Advertisment

Explained: গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদে ফের শপথ ভূপেন্দ্র প্যাটেলের, কতটা জানেন তাঁর সম্পর্কে?

গুজরাটের ১৮তম মুখ্যমন্ত্রী হলেন প্যাটেল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Bhupendra Patel 1

ভূপেন্দ্র প্যাটেলের শপথবাক্য পাঠ।

দ্বিতীয়বারের জন্য গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হলেন ভূপেন্দ্র প্যাটেল। সোমবার হেলিপ্যাড ময়দানে তিনি গুজরাটের ১৮তম মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন। এবার ভূপেন্দ্র প্যাটেল ঘাটলোদিয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন। এই কেন্দ্র গান্ধীনগর লোকসভা আসনের মধ্যে পড়ে। সোমবার তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা-সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। শপথ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিজেপিশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও উপস্থিত ছিলেন। এদিন দুপুর ২টোয় প্যাটেলকে শপথবাক্য পাঠ করান গুজরাটের রাজ্যপাল আচার্য দেবব্রত।

Advertisment

প্যাটেলের সঙ্গেই তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন হর্ষ সাংভি, জগদীশ বিশ্বকর্মার মত আরও কয়েকজন বিধায়ক। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। এই নিয়ে সাতবার তারা গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হল। গুজরাট বিধানসভার ১৮২ আসনের মধ্যে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতেছে ১৫৬টি আসন। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস জিতেছে মাত্র ১৭টি আসনে। আপ এই প্রথমবার গুজরাট বিধানসভায় খাতা খুলল। তারা পেয়েছে পাঁচটি আসন।

নির্বাচনে প্যাটেল ১.৯২ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। এই নিয়ে সাতবার বিজেপি গুজরাটে ক্ষমতায় এল। বছর ৬০-এর ভূপেন্দ্র প্যাটেল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছিলেন। শনিবারই তাঁকে বিজেপির বিধায়ক দলের বৈঠকে নেতা নির্বাচিত করা হয়। তারপরই গুজরাটের রাজ্যপালের সঙ্গে রাজভবনে গিয়ে বিজেপির বিধায়ক দলের নেতা হিসেবে সাক্ষাৎ করেন প্যাটেল। সেখানে নতুন সরকার গঠনের দাবি জানান। তবে, সবটাই স্রেফ প্রথা মানার ব্যাপার। কারণ, গুজরাট বিধানসভায় ভূপেন্দ্র প্যাটেলকেই সামনে রেখে নির্বাচনে নেমেছিল বিজেপি। ফলে, গুজরাটে বিজেপির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ের পরই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে মোদীর রাজ্যে প্যাটেলই পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। কিন্তু, কে এই ভূপেন্দ্র প্যাটেল? চলুন, একবার দেখে নেওয়া যাক।

ভূপেন্দ্র প্যাটেলের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য যে তিনি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে বরাবর মেলামেশা চালিয়ে গিয়েছেন। পদমর্যাদা বা ক্ষমতার দম্ভ কখনও তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। পাতিদারদের মধ্যেই একটি উপ-সম্প্রদায় হল কাদভা। সেই সম্প্রদায়ের সদস্য ভূপেন্দ্র প্যাটেল। সেই সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বিজয় রূপানি। প্রথমবারের জন্য বিধায়ক হন ভূপেন্দ্র প্যাটেল। ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে রূপানিকে সরিয়ে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী করা হয় ভূপেন্দ্র প্যাটেলকে। সেই সময় অবশ্য শুধু মুখ্যমন্ত্রী পদেই নয়, বিজেপি গুজরাটের সর্বস্তরে পরিবর্তন এনেছিল। ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে এই পরিবর্তন আনা হয়েছিল। বিজেপি সূত্রে এমনটাই খবর।

আরও পড়ুন- শুভেন্দুদের ‘ডিসেম্বর’ হুঙ্কারের জবাবে অতি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য পার্থর, বঙ্গ রাজনীতিতে শোরগোল

পাতিদাররা বরাবরই বিজেপির ভোট ব্যাংক। কিন্তু, গত কয়েক বছর ধরে বিজেপি থেকে পাতিদাররা মুখ ফেরাচ্ছিল। ২০১৫ সালে পাতিদারদের বিক্ষোভে বারবার ব্যতিব্যস্ত হতে হয়েছে গুজরাটের বিজেপি সরকারকে। আর, পাতিদারদের এই বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন হার্দিক প্যাটেল। এই বিক্ষোভ স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে পাতিদারদের সঙ্গে বিজেপির দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এতে বিজেপি রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে যায়। কারণ, বিজেপি বরাবরই পাতিদারদের সন্তুষ্ট করে চলার নীতি নিয়েছে। পাঁচ জন পাতিদার নেতা ইতিমধ্যে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। যার শুরুটা হয়েছিল চিমনভাই প্যাটেলকে দিয়ে। তারপর বাবুভাই প্যাটেল, কেশুভাই প্যাটেল, আনন্দীবেন প্যাটেল বিভিন্ন সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তালিকার সর্বশেষ সংযোজন হলেন ভূপেন্দ্র প্যাটেল।

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিপ্লোমা পাশ ভূপেন্দ্র প্যাটেল গত ২৫ বছর ধরে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর জামাইয়ের এক নির্মাণ সংস্থা আছে। আহমেদাবাদের দরিয়াপুরে ভূপেন্দ্র প্যাটেলের বাজি বিক্রির দোকানও ছিল। ১৯৯০ সালে তিনি মেমনগর নগরপালিকা নির্বাচনে জয়ী হন। বর্তমানে তাঁর জেতা সেই পৌরএলাকা আহমেদাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত। ভূপেন্দ্র প্যাটেলই আহমেদাবাদ নির্বাচিত হওয়া গুজরাটের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। গুজরাটের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে আহমেদাবাদের বড় ভূমিকা রয়েছে। কারণ, আহমেদাবাদ গুজরাটের বাণিজ্যিক রাজধানী। পাশাপাশি, সবচেয়ে বড় শহরও।

২০১০ সালে ভূপেন্দ্র প্যাটেল প্রথমবার বড় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেবার জিতেছিলেন আহমেদাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের নির্বাচনে। জয়ের পর হয়েছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারপার্সন। এরপর ২০১৭ সালে প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের শশীকান্ত প্যাটেলকে লক্ষাধিক ভোটে পরাস্ত করেন। তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারে কখনও কোনও কলঙ্ক লাগেনি। আর, এই কারণেই ভূপেন্দ্র প্যাটেলের মুখ্যমন্ত্রী হওয়াটাও সহজ হয়েছে। তাই ২০২১ সালে প্যাটেল যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হন, সেই সময় তাঁকে টুইটে স্বাগত জানাতে দেরি করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সময় মোদী টুইট করেন, 'আমি বহু বছর ধরে ওঁনাকে চিনি। তাঁর কাজ রীতিমতো উদাহরণ তৈরি করেছে। তা সে বিজেপির মধ্যেই হোক, প্রশাসনেই হোক কিংবা সামাজিক ক্ষেত্র-সহ সবক্ষেত্রেই। তিনি নিশ্চিতরূপে গুজরাটের উন্নয়নে বড় ভূমিকা নেবেন।'

Read full story in English

Swearing in Bhupendra Patel Gujrat Assambly Election 2022
Advertisment