এ এক এমন ভাইরাস যে কিছুটা অপ্রতিরোধ্যই। সংক্রমণের সময় সব বাঁধা বিঘ্ন অতিক্রম করেই মানব শরীরে ঢুকে বাসা বাঁধছে করোনা। দেহে সংক্রমণ আটকাতে ভ্যাকসিনই যে একমাত্র পথ তা বিশ্বের কাছে স্পষ্ট। কিন্তু প্রথম থেকে যে বিষয়ে জোর দিয়ে দেখা হচ্ছিল সেই মাস্কেই কিন্তু এই বিপদ আটকাচ্ছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণকে প্রাথমিকভাবে প্রতিরোধ করছে মাস্ক, মিলল এমনই প্রমাণ।
কোথায় এই পরীক্ষার ফল মিলেছে?
সম্প্রতি করোনা আবহে মিসৌরির একটি সেলুনের ঘটনায় মাস্ক ব্যবহারে আস্থা ফিরছে অনেকের। স্প্রিংফিল্ডের একটি সেলুনে মে মাসের ১২ তারিখ আক্রান্ত হন সেখানকার হেয়ার স্পেশালিস্ট। প্রাথমিক উপসর্গ নিয়েই টানা আটদিন সেলুনে কাজ করেন তিনি। কিন্তু করোনা রিপোর্ট হাতে আসতেই চক্ষু চড়কগাছ। পজিটিভ তিনি। ততদিনে সেলুনে এসেছে ১৩৯ জন কাস্টমার। হিসেব বলছে তাঁদের সকলেরই করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা প্রবল। এমনকী চিন্তা বাড়িয়ে ১৫ মে করোনা আক্রান্ত হন ওই সেলুনেরই আরেক হেয়ার স্টাইলিস্ট। অগত্যা শাটার নামল জনপ্রিয় সেলুনের।
আরও পড়ুন, ‘মাস্ক পরতে অসুবিধা হলেই করোনাযোদ্ধাদের কথা ভাবুন’
কিন্তু আশ্বর্যের বিষয় সেলুনে আসা কাস্টমাররা কেউই করোনায় আক্রান্ত হলেন না। শুধু তাই নয়, প্রাথমিক কোনও উপসর্গও দেখা দেয়নি তাঁদের সকলের শরীরে। হিসেবে গড়মিল মনে হচ্ছে তো? বায়ুবাহিত প্রবল সংক্রমিত করোনা কেন ছড়িয়ে পড়ল না? আটকাল কীসে? মাস্কে!!
সত্যিই কি ফেসমাস্কে আটকাচ্ছে করোনাভাইরাস?
এই প্রমাণ অন্তত সেই কথাই বলছে। মাস্কে আটকেছে করোনার সরাসরি সংক্রমণ। কোভিড সংক্রমণের পর থেকেই এই শহরে কড়া নিয়ম ছিল মাস্ক পরা। করোনা ধরা পড়লেও তাই সংক্রামিত হতে পারেনি কাস্টমারের মধ্যে। সেলুন থেকে ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি ছড়ানোর আশংকা ছিল। সেই কারণে আনলক পর্বের প্রথম ধাপে বন্ধ ছিল সমস্ত সেলুন-পার্লার। অর্থনৈতিক ধাক্কা কাটাতে তা খুললেও সমস্ত রকম স্বাস্থবিধি সেখানে মেনে চলার বিধান দেওয়া হয়েছে।
মাস্কের ব্যবহারে কতটা আটকাচ্ছে এই ভাইরাস, সেই বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটির গবেষকরা প্রথমে ম্যানেকুইনের উপর এই পরীক্ষা করেন। যেখানে কৃত্রিমভাবে হাঁচি দেওয়ার প্রক্রিয়া করা হয়। এরপর লেসার ব্যবহার করে দেখা হয়, কীভাবে সেই বায়ুবাহিত পার্টিকালগুলি বাতাসে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। এই পরীক্ষাটির ফলাফল ‘ফিজিক্স অফ ফ্লুয়িড’ জার্নালেও প্রকাশিত হয়েছে।
কী কী বিষয় জানতে পারা গেল এই পরীক্ষা থেকে?
* দেখা যাচ্ছে, আলগা ভাঁজ করা রুমাল দিয়ে বানানো ফেস মাস্ক এবং ব্যান্ডানা স্টাইলের যে মুখ ঢাকা মাস্ক রয়েছে, সেগুলি শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় ক্ষুদ্রতম কণাগুলি আটকাচ্ছে।
* এমনকী বাড়িতে বানানো সুতির একাধিক লেয়ার বিশিষ্ট মাস্ক এবং দোকানের তিনকোনাবিশিষ্ট যে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলিও হাঁচি কিংবা কাশির সময় মিউকাস জাতীয় পদার্থের বাইরে বেরোনো রুখে দিচ্ছে।
* কিন্তু এই সবকটি মাস্কে যদি কোনও প্রকার ছিদ্র থাকে বা ফাঁকা থেকে যায়, তাহলেই বিপদের আশংকা থাকছে।
* মুখ না ঢেকে হাঁচি কিংবা কাশি, অনেকসময় কথা বললেও কমপক্ষে ৬ ফিট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে এই করোনা জীবাণু।
Read the story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন