Advertisment

হোয়াটসঅ্যাপে আর শুধু চ্যাট নয়, ফেসবুক-জিওর চুক্তি থেকে কী পাবে ভারত?

একবার হোয়াটসঅ্যাপ পে পদ্ধতি লাগু হয়ে গেলে ব্যবহারকারীরা নিকটবর্তী দোকান থেকে মুদির জিনিস অর্ডার করতে পারবেন বা ভারতের অন্য কোনও প্রান্ত থেকে শাড়ির অর্ডার দিতে পারবেন- এই অ্যাপের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বহু ভারতীয়ের কাছেই এখনও ইন্টারনেটের অর্থ হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক এবং ইউটিউব

বুধবার ফেসবুক ও রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ঘোষণা করেছে তারা সোশাল নেটওয়ার্কে ৪৩,৭৫৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে জিও প্ল্যাটফর্মের ৯.৯৯ শতাংশ শেয়ার কিনতে চায়। ফেসবুক ৪.৬২ লক্ষ কোটি টাকা জিও প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ করছে।

Advertisment

ভারতের সার্ভিস প্রোভাইডরে ফেসবুকের আগ্রহ কেন?

ফেসবুক বহুদিন ধরেই নানা ভাবে লাভের গুড় খাবার প্রচে্ষ্টায় রয়েছে। ২০১৫ সালে তারা ফ্রি বেসিকস নিয়ে নিরীক্ষা চালিয়েছিল, যে প্রকল্পে সার্ভিস প্রোভাইডরদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারা ফ্রি ইন্টারনেট দেবে। কিন্তু সে প্রকল্প বহুবিধ সমালোচনার মুখে পড়ে প্রত্যাহৃত হয়।

এমনকি আকিলা নামের সৌরশক্তি চালিত ড্রোনের মাধ্যমে কম খরচে উচ্চ শক্তি সম্পন্ন ওয়াই ফাই ভারতের বিভি্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেবার কথাও উঠেছিল। তার নাম দেওয়া হয়েছিল এক্সপ্রেস ওয়াইফাই। কিন্তু তখন ডেটা ছিল দুর্মূল্য এবং ফ্রি ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়াই সহজতর বলে মনে করা হয়েছিল।

করোনার জন্য কি ভারতীয় অর্থনীতি মার খাচ্ছে?

এরপর রিলায়েন্স জিও চলে এল। ভারতের নতুন পরিষেবা প্রদানকারী এত কম দামে ডেটা দিতে শুরু করল যে তারা সারা পৃথিবীর অনলাইন বাজারে অন্যতম হয়ে উঠল।

জিওর দৌলতে ৩৮৮ মিলিয়ন ইউজার এখন অনলাইনে, যার এক তৃতীয়াংশের ভাগ পেতে চায় ফেসবুক। সে কারণেই জিও পৃথিবীর বৃহত্তম সোশাল নেটওয়ার্কের আগ্রহের কারণ হয়ে উঠেছে। তবে ফেসবুক সম্ভবত জিওতে শুধু ফেসবুকের জন্য লগ্নি করছে না। তাদের কাছে বেশি গুরুত্বের বিষয় হল হোয়াটসঅ্যাপ, যে সোশাল মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম তারা ২০১৪ সালে অধিগ্রহণ করেছে।

হোয়াটসঅ্যাপের ২ বিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারীর ২০ শতাংশই ভারতের। ভারতে হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার জিওর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে। বহু ভারতীয়ের কাছেই এখনও ইন্টারনেটের অর্থ হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক এবং ইউটিউব।

এই অংশীদারিত্বের বিবৃতিতে ফেসবুক ও রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ উভয়েই জানিয়েছে, তাদের মধ্যে সমস্ত আকারের ব্যবসা পরিকল্পনার দিগন্ত খুলে যাবার কথা গয়েছে, তবে জোর দেওয়া হয়েছে সারা দেশের ৬০ মিলিয়ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের উপর।

এশিয়ার চিন, কোরিয়া ও জাপানে এই মডেল অত্যন্ত কার্যকর হয়েছে। উইচ্যাট, লাইন এবং কাকাও টক গেম থেকে খুচরো ব্যবসা সবরকমের অফার দিচ্ছে। সে কারণেই হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিশেষ করে ভারতের বাজারে বড় সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই বহু ব্যবহারকারীর কাছে তা পৌঁছে যেতে পারে।

প্রায় সব ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাই এই অ্যাপ সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হবার ফলে পরবর্তী পর্যায়ের ব্যবহার সম্পর্কে শঙ্কার কারণ থাকছে না।

তেল কিনলে ডলার মিলছে, এমন ঐতিহাসিক পরিস্থিতি হল কী করে?

এই যৌথ উদ্যোগে তাহলে কী মিলবে?

এই মুহূর্তের ঘোষণায় শুধু এটুকুই বলা হয়েছে যে দুই সংস্থাই জিওমার্টকে ঘিরে সহযোগিতা করবে। হোয়াটসঅ্যাপ সহজেই সারা দেশের বিভিন্ন স্টোরে অ্যাকসেস করা যাবে যার মাধ্যমে তা জিওমার্টে দেখা যাবে। জিও স্থানীয় ব্যবসার লোকেশন সম্পর্কিত তথ্য এক জায়গায় করবে, হোয়াটসঅ্যাপ মসৃণ কানেকশনের মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সহজ সংযোগ তৈরি করবে।

এর একমাত্র সমস্যা হল, যেটা এই মুহূর্তের বড় সমস্যাও বটে, ভারতীয় নিয়ন্ত্রকরা হোয়াটসঅ্যাপ পে-কে এখনও ছাড়পত্র দেয়নি।

এই ফিচারের মাধ্যমে ইউপিআইয়ের সহযোগিতায় একটি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো যায়। একবার হোয়াটসঅ্যাপ পে পদ্ধতি লাগু হয়ে গেলে ব্যবহারকারীরা নিকটবর্তী দোকান থেকে মুদির জিনিস অর্ডার করতে পারবেন বা ভারতের অন্য কোনও প্রান্ত থেকে শাড়ির অর্ডার দিতে পারবেন- এই অ্যাপের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েই।

হোয়াটসঅ্যাপ পেমেন্ট প্রক্রিয়া সরল ও সর্বব্যাপী সম্ভাবনার কথা মাথায় রাখলে তা ভারতীয় বাজারের পক্ষে আদর্শ। জানুয়ারি মাসে ফেসবুক প্রণেতা মার্ক জুকেরবার্গ ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি আশা করছেন মাস ছয়েকের মধ্যেই হোয়াটসঅ্যাপ পে ভারতের মত দেশে চালু হয়ে যাবে। ততদিন পর্যন্ত জিও মানির মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া চালু থাকবে।

এর ফলে সর্বাপেক্ষা লাভবান হবেন ছোট ব্যবসায়ীরা। তাঁরা পুরনো ও নতুন গ্রাহকদের সঙ্গে এর মাধ্যমে যেমন যোগাযোগ করতে পারবেন, তেমনই তাঁদের চেনাজানা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনলাইনে বিক্রিও করতে পারবেন।

ফেসবুকের সঙ্গে চুক্তিতে জিওর লাভ কী?

জিওর কাছে এর অর্থ ইউজাররা তাঁদের অনলাইন সময়ের প্রায় সর্বদাই জিও প্রোডাক্টে ব্যয় করবেন এবং এর ফলে জিও কেবল একটি মাধ্যম থাকবে না, লক্ষ্য (destination) হয়ে উঠবে।

ন্য কোনও পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাই চেষ্টা সত্ত্বেও এতদূর করে উঠতে পারেনি।

এ ছাড়া এর ফলে সারা দেশের লক্ষ লক্ষ ছোট ব্যবসায়ীরা ই কমার্স জগতে ঢুকে পড়তে পারবেন কোনও ওযেবসাইট বা পেমেন্ট গেটওয়ে ছাড়াই। তাঁদের কেবল হোয়াটসঅ্যাপ ফর বিজনেস অ্যাপ লাগবে সারা দেশের ক্রেতাদের কাছে পৌঁছতে।

 তাহলে কি হোয়াটসঅ্যাপ কেবল জিওতেই মিলবে?

না। যেহেতু এটি একটি আর্থিক চুক্তি, ফেসবুকের সে বাধ্যবাধকতা নেই এবং দু পক্ষের কেউই কোনও এক্সক্লুসিভ কিছু অফার করছে না। জিও এখানে নির্দিষ্ট ধরনের কিছু অংশীদারির অঙ্গ, তারা অন্য প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে বা হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গেই একই রকমের অন্য চুক্তি করতে পারে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Facebook Whatsapp jio
Advertisment