Advertisment

Explained: জাতভিত্তিক ভোটার ব্যবস্থার বিরোধিতা! কেন মহাত্মা গান্ধী এর চূড়ান্ত বিরোধী ছিলেন?

পুনের ইয়েরওয়াদা সেন্ট্রাল জেলে এজন্য অনশনও করেছিলেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Mahatma Gandhi and B R Ambedkar

১৯৩১ সালের গোলটেবিল বৈঠকে মহাত্মা গান্ধী এবং বিআর আম্বেদকর। (ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স)

উপবাস ছিল মহাত্মা গান্ধীর অন্যতম শক্তিশালী অস্ত্র। তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার ওপর চাপ প্রয়োগের পাশাপাশি বৃটিশদেরকে তাঁর দাবি মানানোর জন্য তিনি তপস্যা হিসেবে উপবাসকে গ্রহণ করেছিলেন। চলতি সপ্তাহের মত এমনই এক সপ্তাহে, ১৯৩২-এর সেপ্টেম্বরে, পুনের ইয়েরওয়াদা সেন্ট্রাল জেলে, গান্ধী হরিজনদের পৃথক নির্বাচনী স্বীকৃতি প্রদানের বিরুদ্ধে আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন। এটি এমন একটি বিষয় ছিল, যার বিরুদ্ধে গান্ধী বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। যা তাঁকে দেশের নিম্নবর্ণের সবচেয়ে বড় নেতা, বিআর আম্বেদকরের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে ফেলেছিল। যা পরিচিত 'গান্ধী-আম্বেদকর বিতর্ক' নামে। এই বিতর্ক জাত সম্পর্কে কোনও ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গিকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। আর, আজও গান্ধীর সেই চূড়ান্ত 'বিজয়' ভারতের সংরক্ষণ ব্যবস্থায় বিশেষ গুরুত্ব রাখে।

Advertisment

জাত সম্পর্কে গান্ধীর দৃষ্টিভঙ্গি

তাঁর প্রাথমিক দিনগুলোতে, জাত সম্পর্কে গান্ধীর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অত্যন্ত গোঁড়া। তিনি আন্তঃভোজন এবং আন্তঃবিবাহের ওপর নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেছিলেন। হিন্দুধর্মের জন্য জাতপাতকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছিলেন। যাইহোক, তিনি ভারতের জাতীয় আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠলে, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বিকশিত হয়। তা আংশিকভাবে হলেও নবজাতক দলিত আন্দোলনের কারণে। গান্ধী ঐক্যের সুসমাচার প্রচার করতে শুরু করেন এবং অস্পৃশ্যতা পরিহার করেন। অস্পৃশ্যদের হরিজন (ঈশ্বরের সন্তান) বলে উল্লেখ করেন। এই ব্যাপারে ১৯৩৬ সালে গান্ধী লিখেছিলেন, 'আমি জানি এই অস্পৃশ্যতা আধ্যাত্মিক এবং জাতীয় উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।' যাইহোক, গান্ধীর অস্পৃশ্যতার সমালোচনা অবশ্য তাঁকে জাতপাতের প্রতিষ্ঠানকে প্রত্যাখ্যান করার দিকে পরিচালিত করেনি। যেটা আম্বেদকরকে করেছে। সেই কারণে আম্বেদকর বলেছিলেন, গান্ধীকে জাতপাতের পিছনের ভিত্তি, অর্থাৎ হিন্দু ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।

জাত সম্পর্কে আম্বেদকরের মতামত

আম্বেদকরের অবস্থান গান্ধী এবং তাঁর মত অন্যান্য উচ্চবর্ণের সংস্কারকদের চেয়ে অনেক বেশি উগ্র ছিল। আম্বেদকর এই সংস্কারবাদকে সহস্রাব্দের বৈষম্য দূর করার জন্য অপর্যাপ্ত বলে দেখেছেন। তাঁর মতে, বর্ণপ্রথার বিরুদ্ধে যে কোনও বিদ্রোহ তখনই সম্ভব হবে, যখন নির্যাতিতরা তাঁদের অবস্থা এবং নিপীড়নকে ঐশ্বরিকভাবে নির্ধারিত বলে প্রত্যাখ্যান করবে। আম্বেদকরের মতে, জাতিভেদ প্রথার অবসান ঘটানো তখনই সম্ভব হবে যদি শাস্ত্রের (পবিত্র ধর্মগ্রন্থ) ঐশ্বরিক কর্তৃত্বকে প্রথমে প্রত্যাখ্যান করা হয়। এই ভাবে, তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচি নিম্নবর্ণের রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের ওপর জোর দিয়েছিল। আম্বেদকর লিখেছেন, 'আপনার মত করে কেউ আপনার অভিযোগ দূর করতে পারবে না এবং আপনি যদি আপনার হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা না-পান, তবে আপনি সেগুলো দূর করতে পারবেন না।' তিনি নিম্নবর্ণের ক্ষমতায়নের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপের রূপ হিসেবে পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী তৈরির পরামর্শ দিয়েছিলেন।

Mahatma Gandhi Caste Discrimination Ambedkar
Advertisment