Advertisment

মহিলাদের সুন্নত প্রথা কেন চালু রয়েছে?

যেসব দেশে এ প্রথা চালু রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বুরকিনা ফাসো, মধ্য আফ্রিকান রিপাবলিক, চাড, কঙ্গো, সুদান, মিশর, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইরাক, ইরান, জর্জিয়া, রাশিয়ান ফেডারেশন, কলম্বিয়া এবং পেরু।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Female Genital Mutilation

এ দেশে এই প্রথা চালু রয়েছে

প্রতি বছর ৬ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মহিলা সুন্নত বিরোধী দিবস হিসেবে পালিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুসারে ৩০টি দেশে ২ কোটি মেয়েকে এই যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

Advertisment

এ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যগত জটিলতার উপশমের জন্য ২০১৮ সালে ২৭টি দেশে ১.৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছিল। যদি সে পরিস্থিতি চলতে থাকে, তাহলে ২০৪৭ সালে এ খরচ ২.৩ বিলিয়নে পৌঁছবে।

২০১৮ সালে মেয়েদের সুন্নত সম্পর্কিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এ ঘটনার ৭৫ শতাংশ ঘটে বোহরা মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে। তিনজন স্বাধীন গবেষক এই গবেষণা করেন।

 মহিলাদের সুন্নত কী এবং তা প্রচলিত কেন?

মহিলাদের যৌনাঙ্গে বদল ঘটানো বা ক্ষত করে দেওয়ার যে সাংস্কৃতিক প্রথা রয়েছে তাকে বলে মহিলাদের সুন্নত বা খফজ়। মেয়ে ও নারীদের মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে এ প্রথা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চারধরনের খফজ়ের কথা বলেছে। এর মধ্যে ভগাঙ্কুরের পূর্ণ কর্তন থেকে থেকে নানা রকম ভাবে যৌনাঙ্গের ক্ষতের কথা বলা রয়েছে।

যেসব মহিলারা খফজ় প্রথার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশের বাস সাব-সাহারা আফ্রিকা ও আরব রাষ্ট্রে, তবে এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় এ প্রথা চালু রয়েছে।

যেসব দেশে এ প্রথা চালু রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বুরকিনা ফাসো, মধ্য আফ্রিকান রিপাবলিক, চাড, কঙ্গো, সুদান, মিশর, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইরাক, ইরান, জর্জিয়া, রাশিয়ান ফেডারেশন, কলম্বিয়া এবং পেরু।

রাষ্ট্র সংঘ বলছে, এ প্রথার উদ্ভব কোথা থেকে তা স্পষ্ট নয়, তবে খ্রিষ্ট ও ইসলাম ধর্ম থেকে এ প্রথা এসেছে বলে মনে করা হয়। বলা হয়েছে, মিশরের মমির মধ্যেও খফজ়ের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, প্রাচীন গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস দাবি করেছেন খ্রিষ্টপূর্ব পাঁচ শতকে, ফোনেসিয়ান, হিটাইট ও ইথিওপিয়ানদের মধ্যে সুন্নত প্রথা চালু ছিল। এ ছাড়াও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে, ফিলিপিন্সে ও উচ্চ আমাজন এলাকার কিছু জনজাতির মধ্যে এই প্রথা চালু ছিল।

 এ প্রথা অনুসরণ করা হয় কেন?

খফজ় প্রথা অনুসরণ করার কারণ এলাকা ভিত্তিতে বিভিন্ন। রাষ্ট্রসংঘ একে পাঁচ ভাগে বিভক্ত করেছে। একটি কারণ হল, নারীর যৌনতা নিয়ন্ত্রণ, দ্বিতীয়ত, সমাজতাত্ত্বিক বা সাংস্কৃতিক কারণ, যেখানে মেয়েদের সুন্নতকে নারীত্বে প্রবেশ বলে ধরে নেওয়া হয় ঐতিহ্য হিসেবে, তৃতীয়ত, স্বাস্থ্য ও নান্দনিকতার কারণ, যেখানে মনে করা হয় মহিলাদের যৌনাঙ্গের বহিরঙ্গ কুৎসিত, চতুর্থত, ধর্মীয় কারণ, (রাষ্ট্রসংঘের দাবি খ্রিষ্ট বা ইসলাম কোনও ধর্মেই এই প্রথার স্বীকৃতি নেই) তথাকথিত ধর্মীয় মতাদর্শের নাম দিয়ে এই প্রথা চালু রয়েছে, এবং শেষত আর্থ-সামাজিক কারণ, যেখানে বিয়ের আগে এই সুন্নত বাধ্যতামূলক, বিশেষ করে যেখানে মহিলারা স্বামীর উপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও কারণের কথা বলেছে, যার মধ্যে রয়েছে মেয়েদের যৌন আকাঙ্ক্ষা কমিয়ে দেওয়ায় যাতে তাদের বিবাহপূর্ব সতীত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে এবং এর ফলে বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কে তারা জড়িয়ে পড়বে না বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া নারীত্ব ও নম্রতার সঙ্গেও এই প্রথা যুক্ত হয়ে থাকতে পারে।

 ভারতে মহিলাদের সুন্নত

পূর্বোক্ত গবেষণা অনুসারে, মহিলাদের সুন্নর বা খফজ় ভারতে একটি প্রাচীন ঐতিহ্য বলে মনে করা হয়, যার মাধ্যমে মহিলাদের যৌনতা নিয়্ন্ত্রণ করা এবং ধর্মীয় গোঁড়াদের শাসন মেনে চলা হয়।

ভারতে এ বিষয়টি সামনে আসে অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় বোহরাদের মহিলা সুন্নতের বিরুদ্ধে দুটি আন্তর্জাতিক মামলার কারণে।

২০১৮ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি এএম খানউইলকর এবং ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের এক বেঞ্চ বোহরা মেয়েদের মধ্যে প্রচলিত এই প্রথা নিষিদ্ধ করার আবেদন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। এই জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের করেছিলেন দিল্লির আইনজীবী সুনীতা তেওয়ারি। আবেদনে তিনি বলেছিলেন এই প্রথা মহিলাদের জীবন ও সম্মানের প্রতি অধিকার লঙ্ঘন।

বোহরা সম্প্রদায়ের বক্তব্য, সংবিধানের ২৫ নং অনুচ্ছেদে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলা রয়েছে বলেই এই প্রথা চলতে দেওয়া উচিত।

Advertisment