বুধবারই রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস ঘোষণা করেছেন যে মুদ্রানীতি কমিটি (এমপিসি) গত দুই দিনের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে বেঞ্চমার্ক সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেপো রেট বা যে হারে আরবিআই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে অর্থ ঋণ দেয় তা বাড়িয়ে ৪ শতাংশ থেকে ৪.৪০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসলে, রিজার্ভ ব্যাংক স্বীকার করে নিয়েছে যে তারা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। কেন একথা বলা হচ্ছে?
গত ২ বছর ধরেই মুদ্রাস্ফীতি ঘটছে
আরবিআইয়ের লক্ষ্য মুদ্রাস্ফীতি ৪ শতাংশ রাখা। তবে, মুদ্রাস্ফীতি কমবেশি হতে পারে। কখনও ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে। কখনও বেড়ে ৬ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে মাত্র একমাস মুদ্রাস্ফীতি ৪ শতাংশর কাছাকাছি ছিল। বাকি সময় এমনকী লকডাউনের মধ্যেও ৪ শতাংশের ওপরে উঠেছে। এমনকী, মুদ্রাস্ফীতিকে ৬ শতাংশের ওপরেও হামেশাই উঠতে দেখা গিয়েছে।
আরও পড়ুন- ঋণে বাড়ছে সুদ, চাপ বাড়বে পকেটে, ব্যাঙ্কগুলি থেকে বেরিয়ে যাবে বিশাল টাকাও, কেন?
মুদ্রাস্ফীতি দীর্ঘসময় ধরে চলেছে
মুদ্রাস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে বহাল থেকেছে। কখনও অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে এজন্য দায়ী করা হয়েছে। যেমন এখন ঘটছে। কখনও খাদ্য সামগ্রী উত্পাদনের ঘাটতিকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। কখনও আবার মৌসুমী বৃষ্টিপাতকে কারণ বলা হয়েছে। আর আরবিআই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বদলে সুদের হার কম রেখে উত্পাদন বাড়ানোর ওপর অগ্রাধিকার দিয়েছে। কিন্তু, মুদ্রাস্ফীতি ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকায় আর্থিক মন্দা দেখা দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ দরিদ্র এমনকী মধ্যবিত্তদের সঞ্চয় এবং উপার্জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অপরিশোধিত তেলের দামবৃদ্ধি নতুন নয়
রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বুধবার তাঁর বিবৃতিতে, ভারতে মুদ্রাস্ফীতির অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে অপরিশোধিত তেলের দামবৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করেছেন। কিন্তু, অপরিশোধিত তেলের দামবৃদ্ধি নতুন কিছু না। এটা বারবার ঘটেছে। আর, শুধুমাত্র এপ্রিলেই না। যখন রিজার্ভ ব্যাংকের নীতি নির্ধারক কমিটি ফেব্রুয়ারিতে বৈঠক করেছিল, তখনই কমিটি আশ্চর্যজনকভাবে পূর্বাভাস দিয়েছিল যে আগামী বছরে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে হবে ৪.৫ শতাংশ।
শুধু মুদ্রাস্ফীতিই নয়, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতিও নতুন নয়
রিজার্ভ ব্যাংক জানিয়েছে, আগামী মাসগুলোয় মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। এর ফলে জ্বালানির দাম, ওষুধের দামে প্রভাব পড়বে। অতীতে বারবার দেখা গিয়েছে তা ৬ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। এবারও সেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর, মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশ থাকলে, সেটা রিজার্ভ ব্যাংকের পক্ষে উদ্বেগজনক। সেক্ষেত্রে নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। অতীতে কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশে পৌঁছলেও রিজার্ভ ব্যাংককে তেমন নীতিগত পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
মুদ্রানীতিতেই গলদ
প্রায়শই মনে করা হয় যে যত তাড়াতাড়ি আরবিআই সুদের হার বাড়ায় বা কমায়, অর্থনীতি তত দ্রুত সাড়া দেবে, নিয়ন্ত্রিত হবে। কিন্তু, বাস্তবে তা হয় না। যদিও এই ধরনের আর্থিক নীতি সময়ের সঙ্গে উন্নত হয়েছে। তা দ্রুত সাড়াও দেয়। সেই নজির বিভিন্ন দেশে আছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তা ফলদায়ক হয়ে ওঠে। কিন্তু, ভারতে আর্থিক নীতি কমিটির হাজারো কৌশলও মুদ্রাস্ফীতি এখনও অবধি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
Read story in English