Advertisment

লকডাউনে পাঞ্জাবে কৃষক আত্মহত্যা কমল কীভাবে?

পাঞ্জাবে ২০১৯ সালের এপ্রিল-জুনে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১১৯টি, ২০১৮ সালে এই সময়কালে ঘটেছে ১০৪টি। এ বছরের হিসেব দেখা যাচ্ছে গত দু বছরের তুলনায় ৬৫ থেকে ৬৮ শতাংশ কম আত্মহত্যা ঘটেছে। 

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Lockdown Farmer Suicide

ত্রিপুরার আগরতলায় মুখ ঢেকে কাজ করছেন পানচাষি (ছবি- অভিষেক সাহা)

গত তিন মাসে লকডাউন ও ১ জুন থেকে শুরু হওয়া আনলকের সময়কালের মধ্যে পাঞ্জাবে প্রায় ৪০ জন কৃষক বা কৃষিকর্মী আত্মহত্যা করেছেন। রাজ্যের কৃষক সংগঠনগুলির দেওয়া তথ্য থেকে এমনটাই জানা যাচ্ছে।

Advertisment

এ পরিসংখ্যান অনুসারে গত তিন মাস সময়কালে প্রতি মাসে গড়ে ১২-১৩ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। এ সংখ্যাটা বেশি শোনালেও., লকডাউনের আগের পর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে মাসিক আত্মহত্যার যে হার তা থেকে এই সংখ্যা প্রায় ৭০ শতাংশ কম।

পাঞ্জাব রেভিনিউ ডিপার্টমেন্টের রেকর্ড অনুসারে গত চার বছরের বেশি সময়ে রাজ্যে গড়ে ৪০-৪২ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। এই অতিমারীর সময়ে কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ কী হতে পারে, তা দেখে নেওয়া যাক।

২৩ মার্চ লকডাউন ঘোষণার দিন থেকে কতজন কৃষক বা কৃষিকর্মী আত্মহত্যা করেছেন?

ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন (উগ্রহণ)-এর নথি অনুসারে, যা আত্মহত্যা সম্পর্কিত বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট থেকে সংগৃহীত, এবং পুলিশের নথির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা, এপ্রিল মাসে ১৬ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন এবং পরের দুমাস, মে ও জুনে সমসংখ্যক আত্মহত্যা ঘটেছে। যদি মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে চারজনের আত্মহত্যার ঘটনা হিসেবে ধরা হয়, তাহলে লকডাউন ঘোষণার সময় থেকে এখনও পর্যন্ত মাসে গড়ে ১২-১৩ জন আত্মহত্যা করেছেন।

পাঞ্জাবে ২০১৯ সালের এপ্রিল-জুনে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১১৯টি, ২০১৮ সালে এই সময়কালে ঘটেছে ১০৪টি। এ বছরের হিসেব দেখা যাচ্ছে গত দু বছরের তুলনায় ৬৫ থেকে ৬৮ শতাংশ কম আত্মহত্যা ঘটেছে।

কম আত্মহত্যা নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

পাতিয়ালার পাঞ্জাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক কেসর সিং ভাংগু বলছেন কৃষক বর্গ সহ সমাজের সর্বস্তরে খরচের বিষয়টি ক্রমশ অত্যাবশ্যকীয়তে এসে ঠেকেছে। দ্বিতীয়ত, একটা ধারণা তৈরি হয়েছে আমেরিকা বা কানাডার মত দেশে যেভাবে বিশাল আর্থিক সাহায্য সরকার থেকে দেওয়া হচ্ছে, তেমনই এখানেও দেওয়া হবে, যা থেকে কৃষকদের ঋণমুক্তির সুযোগ ঘটবে।

কৃষি ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জ্ঞান সিং কৃষক আত্মহত্যা নিয়ে একাধিক গবেষণা কর্মে নিযুক্ত। তিনি বলেন অতিমারীর কারণে ঋণশোধের চাপ অনেকটা কমে আসা কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যাহ্রাসের কারণ হতে পারে।

কৃষক সংগঠন কী বলছে?

ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন উগ্রহণের সভাপতি জোগিন্দর সিং উগ্রহণ। এই সংগঠন ২০১৬-১৭ থেকে এ ধরনের আত্মহত্যার খতিয়ান রেখে আসছে। জোগিন্দরের কথাও কোভিড-১৯-এর কারণে ইনস্টলমেন্ট দেওয়া পিছিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন।

তার চেয়ে বড় কথা ব্যাঙ্ক ও ঋণদাতাদের দ্বারা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার মত অসম্মানের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না তাঁদের।

সাংরুরের কনকওয়াল গ্রামের কৃষক সুখপাল সিং বললেন, পাঞ্জাবের গ্রামীণ এলাকায় বিয়ে বা শেষকৃত্যের জন্য বিশাল খরচ করতে হয়। বিধিনিষেধের কারণে এখন তেমনটা ঘটছে না। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গ্রামীণ পাঞ্জাবের কৃষকদের উপর অনেকটা চাপ পড়ে।

সরকার কী বলছে?

সরকারি দফতরের অফিশিয়ালরা বলছেন, সরকারের তরফ থেকে ব্যাঙ্কগুলিকে কয়েক মাস ঋণের ইনস্টলমেন্ট না নিতে বলার জন্য আত্মহত্যার সংখ্যা কমেছে।

ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ মকুব করে দেওয়া আত্মহত্যা কমানোর একটা প্রচেষ্টা বটে. কিন্তু কৃষকরা যেহেতু অনেক ঋণ নেন, ফলে এতে আত্মহত্যা বন্ধ হবে না।

কম আত্মহত্যার এই ধারাটি কি বহমান থাকবে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাভাবিকতা ফিরলে আত্মহত্যার পরিমাণ বাড়বে। তাঁদের আশঙ্কা ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য ঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলি বকেয়া আদায়ের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেবে যার জেরে কৃষক সম্প্রগায় আর্থিক ও মনস্তাত্ত্বিক চাপের মুখে পড়বে।

বিকেইফ ডাকাউন্ডা একতার সাধারণ সম্পাদক জগমোহন সিং বললেন বর্তমানে কৃষকরা দেশের খাদ্যভাণ্ডার পূরণে ব্যস্ত, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আত্মহত্যা আর ঘটবে না।

পাঞ্জাবের কৃষকদের মোট ঋণের পরিমাণ দেড় লক্ষ কোটি টাকা, যার ৩৪ শতাংশই নেওয়া হয়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা থেকে, যারা ২৮-৩০ শতাংশ অবধি সুদ নিয়ে থাকে।

জগমোহন সিংয়ের কথায় করোনাভাইরাস যদি এমন চরম পদক্ষেপ গ্রহণের ঘটনাক্রম পিছিয়ে দিতে পারে, সরকারের সামান্য পদক্ষেপ কৃষকদের দুর্দশার উপর জাদু প্রভাব ফেলতে পারে।

Lockdown
Advertisment