ইত্যাদি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত, তখন বিভিন্ন দেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলির উড়ানে কাঁচি চালাতে। দক্ষিণ আফ্রিকাতেই নাকি এই ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে প্রথম, এবং বলা হচ্ছে, হতে পারে এইডসের মতো গুরুতর কোনও অসুখে ভোগা রোগী, যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে তলানিতে, তাঁদের শরীরে করোনার এই বদলটি হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ, শক্ত-আঁটুনি (বজ্র-আঁটুনি এখনও হয়নি) সত্ত্বেও ইউরোপে ব্রিটেন সহ আধ ডজনের বেশি দেশে ওমিক্রন কিন্তু পাওয়া গিয়েছে। ভাইরাসটি মিলেছে অস্ট্রেলিয়া, ইজরায়েল, হংহকংয়েও।
দক্ষিণ আফ্রিকায় দুরন্ত গতি
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা জানিয়েছেন, সে দেশের গাওটেং রাজ্যে ওমিক্রমন দাঁত বসিয়েছে সবচেয়ে বেশি। সেখানে একদিনে এর সংক্রমণ ২ হাজার ৩০০। দক্ষিণ আফ্রিকায় সারা দেশের বিচারে গত সপ্তাহের চেয়ে এটির সংক্রমণ তিন গুণ হয়ে গিয়েছে। পজিটিভিটি রেটও ( মানে যাঁদের পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে যত জন আক্রান্ত) চড়চড় করে বাড়ছে। ২ শতাংশ থেকে পৌঁছেছে ৯-এ।
তবে, অন্য সব ভ্য়ারিয়েন্টের চেয়ে ওমিক্রনে বিজ্ঞানীরা সক্রিয় হয়েছেন জলদি। মঙ্গলবার, দক্ষিণ আফ্রিকায় ভাইরাসের এই নবজন্মের খবর হাতে আসার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁরা ঢালতলোয়ার-কালাশনিকভ নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। আক্রান্ত রক্তের একশো নমুনা নিয়ে এসে বিশ্লেষণ শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। এমনই বলছেন ডারবানের নেলসন ম্যান্ডেলা স্কুল অফ মেডিসিনের জিন বিশেষজ্ঞ তুলিও ডি ওলিভেইরা।
তা ছাড়া, আশঙ্কাধ্বনি বাজার এক ঘণ্টার মধ্যে বিজ্ঞানীরা কোমরের বেল্ট শক্ত করে বেঁধে নেমে পড়েন করোনাভাইরাসের এই নতুন রূপটি ভ্যাকসিনকে ফাঁকি দিতে পারছে কিনা, পারলেও, এর বিরুদ্ধে প্রতিষেধকের শক্তি কতট দূর পর্যন্ত। এখন ফাইজার-বায়োএনটেক এই কাজে তাদের সঙ্গে একাসনে বসেছে। সারা পৃথিবী জুড়ে ওমিক্রনে হইহই-রইরই পড়ে গিয়েছে। কোনও ভাবে যেন ওমিক্রন পাখা বেশি মেলতে না পারে, সেই দিকে শত শত ওয়াটের নজর রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন ভয়ের ঢেউ তোলা করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্ট, কোথায় খোঁজ, শক্তি কতটা?
আগে কোভিড হয়ে থাকলেও হতে পারে
যাঁরা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ইতিমধ্যেই, তাঁদের জন্যও কিন্তু উদ্বেগের খবর দিচ্ছে পরাক্রমী ওমিক্রন। দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড লেসেলস বলছেন, করোনা যাঁদের হয়ে গিয়েছে, মানে করোনার অ্যান্টিবডি যাঁদের রক্তে ছুটছে, তাঁদেরও ওমিক্রন হতে পারে। উদাহরণও সামনে এসেছে। বিজ্ঞানীদের গালে হাত দিয়ে বসে বসে ভাবলে চলে না। পথে নেমে পড়তে হয় সাথীদের সঙ্গে নিয়ে। যত তাড়াতাড়ি কাজ শুরু, তত তাড়াতাড়ি অসুখবিসুখ ক্যাওড়াতলা পার করে। ওমিক্রনের সংক্রমণে দ্রুততা এটাই বড় আকারে স্বস্তি দিচ্ছে। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে এ তো উল্লম্ফনই।