ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি হলেন দ্রৌপদী মুর্মু। দেশের স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ৭৫তম বছরে তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। পরাজিত করলেন বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে। বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই ফলাফল ঘোষিত হল। বছর ৬৪-র দ্রৌপদী মুর্মুই প্রথম আদিবাসী এবং দ্বিতীয় মহিলা যিনি দেশের প্রথম নাগরিক হলেন। পাশাপাশি, ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার পদেও আসীন হলেন। রাষ্ট্রপতি ভবনের নতুন কর্ত্রীর সম্পর্কে এখানে কিছু বিষয়ের উল্লেখ করা হল।
তাঁর প্রাথমিক জীবন
মুর্মু খুব অল্প বয়স থেকেই পিছিয়ে পড়া শ্রেণির একজন হয়ে সামনের সারিতে উঠে এসেছেন। ১৯৫৮ সালে তিনি এক সাঁওতাল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ওড়িশার পিছিয়ে পড়া জেলা ময়ূরভঞ্জ। সেখানকার উপরবেদা পঞ্চায়েতের সাতটি গ্রামের একটিতে তাঁর পরিবার থাকত। উপড়বেদা থেকে তিনিই প্রথম মেয়ে, যিনি কলেজে পা রেখেছেন। পড়েছেন রামাদেবী মহিলা কলেজ। যা এখন ভুবনেশ্বরের রামাদেবী মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়। রাজনীতিতে পা রাখার আগে তিনি ময়ূরভঞ্জের রায়রাংপুরের শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন সেন্টারের শিক্ষক ছিলেন। পরে ওড়িশা সরকারের সেচ ও বিদ্যুৎ বিভাগে জুনিয়র সহকারি আধিকারিক হিসেবে কাজে যোগ দেন।
আরও পড়ুন- ইতিহাস গড়লেন দ্রৌপদী মুর্মু, রাষ্ট্রপতির কুর্সিতে এই প্রথম আদিবাসী মহিলা
সফল রাজনৈতিক জীবন
মুর্মু ১৯৯৭ সালে রায়রাংপুর নগর পঞ্চায়েতের নির্বাচনে জয়লাভ করেন। কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ এবং ২০০৪ সালে তিনি দুই মেয়াদে ওড়িশা বিধানসভার সদস্য হয়েছিলেন। তার মধ্যে ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের বিজেডি-বিজেপি জোট সরকারে মন্ত্রী ছিলেন। ওড়িশা সরকারের বাণিজ্য ও পরিবহন এবং পরবর্তীকালে মৎস্য ও পশুপালন দফতরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরিবহণমন্ত্রী হিসেবে, তিনি ওড়িশার ৫৮টি মহকুমায় পরিবহণ অফিস স্থাপনের জন্য বিশেষ কৃতিত্ব লাভ করেছিলেন। বিজেপির তপসিলি উপজাতি মোর্চার সহ-সভাপতি হিসেবেও কাজ করেছেন।
তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রাম
সফল রাজনৈতিক জীবন সত্ত্বেও, মুর্মুকে বিভিন্ন সময় নানা বাধার মুখে পড়তে হয়। ২০০৯ সালে তিনি ময়ূরভঞ্জ কেন্দ্র থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু, বিজেডি এবং বিজেপি সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণে হেরে যান। নির্বাচনী ধাক্কার পাশাপাশি এই সময়ে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও বড় ধাক্কা লাগে। পরের ছয় বছরে, তিনি তাঁর পরিবারের তিন সদস্যকে হারান। তাঁদের মধ্যে একজন বড় ছেলে লক্ষ্মণ মুর্মু ২০০৯ সালে মারা যায়। ছোট ছেলে সিপ্পুন মুর্মু ২০১৩ সালে মারা যায়। ২০১৪ সালে মারা যায় তাঁর স্বামী শ্যামচরণ মুর্মু।
ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল
মুর্মু ২০১৫ সালে ঝাড়খণ্ডের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। ২০১৬ সালের নভেম্বরে তিনি রাজ্যপাল থাকাকালীন মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসের নেতৃত্বে ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সরকার দুটি শতাব্দীপ্রাচীন ভূমি আইন - ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ব (সিএনটি) আইন ও সাঁওতাল পরগনা প্রজাস্বত্ব (এসপিটি) আইনে সংশোধনী পাস করে। যাতে শিল্পে ব্যবহারের জন্য জমি হস্তান্তর সহজ ও নিশ্চিত করা হয়। ওই আইন দুটির বিরুদ্ধে আদিবাসীরা ব্যাপক প্রতিবাদ জানান। তাঁদের অভিযোগ, সরকারের এই পদক্ষেপে জমির ওপর তাঁদের অধিকার খর্ব হবে। ২০১৭ সালের জুনে মুর্মু বিলগুলো ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সরকারকে ব্যাখ্যা করতে বলেছিলেন যে সংশোধনীগুলো কীভাবে উপজাতিদের উপকৃত করবে। যে দলের তিনি নেত্রী, সেই দলের সরকারের পাস করা বিতর্কিত বিলগুলোকে সম্মতি দিতে অস্বীকার করায় মুর্মু প্রশংসা ও সম্মান পেয়েছিলেন।
আদিবাসী নেত্রী
মুর্মু, একজন সাঁওতাল নেত্রী হিসেবে তাঁর সম্প্রদায়ের জন্য এবং সাধারণ মহিলাদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন। আদিবাসীদের সমস্যাগুলির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। ২০১৮ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে রাজ্যপাল মুর্মু বলেছিলেন যে যদিও ঝাড়খণ্ড সরকার (তখন শাসনে বিজেপি) এবং কেন্দ্র আদিবাসীদের জন্য ব্যাংকিং পরিষেবা এবং অন্যান্য প্রকল্পের সুবিধা প্রসারিত করার জন্য কাজ করছে। কিন্তু, এসসি এবং এসটিদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। এই অভিযোগ করার পাশাপাশি, মুর্মু আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সাহিত্যের অনুবাদেরও আহ্বান জানিয়েছিলেন।
Read full story in English