Food and language of Bengal and Portuguese: ভারতবর্ষে ইউরোপীয়দের পদার্পণ হয়েছিল পর্তুগিজদের মাধ্যমে। এই রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সেই পর্তুগিজদের সম্পর্কও বহু পুরোনো। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি বরাবরই বহিরাগতদের আপন করে নিয়েছে। ইউরোপীয় পর্তুগিজদের প্রতিও বাঙালির দৃষ্টিভঙ্গি ছিল আপনজনের মতই। বাঙালির রসগোল্লা থেকে বাংলা ভাষা, সবকিছুর সঙ্গেই পর্তুগিজরা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছিল। মধ্য কলকাতায় হোলি রোজারির আকর্ষণীয় ধূসর এবং নীল ক্যাথেড্রালটি রয়েছে। যা স্থানীয়ভাবে পর্তুগিজ চার্চ বলে পরিচিত। এই চার্চ বর্তমান কলকাতা শহরের উপেক্ষিত পর্তুগিজ ঐতিহ্যের বিরল আভাস দেয়।
ফাদারের বক্তব্য
ফাদার ফ্র্যাঙ্কলিন মেনেজেস জানিয়েছেন, ১৬৯০ সালে এই গির্জা তৈরি হয়। বর্তমানে এই গির্জার প্রশাসনে পর্তুগিজদের প্রভাব ছিল কম। তিনি লেনিন সরণিতে জেসাসের স্যাক্রেড হার্ট এবং শিয়ালদহ মার্কেটের চার্চ অফ আওয়ার লেডি অফ ডলোরসের উল্লেখ করে বলেছেন, 'শহরের আরও দুটি পর্তুগিজ চার্চের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।' এই দুটো গির্জার একটি ১৮৪৪ সালে এবং অপরটি ১৯৩০ সালে পর্তুগিজ মিশনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। সেই সম্পর্কে বর্তমানে কার্যত বিস্মৃত।
ইতিহাসবিদের বক্তব্য
ইতিহাসবিদ জর্জ উইনাস পশ্চিমবঙ্গে পর্তুগিজদের অবস্থানকে, একটি 'ছায়া সাম্রাজ্য' বলে দাবি করেছেন। পর্তুগিজরা পশ্চিমবঙ্গে নানা দুষ্কর্মের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছিল। এজন্য শাস্তিও ভোগ করেছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিরান্ডা হাউসের ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক রাধিকা চাড্ডা বলেছেন, 'বাংলায় পর্তুগিজরা এশিয়ায় পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের উপস্থিতির প্রমাণ হিসেবে টিকে ছিল। সেই সঙ্গে বাংলার ইতিহাস, ব্যবসার সঙ্গেও তাদের নাম জুড়ে আছে।'
ভারতে পর্তুগিজদের প্রবেশ
পর্তুগিজরা ১৪৮৮ সালে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে। এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের সামুদ্রিক বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলে। একদশক পরে, ভাস্কো দা গামা ভারতের পশ্চিম উপকূল কালিকটে এসে পৌঁছন। সেখানে সামুদ্রিক সাম্রাজ্য 'এস্তাদো দ্য ভারত' প্রতিষ্ঠিত হয়। অ্যাডমিরাল আলফোনসো ডি আলবুকার্কের নেতৃত্বে, পর্তুগিজরা তাদের সদর দফতর গোয়ায় স্থানান্তরিত করেছিল। ১৫১১ সালে মালয়েশিয়ায় মালাক্কা দখলের পর, পর্তুগিজরা বঙ্গোপসাগরকে তাদের অগ্রগতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বেছে নিয়েছিল।
আরও পড়ুন- ব্রিটেনের পালাবদলে ভারতের লাভ না লোকসান, কী ভাবছেন মোদী?
বাংলায় পর্তুগিজরা
পর্তুগিজ বণিক জোয়াও কোয়েলহো ১৫১৭ সালে বাংলায় এসে পৌঁছন। একবছর পরে, গোয়া থেকে একটি সরকারি নৌবহর (ক্যারেরা) পাঠানো হয়েছিল। যা এই সফরকে একটি বার্ষিক ঐতিহ্যে পরিণত করেছিল। তৎকালীন অবিভক্ত বঙ্গে চাল, চিনি, গবাদি পশু, মাছ এবং বস্ত্রের প্রচুর উৎপাদনের দিকে নজর পড়েছিল পর্তুগিজদের। আর, এসব পণ্যকে মাথায় তারা ব্যবসার সুযোগ খুঁজে নিয়েছিল।