Explained: ভারতে তৈরি হালকা যুদ্ধকপ্টারের বৈশিষ্ট্য

রাতেও হামলার জন্য এই কপ্টার অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে। গতি ঘণ্টায় ২৬৮ কিলোমিটার।

রাতেও হামলার জন্য এই কপ্টার অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে। গতি ঘণ্টায় ২৬৮ কিলোমিটার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
copter

ক্যাবিনেট বিষয়ক নিরাপত্তা কমিটি ইতিমধ্যেই ভারতে তৈরি ১৫টি হেলিকপ্টারকে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার ছাড়পত্র দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য সরকারের খরচ পড়বে ৩,৮৮৭ কোটি টাকা।

Advertisment

কখন হালকা যুদ্ধকপ্টারের দরকার হয়?
১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের সময় এমন কপ্টারের প্রয়োজন ভীষণভাবে অনুভব করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। এমন কপ্টার, যা অনেকটা উঁচুতে উড়ে লড়াই চালাতে পারবে। অনুপ্রবেশকারী পাকিস্তানের সেনারা কার্গিলের বিভিন্ন শিখর দখল করে রেখেছিল। কিন্তু, রাশিয়া থেকে আমদানি করা কপ্টারগুলো অত উঁচুতে উড়তে পারছিল না। ফলে সমস্যায় পড়তে হয় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে। সেই সময় ভারতীয় বিমান বাহিনী এমআই-১৭ কপ্টার ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিল। শত্রুপক্ষের আক্রমণের মুখে তাতে বেশ ক্ষতিও হয়েছিল বাহিনীর। এরপরই ২০০৬ সালে হিন্দুস্তান অ্যারোনেটিকস লিমিটেড বা হ্যাল হালকা যুদ্ধকপ্টার তৈরির কথা ঘোষণা করে। এমন কপ্টার যা রুক্ষ, শুষ্ক মরুভূমিতেও ব্যবহার করা যাবে। আবার লাদাখ এবং সিয়াচেন হিমবাহের মতো উঁচু শৈলশিখরেও তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হবে না।

কীভাবে হালকা যুদ্ধকপ্টার তৈরি হল?
হ্যালের ঘোষণার চার বছর পর ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে হালকা এই যুদ্ধকপ্টার পরীক্ষামূলকভাবে রানওয়েতে চালানো হয়। একমাস পর তা আকাশে উড়িয়ে পরীক্ষা করা হয়। সঙ্গে, কী কী দরকার, বিশেষজ্ঞদের থেকে সেই পরামর্শ নিয়ে চলতে থাকে এর নানা পরিবর্তন। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জনসাধারণের সামনে এই হালকা যুদ্ধকপ্টারের প্রদর্শনী করা হয়। ২০১১ সালেরই জুনে এই পরিবর্তিত হালকা কপ্টার, দ্বিতীয়বারের জন্য আকাশে উড়িয়ে পরীক্ষা করা হয়। সঙ্গে, প্রয়োজন অনুযায়ী চলতে থাকে আধুনিকীকরণ। ২০১৪ সালের নভেম্বর আকাশে উড়িয়ে ফের পরিবর্তিত হালকা কপ্টারের পরীক্ষা করা হয়। তারপরও থেমে থাকেনি এই যুদ্ধকপ্টারের ধারাবাহিক উন্নয়ন। তারপর গরম এবং ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে এই কপ্টার চালিয়ে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষাগুলো হয় লাদাখ এবং রাজস্থানে। ২০১৫-র নভেম্বরে ফের রদবদলের পর চতুর্থবারের জন্য এই কপ্টার পরীক্ষামূলকভাবে আকাশে ওড়ানো হয়। ২০১৯-এর জানুয়ারিতে যাবতীয় ব্যবস্থাপনা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এই কপ্টার ওড়ানোর অনুমতি দেয় হ্যাল। সেই মতো ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেঙ্গালুরুতে হ্যালকে বরাদ্দ অনুযায়ী এই হালকা যুদ্ধকপ্টার তৈরির অনুমতি দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। বছরে ৩০টি কপ্টার তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।

Advertisment

হালকা যুদ্ধকপ্টারের মুখ্য বৈশিষ্যগুলো কী?
হালকা যুদ্ধকপ্টার, সংক্ষেপে এলসিএইচের মুখ্য বিশেষত্ব সম্পর্কে হ্যালের দাবি, এতে উন্নত যুদ্ধকপ্টারের যাবতীয় বিশেষত্ব আছে। পাইলটের পাশেই সহ পাইলট বসতে পারবেন। এর কিছু গোপন বৈশিষ্ট্য আছে। যা কেবল ব্যবহারকারীদেরই জানবেন। আছে, অস্ত্র এবং সুরক্ষার ব্যবস্থাও। রাতেও হামলার জন্য এই কপ্টার অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে। জমিতে নামার সময় যাতে কোনও কিছুর সঙ্গে সংঘর্ষ না-হয়, সেজন্যও গিয়ারের ব্যবস্থা আছে এই কপ্টারে। হ্যালের এই এলসিএইচে দুটি শক্তি ইঞ্জিন লাগানো আছে। সর্বোচ্চ ৫,৮০০ কেজি ওজন নিয়ে এটা চলতে পারবে। গতি ঘণ্টায় ২৬৮ কিলোমিটার। ৫৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত এই কপ্টারে চেপে যাওয়া যাবে। সর্বোচ সাড়ে ছয় কিলোমিটার উচ্চতাতেও এই কপ্টারের সাহায্যে অভিযান চালানো যাবে। কপ্টারে আছে বায়ু থেকে বায়ু, বায়ু থেকে ভূমিতে লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করার মতো ক্ষেপণাস্ত্র। আছে ২০ মিলিমিটারের আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৭০ মিলিমিটারের রকেট। ইলেকট্রনিক্স যুদ্ধের কথা মাথায় রেখে ককপিটে পুরোটাই কাচের তৈরি করা হয়েছে।

Read story in English