Advertisment

খাবার প্রচুর, সমস্যা মানুষের কাছে পৌঁছনো

এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যেখানে কৃষি পণ্য চাষির ঘরে পচে যাচ্ছে আর অন্যদিকে বাজারে জোগানের সংকট তৈরি হচ্ছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

কৃষিপণ্য প্রয়োজনের তুলনায় প্রচুর পরিমাণে রয়েছে (ছবি- পার্থ পাল)

বাজার বন্ধ, মাঠে কৃষি শ্রমিক নেই, পরিবহণ ব্যবস্থা স্তব্ধ, এ অবস্থায় ভারত কি করোনাভাইরাস জনিত লকডাউনের ফলে খাদ্য সংকটের মুখে পড়তে চলেছে?

Advertisment

সম্ভব, যদি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পদক্ষেপ না করা হয়। যদি খাদ্যের লভ্যতার কথা ওঠে, তাহলে সারা দেশে মজুতের পরিমাণ যথেষ্ট। এবং গত বছরের উদ্বৃত্ত বর্ষার সুবাদে ব্যাপক পরিমাণ রবি শস্যও আসতে চলেছে।

কিন্তু জোগান শৃঙ্খলে ব্যাপক সমস্যার কারণে এ সব খাবার পাতে পৌঁছনো সমস্যা হতে পারে। কৃষি পণ্য বাজার কমিটি (APMC)পরিচালিত বাজার বন্ধ, পণ্যের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাওয়াও বন্ধ। দেশ সমস্যা কতটা হতে পারে, তা নির্ভর করছে কত দ্রুত ও কার্যকর উপায়ে মাঠ থেকে পাতের সংযোগ ফের চালু করা যায়।

সবচেয়ে ক্ষতি কোন খাদ্য সামগ্রীতে হয়েছে

খাদ্যশস্যের লভ্যতা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। গত ১ মার্চের হিসেবে ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার কাছে ৭৭.৬ মিলিয়ন টন গম ও চাল রয়েছে।

খাদ্যবীজের ক্ষেত্রে ১৯ মার্চের হিসেবে মজুত পণ্যের পরিমাণ ২.২৫ মিলিয়ন টন। এর মধ্যে আসন্ন রবি শস্যের  হিসেব ধরা নেই।

বহু পরিমাণ রবি শস্য কাটা হয়ে গেলেও, এখনও মাঠে ফসল রয়েছে। কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা কম, এবং পরিযায়ী শ্রমিকরা আতঙ্কে যেভাবে দল বেঁধে চলে যেতে শুরু করে দিয়েছেন, তাতে সমস্যা হবেই।

ফসল কাটার পরে তা প্যাকিং করতে হবে এবং বাজারে নিয়ে যেতে হবে। এসবের জন্য ফের শ্রমিক প্রয়োজন হবে, প্রয়োজন হবে গাড়িচালক ও নিরবচ্ছিন্ন চলাচল।

উৎপাদিত পণ্য ও তার গ্রাহকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পৃথক রাজ্যের হন। বিহারের উপ মুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদী বলেছেন, “আমরা চাল পাই পশ্চিমবঙ্গ থেকে, ডাল পাই মধ্য প্রদেশের কাটনি ও সাতনা থেকে এবং সরষের তেল পাই রাজস্থান থেকে।”

কিন্তু রাজ্যের সীমানা যেহেতু বন্ধ, সে কারণে, পরিবহণ কতটা মসৃণ হবে, সে নিয়ে কিছুই স্পষ্ট নয়। সরকার লক ডাউনে পণ্য পরিবহণে ছাড় দিলেও, হাইওয়েতে ও স্থানীয় পুলিশের হাতে তী পরিস্থিতি হচ্ছে, তা পৃথক একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যাঁরা প্রয়োজনীয় সামগ্রী ডেলিভারি করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা নেবার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে সরকার বারবার বলে চলেছে এঁদের লক ডাউনের বিধিনিষেধের আওতা থেকে বাদ রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মধ্যে থেকে বিভাজন তুলে নেওয়া হয়েছে, রবিবার থেকে সমস্ত পণ্যের ব্যাপারেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি চেকপোস্টে হেনস্থার আশঙ্কায় ট্রাক ড্রাইভার ও পরিবহণ ব্যবসায়ীরা এখনও মুখ ফিরিয়ে রয়েছেন।

সমস্ত ক্ষেত্রের পরিযায়ী শ্রমিকরা বাস্তুচ্যুত এবং অনেকেই বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন এবং সমস্ত পর্যায়েই ডেলিভারি করার লোকের আকাল দেখা দিয়েছে।

কৃষি উৎপাদনের পরিবহণ নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের আগের রিপোর্টে বলা হয়েছে, “আন্তঃরাজ্য  ট্রাক চলাচলের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার জেরে অন্ধ্র সীমান্তে দাঁড়িয়ে পড়ছে টোমাটো বোঝাই ট্রাক। কর্নাটকের বেগুন বোঝাই গাড়ি হায়দরা বাদ পৌঁছতে পারছে না। রত্নগিরি ও সাংলির আলফোনসো আম এবং আঙুর তোলা হচ্ছে, কিন্তু তা কোথাও পৌঁছনোর জো নেই।”

ফলে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যেখানে কৃষি পণ্য চাষির ঘরে পচে যাচ্ছে আর অন্যদিকে বাজারে জোগানের সংকট তৈরি হচ্ছে। এ সমস্যা শহরে ও মেট্রো শহরগুলিতে ততটা অনুভূত হবে না, কারণ সরকার সেখানে রাজ্যের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় উৎপাদন পাবার জন্য বাজার খোলা রাখা নিশ্চিত করেছে।

সমস্যা হবে ছোট ও শহর ও পিছিয়ে থাকা জায়গায়, যেখানে ছোট ছোট বাজারের মাধ্যমে সামগ্রী পৌঁছয়।

জোগান শৃঙ্খলের সমস্যায় যুক্ত হয়েছে ট্রাক ড্রাইভারদের পরিষেবা প্রদানকারী ধাবাগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, কৃষিপণ্য প্যাকিংয়ে এবং মাল তোলা ও মাল নামানোর জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিকদের অনুপস্থিতিতে।

 কী করা যেতে পারে

 জোগান শৃঙ্খলে দ্রুত তৈলদান প্রয়োজন - অর্থাৎ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে নির্দেশ দিতে হবে যাতে কৃষি শ্রমিকদের হেনস্থা না করা হয় এবং রাজ্য সীমানায় পণ্যবাহী পরিবহণ বাধাহীন ভাবে চলাচল করতে পারে।

মুদির সামগ্রী, ফল ও সব্জির খুচরো বিক্রেতারা এ ধরনের নির্দেশে উপকৃত হবেন। যেহেতু যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ, রেলকে কৃষিপণ্য সরবরাহের কাজে লাগানো যেতে পারে।

APMC বাজারগুলিকে আরও ভালভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে, সরকারি স্কুলে বা এরকম জায়গায় ছোট ছোট বাজার বসানো যেতে পারে যাতে অনেক মানুষ বড় কোনও বাজারে জড়ো না হন। কৃষকদের ঘন্টা বা দিন অনুযায়ী সময় বণ্টন করা যেতে পারে, একইসঙ্গে তাঁদের পণ্য বিক্রির ব্যাপারে নিশ্চয়তাও দিতে হবে। সমস্যা খাদ্যের নয়, মানুষের কাছে খাবার পৌঁছবার। দ্রুত সরকারি পদক্ষেপ সে সমস্যা সমাধান করতে পারে।

coronavirus
Advertisment