Advertisment

দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে কেন মধ্যবিত্তদের রক্ষা করা জরুরি?

অতিমারীর জেরে গত এক বছর ধরে সঞ্চয় ভেঙে পরিবার চালাতে হয়েছে সকলকে। দীর্ঘকাল ধরে লড়াই করার সঞ্চয় মধ্যবিত্তের নেই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

করোনাভাইরাসের দাপটে বিশ্বের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এর নেপথ্যে অবশ্য রয়েছে বেশ কিছু কারণ। এক, অর্থনৈতিক বৈষম্য নির্বিশেষে এই ভাইরাস কবলিত হয়েছেন সকলে। দ্বিতীয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য যা প্রয়োজন সেই যোগাযোগ বাড়লেই বাড়ছে করোনা। আবার ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করার অর্থ অর্থনীতির চাকা বন্ধ করা। করোনার প্রথম ঢেউয়ের দাপটে যে ক্ষতি দেখেছিল বিশ্ব, সেটির পুনরাবৃত্তি চায় না কোনও দেশই।

Advertisment

ভারতও ব্যতিক্রম নয়। চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোভিডের মারাত্মক আঘাত ও হানা সত্ত্বেও জনগণের আর্থিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এপ্রিলের শুরু থেকে, আশা করা হয়েছিল যে ভারতের অর্থনীতি দ্রুত ফিরবে। ২০২০ সালে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তা দ্রুতই পূরণ করবে। কিন্তু সারা দেশে যেভাবে কোভিড ছড়িয়ে পড়েছে তা এখন অসম্ভব হয়ে পড়ছে। বিগত আর্থিক বছরে যে আর্থিক সংকোচনের মুখোমুখি হয়েছে দেশ তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আরও ভয়াবহ হতে চলছে, সেরোসার্ভের রিপোর্টে চূড়ান্ত সতর্কতা

জিডিপি সংকোচনের অর্থ হল লক্ষ লক্ষ মানুষের আয় কমবে, উপার্জনে ধাক্কা খাবে মধ্যবিত্ত। খারাপ সময় যে আসছে তা বলাই বাহুল্য। কারণ অতিমারীর জেরে গত এক বছর ধরে সঞ্চয় ভেঙে পরিবার চালাতে হয়েছে সকলকে। দীর্ঘকাল ধরে লড়াই করার সঞ্চয় মধ্যবিত্তের নেই। এতএব চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থনৈতিকের পাশাপাশি মানসিক, শারীরিক বিপর্যয়ও বাড়ছে তাই সমাজে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি রিসার্চ সেন্টার জানিয়েছে অতিমারীর আগে ভারতের ৯৯ মিলিয়ন মানুষ বিশ্ব মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। অতিমারী চলাকালীন সেই সংখ্যা কমে হয়েছে ৬৬ মিলিয়ন। অন্যদিকে ভারতের দরিদ্রের সংখ্যা ৫৯ মিলিয়ন থেকে হয়েছে ১৩৪ মিলিয়ন। অর্থাৎ দারিদ্র্য বাড়ছে ভারতে। অবক্ষয় হচ্ছে মধ্যবিত্তের, যা গণতান্ত্রিক সমাজে কাম্য নয়।

মধ্যবিত্ত আসলে কারা?

সাধারণত অর্থনৈতিক গবেষকরা মধ্যবিত্তকে চিহ্নিত করার জন্য আয় বা ব্যয়ের হিসেব ব্যবহার করে থাকে। উপার্জনের ভিত্তিতে শ্রেণিভাগ হয়। নগদ দিয়ে কেবল মধ্যবিত্তের হিসেব ধরা হয় না। এটি নির্দিষ্ট মান, মনস্তত্ত্ব, শিক্ষামূলক এবং পেশাগত পছন্দগুলি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকেরা ভাল ভাল বেতনের চাকরি বা ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে, নিজস্ব একটি বাড়ির ভাবনা, নিরাপদ অবসর গ্রহণের চেষ্টা করে এবং তাদের পরিবারের স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষাগত চাহিদা সুরক্ষিত করতে চায় । মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রতিটি প্রজন্ম আশা করে যে এর পরবর্তী প্রজন্ম কিছুটা ভাল করবে।

আরও পড়ুন, মারাত্মক আকার ধারণ করতে চলেছে করোনা সংক্রমণ, দ্বিতীয় পর্যায়ে ক্ষতি বেশি

কেন অর্থনীতি বাঁচাতে মধ্যবিত্তরা গুরুত্বপূর্ণ?

১৯৮৪ সালে নিউইয়র্ক টাইমসে সুপরিচিত রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ লেস্টার থুরো বলেছিলেন যে আমেরিকান মধ্যবিত্ত শ্রেণি সঙ্কুচিত হওয়া আমেরিকান রাজনৈতিক গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগের কারণ ছিল। তিনি এও বলেন, "কার্ল মার্কস অনিবার্য বিপ্লব হিসাবে যা দেখেছিলেন তা এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই হয়েছিল যে অর্থনীতি অবশেষে ধনী ও দরিদ্রদের সমন্বয়ে দ্বিপথের আয় বিতরণ করবে। এই পরিস্থিতি যদি থাকে তাহলে দরিদ্ররা বিদ্রোহ করবে, ধনীদের ধ্বংস করবে এবং সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করবে। তবে মার্কসের ভবিষ্যদ্বাণী করা বিপ্লব ঘটেনি কারণ তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থানের পূর্বাভাস দেননি।

বিশ্বজুড়ে মধ্যবিত্ত সঙ্কুচিত হয়ে আসছে এবং এই প্রবণতাটিকে উদ্বেগজনক বলে মনে করা হচ্ছে। “মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির মধ্যে এখন অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতি ক্রমহ্রাসমানের অসন্তুষ্টি বাড়ছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল যার মাধ্যমে একটি সঙ্কুচিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং বৃদ্ধিকে বিপর্যস্ত করতে পারে। ভারতে বর্তমানে এই চিন্তারই উদ্রেক ঘটেছে। সমাজ, বাজার দর বৃদ্ধি, পেট্রোজাত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সব মিলিয়ে মধ্যবিত্তের হাঁড়িতে টান।

মধ্যবিত্তেরা সমাজকে টিকিয়ে রাখে। মাঝের স্তরটির অবক্ষয়ের অর্থ তাই সমাজের ভারসাম্য নষ্ট। তা সে আর্থিক হোক কিংবা সামাজিক। এক শ্রেণির হাতে প্রচুর অর্থ, আরেক শ্রেণি নিঃস্ব গণতান্ত্রিক দেশে তা সম্ভব নয়। কাঠামো ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। তাই মধ্যবিত্ত থাকবে কি না সে চেষ্টা, দায় সরকারের। বাকিটা ভবিষ্যৎ।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

indian economy Market Economy
Advertisment