Advertisment

সর্দিজ্বর আটকে দিতে পারে কোভিড, বিজ্ঞানীদের মাথা-ঘোরানো নতুন গবেষণা

সর্দিজ্বর যদি মাঝেমধ্যেই হয়, তা হলে চিন্তা নয়, বরং খুশি হোন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

প্রতীকী ছবি

কার হবে সার্স কোভ-টু? এখনও পুরোপুরি রহস্যের পর্দা ওঠেনি। এমন ঘটনা আকছার দেখা গিয়েছে যে, কোভিড রোগীর সঙ্গে থেকেও কারও কারও এই মারণ অসুখ হয়নি। আবার অনেকেরই করোনা হয়েছে, কিন্তু রক্তের কী এক কারসাজিতে তা উপসর্গহীন হয়ে রয়ে গিয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তি তাই নির্দ্বিধায় নিরন্তর কোভিড ছড়িয়ে গিয়েছেন, বা যাচ্ছেন এবং যাবেনও নিজের অজান্তে। অ্যাসিমটোম্যাটিক থাকার গোপন রহস্যটা কী, হয়তো অ্যান্টিবডির শক্তি, কিন্তু কী ভাবে সেই বলে বলিয়ান হলেন তিনি, কী ভাবেই বা কেউ করোনা আক্রন্তের সঙ্গে ঘর করেও, করোনা মুক্ত রইলেন, শক্তির হুঙ্কার দিলেন, সেই গবেষণা চলছে, এবং এষণা থেকে রহস্যের আঁধারে মাঝে মাঝে চড়া আলোও পড়ছে। যেমন জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বললেন, যাঁদের নখদন্তহীন করোনাভাইরাসে ধরেছিল, মানে যে ভাইরাস সাধারণ সর্দিকাশির জন্য দায়ী, তাদের রক্তে সার্স-কোভ-টু করোনাভাইরাসটি দাঁত কম ফোটাতে পারছে। অর্থাৎ কি না কোভিড বিরোধী প্রতিরক্ষা শক্তি রয়েছে সেই সব লোকজনের। অন্তত খানিকটা হলেও তা রয়েছে।

Advertisment

গবেষণা ও ফলাফল

সার্স কোভ-টু-র ছায়া জনারণ্যে ঘনিয়ে ওঠার আগে চারটি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত সিরামের (সিরাম মানে রক্তের জলীয় ভাগ। সমস্ত লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকা, অনুচক্রিকা এবং কিছু প্রোটিন সরিয়ে দেওয়ার পর রক্তে যা পড়ে থাকে) ৮২৫টি নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। সেই সব নমুনায় অ্যান্টিবডির কাজকর্ম খতিয়ে দেখেছেন তাঁরা। গবেষকরা সার্স কোভ-টু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোকজনের ৩৮৯টি নমুনাতে নজর দিয়েছেন। কমপিউটার ভিত্তিক মডেলের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন কী ভাবে সাধারণ সর্দিকাশির জন্য দায়ী করোনার অ্যান্টিবডি নির্দয় নয়া করোনাভাইরাসকে রুখে দিতে পারছে। গোটা গবেষণার ফলাফল জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই বিজ্ঞানীদের দল প্রেসবার্তায় জানিয়েছেনও।

দেখা গিয়েছে, যাঁদের সার্স কোভ-টু হয়েছিল, তাঁদের রক্তে সরল করোনার অ্যান্টিবডি কম রয়েছে। আবার, যাঁদের রক্তে নিরীহ করোনার অ্যান্টিবডি রয়েছে ভূরি ভূরি, তাঁরা সার্স কোভ-টুতে আক্রান্ত হলে, হাসপাতালে মাত্রাতিরিক্ত কম গিয়েছেন। জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল ভাইরোলজির প্রধান আলেকজান্দ্রা ট্রকোলা বলছেন, যাঁদের হার্মলেস করোনা হয়েছিল, তাদের সার্স কোভ-টুতে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা কম রয়েছে বলে আমরা দেখতে পেয়েছি। সক্রমিত হলেও, কোভ-টু-র প্রভাব কম থাকবে।

এক ঝলক করোনাভাইরাস

করোনাভাইরাস হল এক দল আরএনএ ভাইরাস। যারা মূলত পশুপাখিদের শরীরে রোগের রোখ তৈরি করে। মানুষের শরীরে ঢুকে বিপদ ঘটায়, বিবর্তনের মাধ্যমে। মানুষের শ্বাসযন্ত্রের অসুখের জন্য এই ভাইরাসটি সাধারণ ভাবে দায়ী। রোগ ছোট কিংবা মাঝারি বা বড় মাত্রার হতে পারে। সাধারণ সর্দিজ্বরের জন্য সবচেয়ে সুনাম রাইনোভাইরাস নামে করোনার। জনে জনে এটি সংক্রমণ ঘটিয়েছে, ঘটাচ্ছে, ঘটাবেও। করোনাভাইরাসগুলির মধ্যে এ পর্যন্ত সবচেয়ে মারাত্মক হল সার্স কোভ-টু, তার আবার বেশ কয়েকটি ধরন। ডেল্টার ভয় উঠেছে এখন শীর্ষে। এর আগে, ২০০৩-এ সার্স (Severe acute respiratory syndrome) এবং ২০১২ সালে মার্স (Middle East respiratory syndrome) করোনাভাইরাসের দুটি মারাত্মক চেহারা দেখা যায়। তবে, সার্স কোভ-টু-এর তুলনায় এ দুটি কিস্যু নয়। করোনা আক্রান্ত হলে গরু-শূকরের ডায়রিয়া হয়, ইঁদুরের হেপাটাইটিস এবং এনসেফালোমাইলাইটিস হতে পারে।

আরও পড়ুন মার্কিন মুলুকে কোভিড-বিরোধী বুস্টারশক্তি, ভারত ও অন্যান্য দেশ কোথায় দাঁড়িয়ে?

রাইনোভাইরাস-কথা

কয়েক মাস আগে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখান, যদি আপনি রাইনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তা হলে আপনার করোনা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। গবেষকরা দেখিয়েছিলেন, সর্দির ভাইরাসে আক্রান্ত শ্বাসনালীর টিস্যুগুলিতে করোনাভাইরাস হামলা করলে ওই সব কোষের ইন্টারফেরন আটকে দিচ্ছে সার্স কোভ-টু-র ছড়িয়ে পড়া। ফলে যদি আপনার সাধারণ সর্দিজ্বর হয়ে থাকে, বা সর্দিজ্বর যদি মাঝেমধ্যেই হয়, তা হলে চিন্তা নয়, বরং খুশি হোন। সর্দির করোনার জন্য হ্যাটসঅফ করুন। এবং ভ্যাকসিন নিন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus
Advertisment