সেঙ্গোল হল এক রাজত্বের ধর্মীয় চিহ্ন। যাতে মিশে রয়েছে দক্ষিণ ভারতীয় ঐতিহ্য। ভারতের নতুন সংসদ ভবনে ধার্মিকতার নমুনা হিসেবে রাজদণ্ড স্থাপিত হল। আর, তারই মাধ্যমে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে এই সেঙ্গোল। যার জেরে সেঙ্গোলের কাহিনি নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। সত্যিটা কী? কী বলছে ইতিহাস? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিনিধি অলিন্দ চৌহানকে জানালেন দক্ষিণ ভারতের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও লেখক ড. মনু পিল্লাই।
প্রশ্ন- সেঙ্গোল কি? এর সাথে কোন ঐতিহ্য, কোন যুগ যুক্ত? কোন রাজবংশ সেঙ্গোল ব্যবহার করত?
উত্তর- সেনকোল বা চেঙ্কোল বা সেঙ্গোল হল একটি রাজদণ্ড। যা ক্ষমতার সঠিক পরিচালনার উদাহরণ হিসেবে যুক্ত। এই রাজদণ্ড রাজত্ব, ধার্মিকতা, ন্যায়বিচার এবং কর্তৃত্বকে নির্দেশ করে। এর উৎপত্তিস্থল তামিলনাড়ুতে। এই দণ্ড রাজার প্রতীক। মাদুরাই নায়করা সেনকোলকে মন্দিরে দেবী মীনাক্ষীর সামনে নিয়ে যেতেন। তারপর সিংহাসনে বসতেন। যা ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে রাজার ভূমিকাকে তুলে ধরত। রামনাদের সেতুপতিরা,সপ্তদশ শতাব্দীতে যখন প্রথম রাজার মর্যাদা অর্জন করেছিল, তখন তাঁরা রামেশ্বরম মন্দিরের পুরোহিতদের কাছ থেকে এই সেঙ্গোল আনুষ্ঠানিকভাবে পেয়েছিলেন। এটি ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে দেবতার প্রতি শাসকের দায়বদ্ধতাকে চিহ্নিত করে। রাজত্বের প্রধান থেকে আরও উন্নত রাজা হওয়ার লক্ষ্য তৈরি করে। সব মিলিয়ে সেঙ্গোলকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় রাজত্বের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে।
প্রশ্ন- ১৯৪৭ সালে নেহরুকে কি এই রাজদণ্ড হস্তান্তর করা হয়েছিল?
উত্তর- তামিলনাড়ুর হিন্দু নেতারা নেহরুকে একটি সেঙ্গোল উপহার দিয়েছিলেন। তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। যদিও দাবি করা হয় যে এটি একটি বড় ঘটনা ছিল। লর্ড মাউন্টব্যাটেন নাকি ক্ষমতা হস্তান্তরকে বোঝাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি হস্তান্তর করেছিলেন। যা, অতিরঞ্জিত কাহিনি বলেই অনেকে মনে করেন। আসলে মাউন্টব্যাটেন যে কোনও অনুষ্ঠান হলেই তাতে অংশগ্রহণ করতে বেশ ভালোবাসতেন। ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সেঙ্গোল বদল নিয়ে তেমন কোনও বিরাট গুরুত্ব ১৯৪৭-এ আরোপ করা হয়নি। অন্তত তার প্রমাণ নেই। তাই অনেকেই মনে করেন, এটা একটা ছোট ঘটনা ছিল। হিন্দু নেতারা সম্মানের চিহ্ন হিসেবে সেঙ্গোল নেহরুর কাছে পেশ করেছিলেন। আর, তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। নেহরুর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ইতিহাস যতটুকু জানায়, তা হল- তিনি রাজকীয় আচার-অনুষ্ঠানের প্রতি মোটেও আকৃষ্ট হননি। আর, সেই কারণেই, সেঙ্গোল এতদিন এক মিউজিয়ামে রাখা ছিল।
আরও পড়ুন- সেঙ্গলের সামনে মাথা নুইয়ে প্রণাম, পুজা-পাঠ মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধন মোদীর
প্রশ্ন- সরকার বলেছে যে সি রাজাগোপালাচারীই নেহরুকে বিশেষ অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়েছিলেন। এটা কি সত্যি?
উত্তর- এর উত্তর একমাত্র সরকারই দিতে পারে। কারণ, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি সরকার সর্বসমক্ষে আনেনি। তবে, বিষয়টি গল্পের আকারে চর্চিত। তবে, এই ধরনের কিছু ঘটে থাকলেও তা আমাদের দেশে অপ্রত্যাশিত নয়। অনেকেই যেমন বিশ্বাস করেন, সব গল্পের পিছনে কিছু সত্যি লুকিয়ে আছে। তবে, তার সঙ্গে অনেক রং জুড়ে সেই সব কাহিনি বহুচর্চিত হয়ে যায়। তবে, জনসাধারণ সত্যের চেয়ে গল্পই অনেক সময় বেশি পছন্দ করেন।