/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/04/Bhatt.jpg)
ফাইল ছবি।
জেলে থাকা ও চাকরি খোয়ানো আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাট আবারও শিরোনামে। হেফাজতে হত্যা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন জামযোধপুরের মহেশ চিত্রোদা, তিনি একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছেন। প্রথমে গুজরাত হাইকোর্টে তিনি জানিয়েছিলেন, সঞ্জীবের বিরুদ্ধে ৩০ বছরের পুরনো এই অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নিতে চান। বৃহস্পতিবার একটি হলফনামা জমা দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, তিনি মামলা প্রত্যাহার নিয়ে আগের আবেদন তুলে নিতে চান। যার অর্থ, ৩০ বছর পুরনো মামলা তিনি প্রত্যাহার করতে চান না। যাও বা সঞ্জীবের অন্ধকার জীবনে একটি রুপোলি রেখা দেখা গিয়েছিল, তা ফের উবে যাওয়ার শামিল। এই প্রসঙ্গে একটি গোটা বই লিখে ফেলা যায়, কিন্তু আমরা সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করব। প্রথমেই জামযোধপুরের ঘটনায় নজর দিতে হবে।
জামযোধপুরের ঘটনা
হেফাজতে প্রভুদাস বৈষ্ণনানি নামে এক ব্যক্তিকে নির্যাতন এবং হত্যার অভিযোগে জামনগর আদালত ২০১৯ সালে দোষী সাব্যস্ত করে সঞ্জীব ভাট সহ সাত পুলিশ আধিকারিককে। ভাটের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে জামযোধপুরের ঘটনা। তা অবশ্য অনেক আগের। ১৯৯০ সালে, সাম্প্রদায়িক হিংসা বাঁধানোর অভিযোগে জামযোধপুর থেকে ১৩৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যে হিংসার ঘটনাটা ঘটেছিল তৎকালীন বিজেপি সভাপতি লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথযাত্রা আটকানো এবং তাঁকে গ্রেফতারির জেরে। বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সে দিন ভারত বনধের ডাক দিয়েছিল। ধৃতদের মধ্যে ছিলেন প্রভুদাস। পরে যার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় কাঠগড়ায় তোলা হয় সঞ্জীব ভাট-সহ পুলিশ আধিকারিকদের।
বৈষ্ণনানির ভাই অমৃতলাল অভিযোগ করেন, বৈষ্ণনানির উপর হেফাজতে নির্যাতন চালানো হয়েছিল, তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এর পর, ২০০২-এ গুজরাত হিংসা, নানাবতী-মেহতা কমিশনে ভাটের সাক্ষ্য ২০১১-র মে ও জুলাইয়ের মধ্যবর্তী সময়ে। ভাটের স্ত্রী শ্বেতার দাবি, নানাবতী কমিশনে ভাটের সাক্ষ্যের পরই রাজ্য সরকার 'সুরক্ষা' প্রত্যাহার করে নেয়। মামলা শুরু হয় আদালতে। ভাটের বিরুদ্ধে বৈষ্ণনানিকে হত্যার অভিযোগ শুধু মৃতের ভাই করেননি, দাঙ্গার সময় ধৃত অন্তত আরও চার জন করেছেন।
ফার্স্টক্লাস জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হেফাজতে অত্যাচারের এই অভিযোগ করেন তাঁরা। এঁদের মধ্যে মহেশ চিত্রোদা একজন। এছাড়াও চেতন প্রতাপরাই জানি, রভজি হরজি সিনোজিয়া, দেবজি কালারিয়া ছিলেন। গুজরাত হাইকোর্টে দুই অভিযোগকারী চেতন জানি এবং রভজি সিনোজিয়ার মামলা খারিজ করার আবেদন জানান সঞ্জীব এবং আর একজন অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিক প্রবীণ জালা। আদালত আভিযোগ দুটি ২০০৯ সালে খারিজ করে দেয়। ১৯৯৯ সালে চিত্রোদার অভিযোগটিও খারিজের দাবি জানানো হয়। ২০১৯ সালে হাইকোর্টে এই মামলার শুনানিতে ভাটের তরফে কেউ হাজির না থাকায় সেই মামলা টেকেনি।
গুজরাত সরকারও এই অভিযোগ খারিজের বিরুদ্ধে ছিল। ভাট তাঁর সাজা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন গুজরাত হাইকোর্টে, জামিনের আবেদনও করেন। যা ২০১৯-এর সেপ্টেম্বর নাকচ হয়ে যায়। এই আবেদন সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে রয়েছে এখন।
ড্রাগ মামলা
সঞ্জীব ভাটের বিরুদ্ধে রয়েছে মিথ্যা ড্রাগ মামলায় এক আইনজীবীকে ফাঁসানোর অভিযোগও। ঘটনা ১৯৯৬ সালের। অভিযোগ, রাজস্থানের এক আইনজীবী সুমের সিং রাজপুরোহিতকে দেড় কেজি আফিম সহ পালনপুরের হোটেল থেকে গ্রেফতার করা হয়। রাজপুরোহিতের অভিযোগ, তাঁকে ফাঁসিয়েছেন সঞ্জীব।
মোদী-যোগে বিতর্ক
২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০২। গোধরা-কাণ্ড। অযোধ্যা থেকে ফেরার পথে গোধরা রেলস্টেশনে সবরমতি এক্সপ্রেসে আগুন লাগে, ট্রেনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেলেন ৬৩ জন হিন্দু তীর্থযাত্রী। এই ঘটনার পর গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাড়িতে একটি বৈঠক ডাকা হয় বলে দাবি করেছিলেন গুজরাতের সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হরেন পাণ্ডিয়া। সেই বৈঠকে মোদীর বক্তব্য উস্কানিমূলক ছিল বলে অভিযোগ করেন পান্ডিয়া।
২০০৩ সালের ২৬ মার্চ সকালে হরেন পাণ্ডিয়াকে খুন করা হয়। হরেন ২৭ ফেব্রুয়ারির ওই বৈঠকে কয়েকজন পুলিশ অফিসার ছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। তাতে যদিও নাম ছিল না সঞ্জীব ভাটের, কিন্তু সঞ্জীব ২০১১ সালের ১৪ এপ্রিল, অর্থাৎ ঘটনার ৯ বছর পর সুপ্রিম কোর্টে একটি হলফনামা দিয়ে দাবি করেন, তিনি বৈঠকে ছিলেন এবং মোদীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তোলেন।
ভাট ছ'জন প্রত্যক্ষদর্শীর নাম করেন হলফনামায় যাঁরা তাঁর বৈঠকে থাকার প্রমাণ, তার মধ্যে একজন ছিলেন ভাটের সরকারি গাড়ির চালক কনস্টেবল কে ডি পন্থ। ভাট যে হলফনামা সুপ্রিম কোর্টে জমা দিয়েছিলেন, তাতে পন্থের সইও ছিল। এর পর, ২০১১ সালের ২৪ জুন পন্থ ভাটের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর করেন। সেখানে অভিযোগ করা হয়, জোর করে, হুমকি দিয়ে ভাট মিথ্যা হলফনামায় সই করিয়ে নিয়েছিলেন।
যাই হোক, এই বিতর্ক অত্যন্ত জটিল। এবং এর ডালপালা বিস্তৃত। স্ত্রী শ্বেতা এখন সঞ্জীবের জামিনের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। মহেশ চিত্রোদার মামলা প্রত্যাহারের আবেদনে প্রথমে ভাটের মুক্তির একটা আশা করা যাচ্ছিল। কিন্তু এখন তা বিশ বাঁও জলে।
Read story in English